Author Topic: ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কী করবেন  (Read 1690 times)

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

Dr. Sushanta Kumar Ghose

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 363
  • Gender: Male
    • View Profile
আধুনিক শহুরে জীবনে ডায়াবেটিস একটি প্রচলিত সমস্যা। জীবনযাপনের অনিয়মের ফলে এই রোগের প্রকোপ এখন বাড়ছে।

প্রশ্ন : একজন মানুষকে কখন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বলা হয় এবং কারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার জন্য ঝুঁকিপ্রবণ?

উত্তর : ডায়াবেটিস একটি বিপাকজনিত সমস্যা। এটি শর্করাজাতীয় খাবারের বিপাকীয় সমস্যা। তবে এটি কেবল শর্করাজাতীয় খাবারেরই নয়, এর সঙ্গে চর্বি ও আমিষজাতীয় খাবারের বিপাকীয় সমস্যা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন) বলেছে, সারা বিশ্বে ডায়াবেটিস এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে। এটি আমাদের আধুনিক শহুরে জীবনে প্রতিনিয়ত বেড়ে যাচ্ছে। যেসব দেশ উন্নত হচ্ছে, সেখানে ডায়াবেটিসের প্রকোপ বাড়ছে। এর কারণ হিসেবে বলা যায়, আমাদের কায়িক শ্রম কমে যাচ্ছে, মুটিয়ে যাওয়ার সমস্যা এখন বেশি, খেলাধুলার জায়গা কমে যাচ্ছে; এ জন্য ডায়াবেটিসের প্রকোপ বেশি। শুধু আমাদের জীবনযাপনের অনিয়মের ফলে এই রোগ বেশি হচ্ছে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এর প্রকোপ বেশি।



প্রশ্ন : একজন মানুষকে কখন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বলা হয়?

উত্তর : ডায়াবেটিসকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একধরনের ডায়াবেটিস আছে, যেখানে অগ্ন্যাশয় থেকে কোনো ইনসুলিন বের হয় না। এর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে বেশি প্রস্রাব করা, গলা শুকিয়ে আসা, ওজন কমে যাওয়া। দ্বিতীয় ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তাঁদের লক্ষণের ধরন প্রথম ডায়াবেটিসের মতো হয় না। তাঁরা হয়তো কোনো কারণে স্বাস্থ্য-পরীক্ষা করতে এসেছেন, তখন দেখা গেল তাঁর ডায়াবেটিস হয়েছে। পরিবারের মধ্যে কারো ডায়াবেটিস হলে, বিশেষ করে মা-বাবার থাকলে সন্তানের এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। উচ্চতা অনুযায়ী আদর্শ ওজন না থাকলে ডায়াবেটিস হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ বা কোলেস্টেরল থাকলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়া আশঙ্কা থাকে। যাদের বয়স পঁয়ত্রিশের বেশি এবং যাঁরা একটু মুটিয়ে গেছেন, তাঁদের ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা উচিত।

প্রশ্ন : ডায়াবেটিসের পরীক্ষা কীভাবে করাতে হয়?

উত্তর : ডায়াবেটিস আছে কি না, সেটি নিশ্চিত করতে অন্তত তিনটি স্টেজে পরীক্ষা করতে হয়। খালি পেটে রক্তে শর্করা পরীক্ষা করতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে এই পরীক্ষা করতে হবে এবং তার আগে অন্তত আট ঘণ্টা খালি পেটে থাকতে হবে। পরীক্ষায় যদি শর্করার পরিমাণ ৭ অথবা ৭ মাত্রার ওপরে থাকে, তখন বলা যেতে পারে যে সে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। খাবারের দুই ঘণ্টা পর পরীক্ষা করতে হবে। যদি ১১ দশমিক ১ অথবা এর বেশি থাকে, তখন তাকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বলা যেতে পারে। তবে এ দুই পরীক্ষায় ফলাফল স্বাভাবিক থাকলেও রোগী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নন, সেটি বলা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে আরেকটি পরীক্ষা রয়েছে, যেখানে ১২০ দিনের রক্তে শর্করার গড় পরীক্ষা করা হয়। এই পরীক্ষার নাম এইচবিএওয়ানসি। এখানে রক্তের লোহিত কণিকা থেকে পরীক্ষা করা হয়। এটা যদি ৬ দশমিক ৫ বা এর বেশি থাকে, তখন রোগীকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বলতে হবে।



প্রশ্ন : এই রোগে কী ধরনের চিকিৎসা ছিল এবং এখন কী ধরনের ওষুধ সংযোজিত হয়েছে?

উত্তর : এর চিকিৎসাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। একটি হচ্ছে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, দুই ব্যায়াম এবং তিন ওষুধ। যাঁরা প্রাথমিক পর্যায়ে আছেন, তাঁদের খাদ্য নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যায়াম করলে এই রোগ ভালো হয়ে যেতে পারে। আর ব্যায়ামের মধ্যে রয়েছে দ্রুত হাঁটা। অন্তত ১৫০ মিনিট প্রতি সপ্তাহে হাঁটতে হবে। সেটি ২০ মিনিট করে প্রতিদিন বা ৩০ মিনিট করে পাঁচ দিন হতে পারে। তবে একদিনের বেশি বন্ধ করা যাবে না।

প্রশ্ন : আধুনিক কী চিকিৎসা সংযোজিত হয়েছে?

উত্তর : মেট্রোমিন-জাতীয় ওষুধ এখন বেশ কার্যকর। এ ধরনের ওষুধ ইনসুলিন রেজিসটেন্স পূরণ (কাভার) করে এবং লিভার থেকে গ্লুকোজ তৈরি হওয়া বন্ধ করে। এই ওষুধগুলো পথিকৃৎ বলে বিবেচিত হয়। তা ছাড়া আরো কিছু ওষুধ আছে, যাকে বলা হয় ইনক্রেটিনস। এই জাতীয়  ওষুধ  ইনক্রেটিন মায়ামিন নামে বাজারে আসছে। এগুলোও বেশ কার্যকরী ওষুধ। তা ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ইনসুলিন এখন বাজারে আছে। তবে অনেকের ধারণা, ইনসুলিন নেওয়া শুরু করলে অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে, এটি ঠিক নয়। কোন রোগীর জন্য কোন ইনসুলিন দিতে হবে, সেটি চিকিৎসক ঠিক করবেন।

প্রশ্ন : যাঁদের বেশি ইনজেকশন নিতে হয়, তাঁদের জন্য কি কোনো বিকল্প রয়েছে?

উত্তর : যাঁদের মাল্টিপল ডোজ অব ইনসুলিন নিতে হয়, তাঁদের জন্য রয়েছে ইনসুলিন পাম। শরীরে বেল্টের সঙ্গে লাগিয়ে রাখবে। এটি আপনা-আপনি শরীরের ভেতরে ঢুকে যাবে। এটি বেশ সুবিধাজনক।

Source: https://www.ntvbd.com/health