Author Topic: কাটাছেঁড়ার ভয় এড়াতে পাইলসের যে চিকিৎসা পদ্ধতি (অধ্যাপক ডা. এসএমএ এরফান)  (Read 1665 times)

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

Rasel Ali

  • Administrator
  • Full Member
  • *****
  • Posts: 242
  • Gender: Male
  • Trust Your Strength It Will take U Toward Success
    • View Profile
    • Daffodil Hospital

পাইলসের চিকিৎসা নিয়ে বিভ্রান্তির শেষ নেই। কবিরাজি, হোমিওপ্যাথি, তাবিজ-কবজ থেকে শুরু করে আধুনিক অপারেশন সবই চালু আছে বাংলাদেশে। তবে এ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কথাও প্রচলিত আছে। সে সব কথায় মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে আর অপচিকিৎসার স্বীকার হচ্ছে।
প্রথমেই জেনে নিই পাইলস কি?
পাইলস যাকে মেডিকেল ভাষায় হেমরয়েডস বলা হয়। পায়ুপথের রক্তনালীর একটি রোগ। শরীরের অন্যান্য স্থানের মতো পায়ুপথের অসংখ্য রক্তনালী আছে। সে সব রক্তনালী কখনো কখনো ফুলে আঙ্গুরের থোকার মতো হয়। ফলে মল ত্যাগের সময় সেখান থেকে রক্তপাত হয়, এটিই পাইলস।
 পাইলস এর লক্ষণ কি?
আমরা পাইলসকে বিভিন্ন  ডিগ্রি বা ধাপে ভাগ করি। প্রথম ধাপে শুধুমাত্র রক্ত যাবে। এই রক্তপাত টয়লেটের সঙ্গে বা পরে হয়
তাজা রক্ত কখনো ফিনকি দিয়ে আবার ফোঁটায় ফোঁটায়, কখনো মলের সঙ্গে মিশেও পড়ে। দ্বিতীয় ধাপে একটু ফুলা বা মাংসপিণ্ড টয়লেটের চাপের সময় ভেতর থেকে বেরিয়ে আসবে। চাপ চলে গেলে আবার ভেতরে চলে যাবে। তৃতীয় ধাপে মাংসপিণ্ডটি সহজে যাবে না। রোগীকে হাতে চাপ দিয়ে বা নানা প্রক্রিয়ায় ভেতরে ঢুকিয়ে দিতে হবে। আর চতুর্থ ধাপে ভেতরে যাবে না। বাইরেই থাকবে। দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ধাপে রক্ত  যেতেও পারে, নাও যেতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে পাইলস রোগে পায়ুপথে ব্যথা হবে না। বিশেষ করে প্রথম দিকে। যদি ব্যথা হয় তাহলে বুঝতে হবে অন্য রোগ আছে। তৃতীয় ধাপ ও চতুর্থ ধাপে পায়ুপথে অস্বস্তি হতে পারে। এছাড়া পায়ুপথে চুলকানি, ভেজা ভেজা ভাব থাকা, টয়লেট ক্লিয়ার না হওয়া ইত্যাদি উপসর্গ থাকতে পারে।
 চিকিৎসা কি?
প্রাথমিক পর্যায়ে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, কোষ্ঠ্যকাঠিন্য না হতে দেয়া, অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করে মলত্যাগ না করা, সঙ্গে কিছু চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ ক্ষেতে হয়। এতে রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এর পরও রক্ত গেলে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ব্যান্ডি লাইগেশন ও সেক্লরো থেরাপি নামক দু’টি অপারেশন বিহীন চিকিৎসা করা  যেতে পারে। কিন্তু এই দু’টি চিকিৎসার সমস্যা হচ্ছে রোগ আবার হওয়া। দেখা গেছে ৫ বছরের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশেরই  রোগ আবার হয়। ফলে আমাদের দেশে এই পদ্ধতিগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি।
পাইলসের চিকিৎসা পদ্ধতি হচ্ছে অপারেশন।  প্রচলিত অপারেশন হচ্ছে হেমরয়েডকস্টমি। অর্থাৎ পাইলসগুলো কেটে ফেলে দেয়া। এই পদ্ধতিতে পায়ুপথে বড় ক্ষত তৈরি হয়। ফলে ব্যথা হয়, রস পড়ে ইত্যাদি। রোগীকে ড্রেসিং করা এবং ওষুধপত্র খেতে হয়। অপারেশনটি বেশ কার্যকর হলেও ব্যথা ইত্যাদির কারণে জনপ্রিয় নয়।
এরপর চিকিৎসা হচ্ছে লংগো অপারেশন। এই পদ্ধতিতে একটি মেশিনের সাহায্যে পাইলসের উপরিভাগ ধরে পুরো রেকটামের একটি অংশ নিয়ে আসা হয়। ফলে পাইলটি ভালো হয়ে যায়। এই পদ্ধতিতে ব্যথা-ক্ষত ইত্যাদি থাকলেও কতগুলো সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি দেখা যায়, যা আমি বহু অপারেশন করে দেখেছি। ফলে আমরা অপারেশন করছি সম্পূর্ণ ভিন্ন পদ্ধতিতে। এটি হচ্ছে লেজার পদ্ধতি। অপারেশনটির নাম লেজার হেমারয়েড-পেক্সি। যদিও বলা হচ্ছে- এটি অপারেশন আসলে একটি প্রসিডিওর। অর্থাৎ কোনো কাটাছেঁড়া করা হয় না। পাইলসের মধ্যে লেজার প্রয়োগ করে পাইলসটিকে অবমুক্ত করা হয়। এখানে কোনো কাটাছেঁড়া, ক্ষত সেলাই থাকবে না। অপারেশনের পর রোগী পায়ুপথে পরীক্ষা করে ক্ষত-সেলাই কিছু পায় না। আমরা অপারেশনের ১২ ঘণ্টা পরই রোগীকে বাসায় পাঠিয়ে দিই। তখন থেকেই স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা, খাওয়া-দাওয়া করতে পারে। তিন-চারদিনের মধ্যে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। ওখানে রস পড়া, ড্রেসিং করা, ক্ষত ইত্যাদি কিছুই নেই।
এই পদ্ধতিতে সাফল্যের হার কেমন?
আমরা এই পদ্ধতিতে ৯৯ পারসেন্ট রোগীর নিরাময় সফলতার সঙ্গে করছি।

চেম্বার: পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিমিটেড (শ্যামলী শাখা), মিরপুর রোড, মোহাম্মদপুর (কিডনি হাসপাতালের বিপরীতে)।
হেল্পলাইন: ০১৮৬৫৫৫৫৫১১, ০১৮৬৫৫৫৫৫০০,
ফেসবুক: Prof.Dr.SMA Erfan
লেখক: পথিকৃৎ কলোরেক্টাল ও হেপাটোবিলিয়ারি সার্জন, বাংলাদেশ।
BR
Rasel Ali