ফ্যাটি লিভার ডিজিজ কি?ফ্যাটি লিভার রোগটি যকৃতের কোষে চর্বি জমা করতে থাকে। তবে হ্যাঁ, একেবারে ফ্যাটবিহীন লিভার কখনই প্রপার ফাংশন করতে পারে না। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে লিভারে চর্বি থাকা স্বাভাবিক, তবে তা ৫ থেকে ১০ শতাংশের বেশী হলে এটি ফ্যাটি লিভারের রোগ বলে বিবেচিত হতে পারে। সারাদিনে আপনি যতটুকু ক্যালরি ইনটেক করছেন তার থেকে শরীরের নিজের যতটুকু প্রয়োজন ততোটুকু তো সে নিচ্ছে তাহলে আর সমস্যা হওয়ার তো কথা না। কিন্তু যখন বেশী পরিমাণে খাওয়া হয় এবং সেটা নিয়ম মাফিক নয় তখনই লিভার বাড়তি ক্যালরি গুলো জমাতে শুরু করে। এভাবেই আসলে লিভার দিন দিন ফ্যাটি হতে থাকে।
ফ্যাটি লিভার রোগের ধরণফ্যাটি লিভার ডিজিজ দু’ধরনের –
১) অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ
২) নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ।
অ্যালকোহল জনিত ফ্যাটি লিভারের প্রধান কারণ অত্যধিক মদ্যপান। অন্যদিকে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ মূলত খাদ্য এবং লাইফ স্টাইলের কারণে হয়ে থাকে। তবে হ্যা এটা বংশানুক্রমিকভাবেও হতে পারে।
মূলত ফ্যাটি লিভার গ্রেড এ (নন অ্যালকোহলিক) লাইফ স্টাইল ও খাদ্যাভ্যাসে একটু পরিবর্তন আনলেই কোন রকম মেডিসিন ছাড়াই আসলে এটা কিওর করা সম্ভব। তবে সচেতন না হলে এই ফ্যাটি লিভার ডিজিজ লিভার সিরোসিস-এর মতো মারাত্মক রোগের আশংকা বাড়িয়ে দেয়।
ফ্যাটি লিভার ডিজিজ ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসমনে রাখবেন রোগবালাইকে দূরে রাখতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং লাইফ স্টাইলের কোন বিকল্প নেই। আপনার প্রতিদিনকার ডায়েট চার্ট এ অবশ্যই কাঁচা শাক সবজি রাখবেন। যেহেতু ভেজিটেবলস এ সুগার থাকে না তাই প্রতিদিন যত পারেন তত ভেজিটেবল যেমন গাজর, শসা, টমেটো, বেবি স্পিনাচ লেটুস পাতা, এসব দিয়ে সালাদ বানিয়ে খেতে পারেন।
ফ্যাটি লিভার সমস্যার সাথে সাথে যদি ওজন কমাতে চান তবে প্রতিদিন অন্তত পক্ষে ২ টি করে যেকোনো ফল খাওয়ার চেস্টা করুন। সেক্ষেত্রে আপেল এবং নাসপাতি সবচেয়ে সেফেস্ট অপশন।
রোগমুক্তভাবে বেঁচে থাকতে প্রোটিনের বিকল্প নেই। তাই খাবার তালিকায় অবশ্যই এই খাদ্যগুলো রাখার ট্রাই করবেন। সামুদ্রিক মাছ (আমাদের দেশে যেসব সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়)। ডিম (মুরগি, কোয়েল), ডাল, বাদাম ইত্যাদি।
সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে চাইলে কিছু খাবার পরিহার করতে হবে। চকলেট (তবে ডার্ক চকলেট খেতে পারবেন), ভাজাপোড়া, জাংক ফুড(বার্গার, পিৎজা) ইত্যাদি। বিস্কিট, কুকিজ, হোয়াইট ব্রেড পেস্ট্রি, ব্যাগেল, ডোনাট ইত্যাদির মতো লার্জ অ্যামাউন্ট অব সুগার, আর্টিফিশিয়াল স্যুইটনার এবং ফ্লেভার যেসব খাবারে রয়েছে সেসব খাবার পরিহার করতে হবে।
এবার কিছু হোম রেমিডি বা রেসিপি বলে দিচ্ছি। এই রেসিপির মধ্যে আপনার টেস্ট বাডের সাথে যায় তেমন রেসিপি চুজ করবেন। এগুলো একেবারেই প্রাকৃতিক উপায়, নিয়ম করে ফলো করলে কোন রকম সাইড ইফেক্ট ছাড়াই লিভারে জমে থাকা ফ্যাট কমিয়ে আনা সম্ভব। তবে হ্যা, এ সবই নন অ্যালকহলিক ফ্যাটি লিভারকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসার উপায়। যারা অ্যালকহলিক ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় ভুগছেন তাদের অবশ্যই ডাক্তারের শরনাপন্ন হতে হবে।
ফ্যাটি লিভার ডিজিজ- এ প্রাকৃতিক উপায়ে রিমিডি১) প্রাকৃতিক উপায় এক
অ্যাপল সাইডার ভিনেগার ফ্যাটি লিভার ডিজিজ-এর ওয়ান অব দি বেস্ট রেমিডি। এই অ্যাপল সাইডার ভিনেগার লিভারের পাশে জমে থাকা চর্বি হ্রাস করে ওজন কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। যে রেসিপিটি দিচ্ছি তা প্রতিদিন দু’বার খাবারের আগে পান করতে হবে।
• এক গ্লাস গরম পানিতে এক টেবিল চামচ অ্যাপল সাইডার ভিনেগার মিক্স করে নিন।
• চাইলে সামান্য মধু এতে অ্যাড করে নিতে পারেন।
• দু’বেলা খাওয়ার আগে এই এক গ্লাস অ্যাপল সাইডার ভিনেগার মিক্স খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
• লক্ষণীয় পরিবর্তনের জন্য কিছু মাস অবশ্যই এই রেসিপি ফলো করতে হবে।
২) প্রাকৃতিক উপায় দুই
খুব সাধারণ এবং বেশ পরিচিত রেসিপিটি এটি। আজকাল ফিগার সচেতন সবাই এই পদ্ধতিটি ফলো করছেন। ওয়ার্ম হানি লেমন জুস! সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক গ্লাস লেবু মধু মিক্স করে খেয়ে নেয়ার টিপস নতুন কিছু নয়। লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। এই অ্যান্টি অক্সিডেন্টের সাহায্যে লিভার এক ধরনের এনজাইম তৈরি করে যা লিভার টক্সিনকে নিউট্রালাইজ করে থাকে। এভাবেই আসলে লেবু লিভারের চর্বি ঝরাতে সাহায্য করে।
• এক গ্লাস পানিতে অর্ধেকটা লেবু চিপে মিশিয়ে নিন।
• দিনে ২ থেকে ৩ বার এই জুসটি পান করুন।
• অন্যদিকে একটি জারে পানি নিয়ে তাতে কয়েক টুকরা লেবু ফেলে দিন। সারা দিন অল্প অল্প করে সেই পানি পান করুন।
হঠাৎ করে পুরোনো অভ্যাস বদলে নতুন অভ্যাস গড়ে তোলা কঠিন মনে হতে পারে কিন্তু আপনি যখন এমন একটি রোগে আক্রান্ত তখন আবারও সুস্থ অবস্থায় ফিরে যেতে এতটুকু কষ্ট তো করতেই হবে। সারাদিন বসে শুয়ে মস্তিষ্ক খাটিয়ে কাজ নয়, একটু একটিভ থাকার চেষ্টা করুন। যখন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন তখন সেই সব কষ্টগুলো অর্থবহ বলে মনে হবে। ফ্যাটি লিভার সমস্যা থেকে সবাই সেইফ থাকুন, সুস্থ থাকুন।