Author Topic: শরীরের হাড় বেড়ে যাওয়া থেকে মুক্তি  (Read 1660 times)

0 Members and 2 Guests are viewing this topic.

Dr. Sushanta Kumar Ghose

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 363
  • Gender: Male
    • View Profile


শরীরের হাড় বেড়ে যাওয়া

আমাদের মেরুদণ্ড বা ব্যাকবোনে অনেকের হাড় বেড়ে যাওয়া বা হাড়ের বৃদ্ধির সমস্যায় ভুগে থাকেন। যা হাড়ের শেষভাগে দেখা যায়, বিশেষত সন্ধিস্থলে যেখানে দুটি হাড় পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়। এর ফলে সুষ্মাকাণ্ড বা মেরুদণ্ডের সন্ধিস্থলে বাড়তি চাপ পড়ে। হাড় বেড়ে যাওয়া ঘটে যেখানে প্রদাহ বা আঘাত থাকে, তরুণাস্থি বা রগের কাছাকাছি। হাড় বেড়ে যাওয়া সাধারণত যেখানে হয়-

* পায়ের গোড়ালির হাড়ের নিচের তলে-যাকে গোড়ালির হাড় বৃদ্ধি বলে। এটা যন্ত্রণাদায়ক।

* হাত-হাড় বৃদ্ধি হাতের আঙুলের সন্ধিতে হয়, যাতে আঙুল নাড়ানো সম্ভব হয় না।

* কাঁধ-হাড় বৃদ্ধি রগে ব্যথার সৃষ্টি করে (রগের ব্যথা) যেহেতু কাঁধের চক্রাকার স্থানে রগ আর পেশির মধ্যে ঘর্ষণ হয়। ফলে কাঁধ সঞ্চালনে বাধা দেয়।

* সুষ্মাকাণ্ড বা স্পাইনাল কর্ড-সুষ্মাকাণ্ড সরু হয়ে যাওয়া, যাকে স্পাইনাল স্টেনোসিস বলে, যা হাড় বৃদ্ধির জন্যই ঘটে। এটি যন্ত্রণার কারণ হয়, অসাড়তাও হয়। স্নায়ুগুলোতে সংঘর্ষের কারণে পায়ে দুর্বলতা দেখা যায়।

* নিতম্ব ও হাঁটু-হাড়ের বৃদ্ধির ফলে হাঁটার গতি বাধাপ্রাপ্ত হয়।

লক্ষণ ও উপসর্গ

কখনো কখনো, হাড় বৃদ্ধি পাওয়ার কোনো উপসর্গ থাকে না। হাড় বৃদ্ধি যন্ত্রণার কারণ ঘটায়, অসাড়তা এবং আশপাশের পেশিতে, রগে, স্নায়ুতে বা ত্বকে অস্বস্তির জন্য আক্রান্ত অংশে সংবেদনশীলতা দেখা যায়। গোড়ালিতে হাড় বৃদ্ধি হলে হাঁটতে অসুবিধা হয়, সঙ্গে সংবেদনশীলতা এবং ফোলাভাব দেখা যায়। কখনো কখনো, যদি হাড় বৃদ্ধি গোড়ালির একদম নিচে হয়ে থাকে তখন পায়ের নিচে ব্যথার সৃষ্টি হয়। সুষ্মাকাণ্ডে যদি হাড় বৃদ্ধি পায় স্নায়ুগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়, যাতে অসাড়তা দেখা যায়, এই স্নায়ু শরীরের যে অংশে বাহিত হয় সেখানে ব্যথার সৃষ্টি হয়। যখন হাড় বৃদ্ধি থেকে কোনো ব্যথা সৃষ্টি হয় না বা কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না, তখন এক্স-রের মাধ্যমে তা ধরা পড়ে।

প্রধান কারণ

* হাড় বৃদ্ধি সাধারণত ব্যথাভাব ও চাপভাবের সৃষ্টি করে।

* অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা হাড়ের বাত একটি পুনরুৎপাদনকারী হাড়ের সন্ধির রোগ, যা হাড় বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। বয়স্ক মানুষদের মধ্যে এটি খুবই চোখে পড়ে। যখন আমাদের বয়স হয়ে যায়, হাড় ও জয়েন্টের ব্যবহারের ফলে তরুণাস্থির ক্ষয় হয়, এতে হাড়ের ভর কমে যায়। অবস্থা সামাল দিতে শরীর হাড় বৃদ্ধি ঘটায়।

রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

* পরীক্ষা করে দেখার সময়, হাড়ের সন্ধির আশপাশে হাত দিয়ে একজন চিকিৎসক ব্যথার জায়গাটি খোঁজার চেষ্টা করেন। এই জায়গাটির এক্স-রে করাতে বলতে পারেন। অন্যান্য ইমেজিং টেস্ট, যেমন এমআরআই স্ক্যান, সিটিস্ক্যান, মাইলোগ্রাম করাতেও বলতে পারেন।

* রোগ নির্ণয় হয়ে গেলে, ব্যথা ও অস্বস্তিভাব কমানোর জন্য কিছু ওষুধ দেওয়া হয়। ওই স্থানটিতে ঠান্ডা সেঁক নিলে তাও অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে।

* গোড়ালির হাড় বৃদ্ধির জন্য বিশেষ জুতা ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। লম্বা সময় ধরে ব্যথা থাকলে সার্জারির প্রয়োজন পড়ে।

* বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়, অতিরিক্ত ব্যবহার বা চাপ থেকে ব্যথা বেড়ে যায় তাই বিশ্রাম নেয়া জরুরী।

* কাজকর্মের কিছু পরিবর্তনও দরকার পড়ে, কাজ করার ধরন বা পদ্ধতি পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়।

* ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা খুবই গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে, ব্যথা ও ফাংশন ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে। 

* যদি হাড়ের বৃদ্ধির জন্য স্নায়ুতে চাপ পড়ে তবে প্রচণ্ড যন্ত্রণার কারণ হতে পারে, তখন সার্জারির পরামর্শ দেওয়া হয়।


লেখক: সুশান্ত কুমার ঘোষ, ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ, ডিআইইউ মেডিকেল সেন্টার