ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি কী?এটি হচ্ছে স্নায়ুর উপর ডায়াবেটিসের প্রতিক্রিয়াজনিত প্রভাব। অনেক সময় অনিয়ন্ত্রিত অথবা অনিয়মিতভাবে নিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে ১০-১৫ বছর সময়ের মধ্যে এই রোগ হয়। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাঁচ বছরের মধ্যেই হতে পারে। প্রকৃত কারণ খুব ভালোভাবে জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, রক্তে গ্লুকোজের আধিক্যই এর কারণ।
উপসর্গগুলো জেনে নিনহাত-পা ঝিনঝিন করা
পায়ের শক্তি কমে যাওয়া
মাংসপেশি শুকিয়ে যাওয়া
হাত-পায়ের তালুতে জ্বালাপোড়া অনুভব করা
হাত ও পায়ের শেষভাগে অনুভূতি কমে যাওয়া, যেমন— অনেকের পা কেটে রক্ত বের হলেও বলতে পারেন না
এই রোগের চিকিৎসা কী?কঠোরভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা
নিয়মিত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করানো
নিউরোপ্যাথির উপসর্গ থাকলে চিকিৎসা করা
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে হাত ও পায়ের মাংসপেশির কার্যক্ষমতা ঠিক রাখা
রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণে রাখা
নিয়মিত ব্যায়াম করা
ব্যায়ামের উপকারিতাব্যায়ামে শক্তি খরচ হয়, ফলে শরীরের ওজন কম থাকে ও শরীরে চর্বি কমে। ব্যায়ামের মাধ্যমে অগ্ন্যাশয় বা পেনক্রিয়াসের বেটা সেল থেকে ইনসুলিন তৈরি বৃদ্ধি পায়। ব্যায়াম ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বাড়ায়, ফলে শরীরে অল্প যা ইনসুলিন তৈরি হয় তাতেই রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে। বাড়তি ওষুধের দরকার নাও পড়তে পারে। ব্যায়ামের ফলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। এটি রক্তের ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ায় এবং খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমায়। ব্যায়াম উচ্চ রক্তচাপ কমায়। দুশ্চিন্তা দূর করে মনকে প্রফুল্ল রাখে। হাড় ও হৃৎপিণ্ডকে শক্তিশালী করে। জয়েন্টগুলোকে সচল রাখে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি রোগীদের করণীয়১। ব্লাড সুগারকে কন্ট্রোলে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, হাই ব্লাড সুগার নার্ভকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
২। খাবারের তালিকায় সবচেয়ে বেশি রাখতে হবে ফলমূল, শাকসবজি, লো-ফ্যাট মিল্ক, শষ্য দানা। এরপরে থাকবে মাছ, বাদাম, অল্প পরিমাণ মাংস। ভাত, চিড়া-মুড়ি এসব খাবার থাকবে সবচেয়ে কম।
৩। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
৪। স্ট্রেস কমিয়ে রিল্যাক্স থাকতে হবে। ব্রেথিং এক্সারসাইজ, মেডিটেশন, ইয়োগা রিল্যাক্স থাকাতে সাহায্য করে।
৫। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট এক্সারসাইজ করতে হবে।
৬। প্রতিদিন কিছু সময় রোদে থাকতে হবে। এতে করে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণ হবে। ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হলে দেহে ব্যথার পরিমাণ বেড়ে যায়।
৭। ব্যথা কমাতে উষ্ণ পানিতে পা ডুবিয়ে রাখতে পারেন। এতে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে, ব্যথা কমবে।
ব্যথা কমাতে উষ্ণ পানিতে পা ডুবিয়ে রাখা রোগীর পায়ের যত্নপায়ে যাতে অতিরিক্ত গরম বা ঠাণ্ডা কিছু না লাগে, পায়ে যাতে কোনো আঘাত না পাওয়া যায়, এ ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতে হবে। পায়ের জুতা নির্বাচনে সব ধরনের সাবধানতা মেনে চলতে হবে, যাতে জুতা দ্বারা কোনো ক্ষত সৃষ্টি না হয়।
এই ধরনের রোগীদের ধূমপান করা নিষেধ। কারণ ধূমপান রক্ত চলাচল কমিয়ে দেয়। এতে করে পায়ে ক্ষত সৃষ্টি হওয়া এবং পচন ধরার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়। পায়ে একবার পচন ধরলে অনেক সময় পা কেটেও ফেলতে হয়। ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি নিয়ে অবহেলা করা একদমই উচিত নয়। আপনার বাসায় বয়স্ক সদস্য থাকলে তাকেও এই ব্যাপারে সচেতন করুন। এই আজ এ পর্যন্তই। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
লেখক: সুশান্ত কুমার ঘোষ, ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ, ডিআইইউ মেডিকেল সেন্টার