Author Topic: স্ট্রোক-পরবর্তী পুনর্বাসন চিকিৎসা  (Read 1644 times)

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

Dr. Sushanta Kumar Ghose

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 360
  • Gender: Male
    • View Profile
বিশ্বজুড়ে স্ট্রোকজনিত মৃত্যু ও স্ট্রোকের কারণে স্নায়ুজনিত অক্ষমতা বাড়ছে। মস্তিষ্কে সাধারণত দুধরনের স্ট্রোক হয়। এর একটির নাম ইস্কেমিক স্ট্রোক এবং আরেকটির নাম হেমরেজিক স্ট্রোক। ইস্কেমিক স্ট্রোকে মস্তিষ্কের মধ্যকার ধমনিগুলোয় রক্ত চলাচল কম হয়। হেমরেজিক স্ট্রোকে মস্তিষ্কের মধ্যকার ধমনিগুলো ছিঁড়ে রক্তক্ষরণ হয়। বিভিন্ন কারণে স্ট্রোক হয়ে থাকে। যেমন- অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিস, হাইপারলিপিডেমিয়া বা আথেরস্কেলরসিস, ওবেসিটি বা ওজন বেড়ে যাওয়া, ধূমপান বা তামাকজাত অন্যান্য দ্রব্য গ্রহণ, মানসিক দুশ্চিন্তা, নিদ্রাহীনতা ইত্যাদি।



উপসর্গ : রোগীর এক পাশের হাত বা পা আংশিক অবশ হয়। সঠিকভাবে কথা বলতে পারে না বা মুখ বাঁকা হয়ে যায়। খাবার খেতে কষ্ট হয়। প্রস্রাব ও পায়খানা নিয়ন্ত্রণ থাকে না। অনেক সময় মাথাব্যথা করে, বমি ভাব হয়। ঘুম হয় না। কিছু কিছু রোগী আগের ইতিহাস ভুলে যায় বা পরিচিতদের চিনতে পারে না।



চিকিৎসা : চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় খুবই জরুরি। কারণ ইস্কেমিক স্ট্রোক বা হেমরেজিক স্ট্রোক উভয় চিকিৎসা ভিন্ন ভিন্ন এবং তা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগের ধরন অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। স্ট্রোক পরবর্তী প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীকে আগের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে ওষুধের পাশাপাশি আধুনিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ চিকিৎসার মাধ্যমে স্ট্রোক পরবর্তী প্যারালাইসিস রোগীকে সম্পূর্ণ পুনর্বাসন করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্ট চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে নিয়মিত দিনে ৩ থেকে ৪ বার ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে হবে। এ চিকিৎসা নিতে হবে কমপক্ষে ২ থেকে ৬ মাস। সঠিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হলে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।

স্ট্রোকে ফিজিওথেরাপির ভূমিকা

স্ট্রোক রোগীর পূর্নবাসন চিকিৎসায় একজন ফিজিওথেরাপিস্ট অন্যতম প্রধান ভুমিকা পালন করে ।
স্ট্রোক পূর্নবাসন চিকিৎসা বলতে আমরা কি বুঝি? খুব সহজ করে বললে বলা যায়,একজন চলাচলে অক্ষম বা প্যারালাইসিস স্ট্রোক রোগীকে আবার চলাচলে সক্ষম বা সর্বচ্চো একটিভ করাই হল পূর্নবাসন ।
একজন মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে সাধারন ব্রেইনের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়, এই ক্ষতি কোনভাবেই পুনরায় আর ভাল করা যায় না । তাই শরীরের যেকোন এক পাশের হাত পা , এমন কি মুখও অবশ হয়ে যায় অর্থাৎ প্যারালাইসিস বা চলাচলে অক্ষম হয়ে যায় । তখন ফিজিওথেরাপিস্ট ওই ব্যক্তির ব্রেইনের ক্ষতি গ্রস্ত অংশের কাজ ব্রেইনের ভাল অংশ দিয়ে শিখিয়ে নেয় । এইভাবে রোগী আবার চলাচলে সক্ষম হয় । এটাকে নিউরোপ্লাস্টিসিটি বলে ।
আমরা আরও সুন্দরভাবে বলতে পারি , স্ট্রোকের রোগীর ক্ষেত্রে একজন ফিজিওথেরাপিস্টের ভুমিকা হল - স্ট্রোক আক্রান্ত একজন রোগীকে সর্বচ্চো পরিমান শারিরীক ভাবে স্বচ্ছল এবং তার কাজকর্মে স্বাধীন করা ।
আর এইসব অর্জন করা হয় চারটি ধাপে –
১। কিছু টেকনিক ব্যবহার করে পুনরায় মুভমেন্ট শিখানোর মাধ্যমে,
২।কিছু স্ট্যাটেজি ব্যবহার করে যা তাদের খাপ খাওয়াতে সাহায্য করে ,
৩। পরবর্তী সমস্যা প্রতিরোধ করে এবং
৪। সক্ষমতা ও ফাংশন ধরে রাখার মাধ্যমে ।




তবে স্ট্রোক রোগীকে ভাল করতে হলে, শুধু ট্র্যাডিশনাল ফিজিওথেরাপি দিলেই হবে না । অনেকগুলো ইভিডেন্স বেইজড ট্রিটমেন্ট এপ্রোচ আছে, সবগুলোর উপরই ভাল ধারনা রাখতে হবে ।

ইভিডেন্স বেইজড চিকিৎসা নির্ভর করে তিনটি বিষয়ের উপর ,
১। অবশ্যই চিকিৎসা প্রক্রিয়াটির কার্যকরী অনেকগুলো গবেষনা আছে
২। প্রাক্টিক্যালি চিকিৎসার মানদন্ড করা যায়
৩। এবং রোগীদের কাছে ভাল মূল্য আছে ।


স্ট্রোক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মূলনীতি ঃ
স্ট্রোকের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা কয়েকটি মূলনীতির উপর ভিত্তি করে করতে হয়, যেমন -----
১। আই সি এফ (ICF – Internation classification of functioning , Disability and Health ) গাইডলাইন ফলো করা গুরুত্বপূর্ন। ২০১১ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা আইসিএফকে তুলে ধরে । আইসিএফ মূলত তিনটি বিষয়ের উপর ফোকাস করা হয় Body Function ( Impairment) , Individual (Activity Limitation) & Societal ( Participation Restriction ) । যেমম একজন স্ট্রোক রোগীর ব্রেইনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারনে হাত পা নড়াতে পারে না এটাই হল তার Impairment , এর ফলে সে হাটা চলা করে না এটা হল Activity Limitation অর্থাৎ Disability , হাটাচলা না করার কারনে সামাজিক কাজকর্ম বাধাগ্রস্ত হয় এটা Participation Restriction । এই তিনটি বিষয় মাথা রেখে এসেস করতে হয় এবং সমস্যা বের করতে হয় ।
২।স্ট্রোকের চিকিৎসা অবশ্যই টিম ওয়ার্ক হতে হবে । ফিজিওথেরাপিস্ট ওই টিমের একজন গুরুত্বপূর্ন চিকিৎসক । টিমে নিউরোলজিস্ট, ফিজিওথেরাপিস্ট, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, স্পীচ থেরাপিস্ট এবং নার্স সহ আরও অনেকে থাকতে পারে ।
৩। স্ট্রোক রোগীকে রিহ্যাবিলেটেশন সেন্টার কেন্দ্রীক ফিজিওথেরাপি দেওয়া উচিত । রিহ্যাবিলিটেশন আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে হাসপাতাল গুলোতে সম্ভব না ।
৪। নিউরোপ্লাস্টিসিটি: একজন মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে সাধারন ব্রেইনের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়, এই ক্ষতি কোনভাবেই পুনরায় আর ভাল করা যায় না । তাই শরীরের যেকোন এক পাশের হাত পা , এমন কি মুখও অবশ হয়ে যায় অর্থাৎ প্যারালাইসিস বা চলাচলে অক্ষম হয়ে যায় । তখন ফিজিওথেরাপিস্ট ওই ব্যক্তির ব্রেইনের ক্ষতি গ্রস্ত অংশের কাজ ব্রেইনের ভাল অংশ দিয়ে শিখিয়ে দেয় অর্থাৎ ভাল অংশে তখন নতুন নিউরাল পথ তৈরি হয় । এইভাবে রোগী আবার চলাচলে সক্ষম হয় । এটাকে নিউরোপ্লাস্টিসিটি বলে । এই কাজটা একজন ফিজিওথেরাপিস্ট খুব ভাল্ভাবে স্ট্রোক রোগীদের ক্ষেত্রে সম্পূর্ন করতে হয় ।
৫। ফাংশনাল মুভমেন্ট গুলো পুনরায় শিখানো হয়, যেমন বসা, শোয়া থেকে বসা, দাঁড়ানো , হাঁটা ।
৬। সেলফ ম্যানেজম্যান্ট: রোগী যেন নিজে ম্যানেজ করতে পারে সেটা শেখানো অনেকগুরুত্বপূর্ন একজন ফিজিওথেরাপিস্টে এর কাছে ।


Sushanta Kumar Ghose
Physiotherapist
DIU Medical Center
Daffodil International Univeristy
Daffodil Smart City, Saver, Dhaka.