Author Topic: আচমকা ঘাড়ে ব্যথা কেন হয় এবং পরিত্রাণের উপায় কী?  (Read 1690 times)

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

Dr. Sushanta Kumar Ghose

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 363
  • Gender: Male
    • View Profile
ঘুম থেকে ওঠার পর ঘাড় নাড়াতেই ব্যথা শুরু হলো কিন্তু বেলা বাড়ার সাথে সাথে ব্যথা আর অস্বস্তি বাড়তে লাগলো। ঘাড় এপাশ ওপাশ করলেই পেশীতে টান লাগছে। দিন কয়েক পরেও ঘাড়ের ব্যথা কমছিল না।  এমন অবস্থা কম বেশি আমাদের সবার হয়। কিন্তু কেন হয় এই আচমকা ঘাড়ে ব্যথা? এর থেকে পরিত্রাণের উপায়ই বা কী?

কেন ঘাড়ে ব্যথা হয়?
তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সামনে বসেই দিনের অধিকাংশ সময় কাটে আমাদের। তৎক্ষণাৎ কোনো ক্ষতি হয়তো হচ্ছে না, আর তাই এ বিষয়কে আমরা সেভাবে গুরুত্বও দেই না। অথচ ঘাড় ব্যথার পেছনে এসব কারণ কিন্তু অনেকাংশে দায়ী। এছাড়া আরও নানা কারণে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। চলুন জেনে নেই সেই কারণগুলো সম্পর্কে-

১) ঘাড়ে ব্যথা হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে সঠিকভাবে চেয়ারে না বসা। সাধারণত বসার সময় আমরা মেরুদণ্ড সোজা করে বসি না। এতে অনেক সময় মাথা সামনে ঝুঁকে থাকে। এ থেকেই হতে পারে ঘাড়ের দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা।




২) কম্পিউটার অথবা মোবাইল ব্যবহারের সময় দীর্ঘক্ষণ ঘাড় নিচু করে থাকলে ঘাড় শক্ত হয়ে ব্যথা হতে পারে।

৩) টেলিভিশন দেখার সময় অনেকেই সঠিকভাবে বসেন না। এতে ঘাড়ও অস্বাভাবিক অবস্থানে থাকে। যার কারণেও ব্যথার সৃষ্টি হয়।

৪) অনেকেই অতিরিক্ত উঁচু বালিশ ছাড়া ঘুমাতে পারেন না। ঘুমের সময় বালিশের এমন ভুল ব্যবহার থেকেই শুরু হতে পারে ঘাড়ে ব্যথা।

৫) মহিলারা নিচু হয়ে বটিতে কাটাকুটি করলে ঘাড়ে স্থায়ী ব্যথা হতে পারে।

৬) সামনে ঝুঁকে অনেকক্ষণ ধরে কাজ করলে ঘাড়ের মাংসপেশী শক্ত হয়ে যায়। ফলাফল ঘাড়ে ব্যথা হয়।

৭) প্রচন্ড গরমে বসে থাকলেও ঘাড় ব্যথা বা ঘাড় নাড়াতে সমস্যা হতে পারে।

৮) ঘাড়ে আঘাত পেলে, মাংসপেশী হঠাৎ ছিঁড়ে গেলে বা মচকে গেলেও ব্যথা হয়।

৯) স্পনডাইলোসিস, ঘাড়ের হাড়ের বা ডিস্কের সমস্যা, স্পাইনাল ক্যানেল স্টেনোসিস, সারভাইকাল রিব, নিউরাইটিস, বোন টি-বি এসব রোগও ঘাড় ব্যথার কারণ।

১০) ঘাড়ে আঘাত বা ট্রমা, মাংসপেশীর আংশিক বা সম্পূর্ণ ছিঁড়ে গেলেও ব্যথা হয়।

১১) মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তার কারণেও অনেক সময় ঘাড়ের মাংসপেশীতে চাপ তৈরি হতে পারে, যার কারণে ঘাড় ব্যথা শুরু হতে পারে।


ব্যথা থেকে পরিত্রাণের উপায়
ঘাড়ে ব্যথা হলে সতর্ক হতে হবে শুরু থেকেই। এজন্য ঘাড়ে যেন ব্যথা না হয় অথবা ব্যথা হলে তা দূর করতে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে-

১) ঘাড়ের ব্যথা কমানোর জন্য নিয়মিত ঘাড়ের ব্যায়াম করতে হবে। ঘাড়ের জন্য কিছু ব্যায়াম আছে, যেমন- হেড রোটেশন অর্থাৎ মাথা একবার ডান দিক থেকে বাম দিক এবং আবার বাম দিক থেকে ডান দিকে ঘোরানো। কাজের ফাঁকে ফাঁকে চেষ্টা করুন ব্যায়ামটি করতে।


২) কম্পিউটারে কাজ করার সময় সঠিক ভঙ্গিতে বসতে হবে। পিঠ চেয়ারে লাগিয়ে সোজা হয়ে বসা উচিত। বসার সময় পিঠের পেছনে একটি ছোটো বালিশ বা কুশনের ব্যবহার করতে পারেন। এতে পিঠ সোজা থাকবে। এমনভাবে বসতে হবে যেন কম্পিউটারের পর্দার ওপরের দিকটা চোখের মণির থেকে কম উচ্চতায় থাকে। ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইস থেকে মোটামুটি এক হাত বা আঠারো ইঞ্চি দূরে বসা উচিত। আধ ঘণ্টা পর পর এক মিনিটের জন্য উঠে দাঁড়াতে হবে।

৩) ঘুমানোর সময় শুধু একটা বালিশ নিয়ে ঘুমাতে হবে। ঘুমানোর ভঙ্গি ঠিক হওয়া উচিত। উপুড় হয়ে নয়, চিৎ অথবা কাত হয়ে শুতে হবে। সাধারণত অনেকে খুব উঁচু বালিশে মাথা রেখে ঘুমান। অনেকে আবার খুব বেশি পাতলা বালিশ ব্যবহার করেন। কেউবা আবার রাতে টিভি দেখতে দেখতে সোফাতেই বাঁকা হয়ে শুয়ে পড়েন। এসব থেকে বিরত থাকতে হবে।

৪) ঘাড়ের ব্যথা প্রায়ই হতে থাকলে সারভাইভাল পিলো ব্যবহার করুন।

৫) ব্যথা সহ্য করতে না পারলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো বেদনানাশক (analgesic) মেডিসিন নিতে পারেন।

ব্যথা কমানোর চটজলদি সল্যুশন
হঠাৎ করে ঘাড়ে ব্যথা হলে ব্যথার স্থানে বরফ দিয়ে সেঁক দিন। দিনে ৩/৪ বার বরফ সেঁক দিলেই ব্যথা কমে যাবে। ব্যথা দীর্ঘদিন থাকলে ব্যথার স্থানে গরম সেঁক দিন, এতে ব্যথার কিছুটা উপশম হবে। কিন্তু মনে রাখবেন, দীর্ঘমেয়াদি ঘাড় ব্যথার চিকিৎসা দ্রুত করা উচিত। অন্যথায় সমস্যা জটিল থেকে জটিলতর হবে। আরেকটা বিষয়, হাঁটার সময় শরীর সোজা রেখে হাঁটবেন। ঘাড় নিচু করে, কুঁজো হয়ে বা ঝুঁকে থাকা যাবে না। দৈনন্দিন জীবনে নানা কারণে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। তবে কারণ যাই হোক না কেন, অবশ্যই সেটি জানার চেষ্টা করে সে অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে।

ঘাড়ের ব্যথা কমাতে ব্যায়াম কতবার করবেন আর কীভাবে করবেন সেটা অবশ্যই ফিজিওথেরাপিস্টের কাছ থেকে জেনে নিবেন। ব্যথা অবস্থায় বেশি এক্সারসাইজ করলে ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার জন্য সঠিক এক্সারসাইজ কী হতে পারে, তার জন্য বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ গ্রহণ করুন। সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।


লেখক: সুশান্ত কুমার ঘোষ, ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ, ডিআইইউ মেডিকেল সেন্টার