হাজার হাজার বছর ধরে রসুনের ঔষধিগুণ রয়েছে বলে বিশ্বাস করা হতো। আধুনিক বিজ্ঞান এখন এটি নিশ্চিত করতে শুরু করেছে। রসুনে উপস্থিত এলিসিন নামক যৌগ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দূর করে। এলিসিনের উপস্থিতির কারণে রসুনকে সুপারফুড বলা হয়।
রসুন একটি জনপ্রিয় খাদ্য উপাদান যা অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতার সঙ্গে সম্পর্কিত। সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী এটি দেহে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে, প্রদাহনাশক হিসেবে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে।
রসুন খাওয়ার উপকারিতা
১. রসুন উচ্চ পুষ্টিগুণসম্পন্ন
রসুনের একটি মাত্র কোয়াতেই দৈনিক চাহিদার –
ম্যাঙ্গানিজঃ ২%
ভিটামিন বি৬ঃ ২%
ভিটামিন সিঃ ১%
সেলেনিয়ামঃ ১%
ফাইবার/আশঁঃ ০.০৬ গ্রাম
প্রোটিনঃ ০.২ গ্রাম
শর্করাঃ ১ গ্রাম
রসুনে এগুলি ছাড়াও সামান্য পরিমাণে অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে।
২. রসুন অসুস্থতা থেকে রক্ষা করে
রসুনের ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকবিরোধী গুণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
রসুনে উপস্থিত সেলেনিয়াম ও এলিসিন ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
এটি ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা ৬০% কমিয়ে দেয়।
রসুনের নির্যাস নিয়মিত খেলে এটি মানুষের স্মৃতিশক্তি প্রখর করে তোলে।
রক্তে সুগার লেভেল কমিয়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৩. উচ্চরক্তচাপ কমায়
প্রতিবছর হৃদরোগ ও স্ট্রোকে প্রচুর মানুষ মারা যায়। উচ্চরক্তচাপ বা হাইপারটেনশন এইসব রোগের অন্যতম কারণ। একটি গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত রসুন খেলে এটি উচ্চরক্তচাপ কমায়। প্রতিদিন সকালে খালিপেটে রসুন খেলে উচ্চরক্তচাপজনিত রোগসমূহ থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।
৪. কোলেস্টেরল লেভেলের উন্নতি ঘটিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
রসুন আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের(এল.ডি.এল) মাত্রা কমিয়ে দেয়। নিয়মিত রসুন খেলে ক্ষতিকর কোলেস্টরলের মাত্রা ১০-১৫% কমে যায়।
রসুন হৃৎপিন্ডকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে সহায়ক। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বহুলাংশে কমে যায়।
৫. কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি
গ্রীসের অলিম্পিক অ্যাথলেটরা দীর্ঘসময় তাদের শক্তি ধরে রাখার জন্য রসুনের ব্যবহার করতো। রসুন খেলে শরীরের ক্লান্তি কমে যায় এবং কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
রসুন ব্যায়ামের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং ব্যায়াম পরবর্তী ক্লান্তিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
৬. যৌনক্ষমতা বৃদ্ধি
অনেকেই বিভিন্নকারণে যৌন সমস্যায় ভোগেন । নিয়মিত মধুসহ রসুন খেলে যৌনক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সাথে দুধ ও যোগ করতে পারেন।
পুরুষের যৌনক্ষমতা অনেকটাই নির্ভর করে রক্ত সঞ্চালনের উপরে। রসুন রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির মাধমে যৌন সক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
৭. হেভি মেটাল বিষমুক্তকরণ
প্রতিদিনের খাবারে আমরা প্রচুর হেভি মেটাল গ্রহণ করি। কলকারখানায় শ্রমিকদের শরীরে বিভিন্নভাবে হেভি মেটালস প্রবেশ করে। এই ভারী ধাতুসমূহের বিষক্রিয়ায় আমাদের হাড়ের ক্ষতি হয়। নিয়মিত রসুন খেলে এটি ভারী ধাতুসমূহের বিষক্রিয়া নষ্ট করে দেয়।
গবেষণায় দেখা গেছে রসুন রক্তে সীসার মাত্রা ১৯% কমিয়ে দেয়।
৮. এন্টি এজিং হিসেবে কাজ করে
রসুনে উপস্থিত এন্টি অক্সিডেন্টের প্রভাবে ত্বক ভালো থাকে এবং অকাল বার্ধক্য প্রতিরোধ করে। মুখের দাগ দূর করে সহায়ক।
স্কিনের কোলাজেন রক্ষায় ভূমিকা রাখে বলে রসুন অন্যতম এন্টি এজিং ফ্যাক্টর।
অতিরিক্তমাত্রায় রসুন খেলে যা হয়
এটি নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে।
অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে।
রক্ততঞ্চনে বাধাসৃষ্টি করে রক্তপাত বাড়াতে পারে।
রসুন খাওয়ার নিয়ম ও গ্রহণমাত্রা
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ৩/৪ টি রসুনের কোয়া খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কাঁচা রসুন খেলে অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
যদি এই পরিমাণের থেকে বেশী খেয়ে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করেন তবে অবশ্যই মাত্রা কমাতে হবে। তবে রান্না করা রসুনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (নিঃশ্বাসে দূর্গন্ধ, হজমে সমস্যা) দেখা যায়না । তাই কাচাঁ রসুন খেতে সমস্যা হলে কম তাপে রান্না ( সেদ্ধ বা অর্ধসেদ্ধ) করে নিতে পারেন। অনেকসময় ধরে রান্না করলে এলিসিনের পরিমাণ কমে যাবে।
ঠান্ডার সমস্যার দূরীকরণে “রসুন চা” বানিয়ে খেতে পারেন। শীতকালে আপনার শরীরে শীতের প্রকোপ কমাতে পারে প্রতিদিন গ্রহণ করা ২/৩ কোয়া রসুন।
অপারেশন বা সার্জারির সময় রসুন খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
অসুস্থ অবস্থায় অন্যান্য ওষুধের পাশাপাশি রসুন খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নিতে হবে।
source:
https://nutrition-bd.com/