Author Topic: শিশুর থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে পরিবার ও সামাজিক দায়বদ্ধতা ডা. সৈয়দা নাফিসা ইসলাম  (Read 1644 times)

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

Rasel Ali

  • Administrator
  • Full Member
  • *****
  • Posts: 242
  • Gender: Male
  • Trust Your Strength It Will take U Toward Success
    • View Profile
    • Daffodil Hospital

থ্যালাসেমিয়া এক ধরনের বংশগত  রোগ। এই রোগের কারণে শরীরে স্বাভাবিক হিমোগ্লোবিন পরিমাণ মতো  তৈরি হতে পারে না। থ্যালাসেমিয়া হওয়ার জন্য মা এবং বাবার দায়ভার সমান। মা অথবা বাবার কাছ থেকে প্রাপ্ত অসুস্থ ‘জিন’ নিয়ে জন্ম নেয়া শিশুটি থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকে।
শিশুর থ্যালাসেমিয়া বোঝার উপায়:
শিশু জন্মের সময় সুস্থ থাকে, কিন্তু থ্যালাসেমিয়ার প্রকাশ ও তীব্রতা ভেদে ৪-৬ মাস থেকে ৩-৪ বছর বয়সের মধ্যে রোগের লক্ষণ প্রকাশ হয়, শিশুটি ফ্যাকাশে হয়ে যায়, কর্মচাঞ্চল্য কমতে থাকে। ৬-৭ মাস বয়স থেকে শিশুটির প্লীহা ক্রমশ বড় হতে থাকে। সঠিক চিকিৎসা শুরু না করলে চেহারার মধ্যে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। কপালের সামনে ও মাথার দু’পাশে খানিকটা উঁচু  দেখায়, হাড় পাতলা হয়ে যেতে পারে। কখনো কখনো জন্ডিস দেখা যায়।  চিকিৎসা না করলে বৃদ্ধি ব্যাহত হয়ে শিশুটি বেঁটে বা খাটো হয়।
নির্ণয় পদ্ধতি
রক্তে হিমোগ্লোবিন, ব্লাডফিল্ম, হাতের ও মাথার এক্স-রে করিয়ে এ রোগের ধারণা পাওয়া যায়। হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফরেসিসের মাধ্যমে এ রোগ শনাক্ত করা হয়।
প্রকার:
থ্যালাসেমিয়া প্রধানত দুই ধরনের হয়
যেমন- ১. আলফা থ্যালাসেমিয়া ও ২. বিটা থ্যালাসেমিয়া।
আলফা থ্যালাসেমিয়া চার ধরনের হয়ে থাকে:
১. ক্যারিয়ার বা বাহক
২. আলফা থ্যালাসেমিয়া মাইনর
৩. হিমোগ্লোবিন এইচ ডিজিজ
৪. আলফা থ্যালাসেমিয়া মেজর
বিটা থ্যালাসেমিয়া (Beta-thalassemia) ৩ (তিন) ধরনের হয়ে থাকে।
১. বিটা থ্যালাসেমিয়া মাইনর
২. বিটা থ্যালাসেমিয়া ইন্টারমিডিয়া
৩. বিটা থ্যালাসেমিয়া মেজর
 থ্যালাসেমিয়া যে প্রকারের হোক না কেন, শিশু এই রোগে আক্রান্ত মনে হলেই শিশু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। কোনোভাবেই এই রোগের কোনো উপসর্গ অবহেলা করা যাবে না।
চিকিৎসা:
অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন হচ্ছে এ রোগের সম্পূর্ণ নিরাময়কারী নির্দিষ্ট চিকিৎসা। বিশেষভাবে তা করা হলে ৫০/৭০ ভাগ  ক্ষেত্রেই ভালো ফল পাওয়া যায়, তবে আমাদের দেশে তা এখনো সাধ্যাতীত রয়ে গেছে। সফল অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন ব্যতীত অন্যান্য ব্যবস্থাপনার সাহায্যে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুকে ফলোআপ চিকিৎসা ও সঠিকভাবে রক্ত সঞ্চালন, শরীরে লোহার পরিমাণ সঠিক রাখলে এসব রোগীরা দীর্ঘ জীবন লাভ করে।
আয়ুর্বেদী চিকিৎসা:
কচি গম গাছের রস নিয়মিতভাবে প্রতিদিন সেবন করলে কিছু থ্যালাসেমিয়া রোগীর শরীরে রক্তের চাহিদা কমে যায়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শে এই ওষুধ সেবন করতে হবে।
প্রতিরোধ:
থ্যালাসেমিয়া চিকিৎসা ব্যয়সাপেক্ষ। এজন্য সন্তানের জন্মের পর থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা করিয়ে তাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করার চেয়ে অনেক  বেশি শ্রেয় এরকম একটি শিশুর জন্ম না হতে দেয়া। অসুখটি নতুন নয়। শুধুমাত্র সামাজিক সচেতনতার সাহায্যে ভাবী পিতা-মাতারা যথেষ্ট সংখ্যক এগিয়ে এলেই এ রোগে শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আনা সম্ভব।
গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো বিবাহের আগে নারী ও পুরুষ উভয়েরই উচিত বিয়ের আগে নিজেদের রক্ত পরীক্ষা করিয়ে  নেয়া। যদি তাদের মধ্যে এ রোগের জিন থাকে অর্থাৎ তারা উভয়েই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হন, তাদের মধ্যে কখনোই বিবাহ হওয়া উচিত নয়। এটাও যদি কেউ করেন তাদের জন্য আরও একটি ব্যাপারের উপর বর্তমানে বিশেষ জোর দেয়া হচ্ছে। সেটা হলো ইনট্রাইউটেরাইন ডায়াগনোসিস। গর্ভাবস্থায় ৮-১০ সপ্তাহের মধ্যে জরায়ুর  ভেতরকার ভ্রূণ থেকে তা পরীক্ষা করে  দেখা হয়। এতে যদি এই রোগের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে স্বামী ও স্ত্রীকে গর্ভপাতের পরামর্শ দেয়া  যেতে পারে। প্রত্যেকবার গর্ভাবস্থায় এ পরীক্ষাটা করতে হবে। মনে রাখতে হবে শতকরা পঞ্চাশ ভাগ সম্ভাবনা থাকে এ রোগ নিয়ে জন্মাবার।
পিতা-মাতার দায়িত্ব:
একটি অসুস্থ শিশু যদি জন্মেই থাকে তাহলে  বাবা/মা কার দোষ এটা না খুঁজে  শিশুর যত্ন ও চিকিৎসার ব্যাপারে  দৃষ্টি দিতে হবে। কেননা, এ রোগের জন্য সামাজিকভাবে শুধুমাত্র মাকে দায়ী করা যাবে না। বাবাও সমভাবে অংশীদারী। বাচ্চাকে সর্বদা হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করতে হবে। যাতে সে তার অস্বাভাবিকতা সম্পর্কে কিছু অনুমান করতে না পারে। নিজেদের ভাগ্যকে দোষারোপ না করে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করুন। যেহেতু চিকিৎসা সারা জীবনের।  তাই সঠিকভাবে চিকিৎসা সর্বোপরি সর্বদা শিশু বিশেষজ্ঞের ফলোআপে থাকতে হবে। চালিয়ে যাওয়ার জন্য পরিবারের সবাই একত্রিত ও পরিকল্পিতভাবে কাজ করতে হবে। সর্বোপরি সর্বদা শিশু বিশেষজ্ঞের ফলোআপে থাকতে হবে।

লেখক: কনসালট্যান্ট, শিশু বিভাগ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
Source: Manobjamin
BR
Rasel Ali