Author Topic: উচ্চ রক্তচাপ কি শুধুই হার্টের অসুখের জন্য দায়ী?  (Read 2040 times)

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

Mr. Rasel

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 516
  • Gender: Male
    • View Profile
হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ আজকালকার দিনে খুবই পরিচিত একটি রোগ। সব বয়সের মানুষ বিশেষ করে পঞ্চাশোর্ধ প্রবীণ রা সাধারণত উচ্চ রক্তচাপ এর ক্ষতিকারক প্রভাব দ্বারা বেশি আক্রান্ত হন।
আমরা জানি, রক্তে সাধারণ ভাবে চাপ বেড়ে গেলেই তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়। একেবারে সাধারণ ভাবে যদি আমরা বিষয়টির ব্যাখ্যা করি তাহলে এটাই বলতে হয়। রক্তচাপের স্বাভাবিক একটি মাত্রা রয়েছে। সিস্টোলিক রক্তচাপ বা উপরের রক্তচাপটা ১২০ হলে তাকে স্বাভাবিক বলা হয়। এর উপর যদি উঠে যায়, একে বলে উচ্চ রক্তচাপ বা সিস্টোলিক হাইপারটেনশন। তেমনিভাবে ডায়াস্টোলিক বা নিচের রক্তচাপ যদি ৮০ এর উপর উঠে যায়, তাহলে একে বলা হয় ডায়াস্টোলিক হাইপারটেনশন। একজন মানুষের দুটোই বেড়ে যেতে পারে অথবা যেকোন একটি বেড়ে যেতে পারে। যেকোনো ক্ষেত্রেই একে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বলে।

এই উচ্চ রক্তচাপের কিছু ক্ষতিকারক প্রভাব বিদ্যমান। যাকে আমরা কয়েকটি ভাগে ভাগ করতে পারি। যেমন:

• ধমণীর উপর ক্ষতিকারক প্রভাব।
• হার্টের উপর ক্ষতিকারক প্রভাব
• মস্তিষ্কের উপর ক্ষতিকারক প্রভাব
• কিডনীর উপর ক্ষতিকারক প্রভাব
• চোখের উপর ক্ষতিকারক প্রভাব
• উচ্চ রক্তচাপজনিত ঝুঁকি বা সঙ্কট

আসুন বিস্তারিত ভাবে জেনে নেয়া যাক ক্ষতিকারক প্রভাব গুলো-

ধমনীর উপর হাইপারটেনশনের ক্ষতিকারক প্রভাব-

●ক্ষতিকারক ও সংকীর্ণ ধমনীঃ হাইপারটেনশন ধমনীর ভেতরের অংশের কোষগুলোর ক্ষতি সাধন করে। যখন খাদ্য থেকে চর্বি রক্তধারায় প্রবেশ করে, তখন তা ক্ষতিগ্রস্থ ধমনীতে সংগৃহীত হতে পারে। অবশেষে, ধমনীর প্রাচীরের স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস পায় এবং ধমনী ক্ষতিগ্রস্ত ও সংকীর্ণ হয়ে পড়ে যার ফলে শরীর জুড়ে রক্ত প্রবাহ সীমিত হয়ে পড়ে।

এ্যানিউরিজমঃ এ্যানিউরিজম বলতে বোঝায় এক ধরণের অস্বাভাবিক ক্ষত যা রক্তনালীর প্রাচীরে স্ফীতর সৃষ্টি করে আর তারই সাথে সাথে রক্তনালীর প্রাচীর ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং এর ফলে অনেক সময় ধমনীর অন্তঃপ্রাচীরে রক্তক্ষরণ দেখা দিতে পারে।

হার্টের উপর উচ্চ রক্তচাপের ক্ষতিকারক প্রভাব-

করনারী আর্টারী ডিজিজঃ উচ্চ রক্তচাপ হবার পেছনে প্রধান কারণই হলো রক্তনালীর প্রাচীরে চর্বি জমে ব্লকেজ সৃষ্টি হওয়া এবং এতেই রক্তপ্রবাহে বাধা তৈরি হয় যার ফলে যে করনারী ধমনী গুলো দিয়ে হৃদ পেশীতে রক্ত সরবরাহ হয় তা প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়াতে বিভিন্ন করনারী ধমনী জনিত রোগ দেখতে পাওয়া যায়।

হার্ট ফেইলিউরঃ উচ্চ রক্তচাপের ফলে হৃদ পেশীগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে না যার ফলশ্রুতিতে হার্ট ফেইলিউরের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। অনেক সময় এই ক্ষেত্রে হার্ট এ্যাটাকের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।

মস্তিষ্কের উপর উচ্চ রক্তচাপের ক্ষতিকারক প্রভাব-

• স্ট্রোক / মিনিস্ট্রোকঃ উচ্চ রক্তচাপের ফলে সঠিক ভাবে ব্রেইনে রক্ত প্রবাহ না হওয়ায় মস্তিষ্ক সঠিক পরিমাণ অক্সিজেন পায় না এবং তারই ফলশ্রুতিতে হতে পারে ব্রেইন স্ট্রোক।

• ডিমেনশিয়াঃ এটি এমন এক ধরণের মানুষিক সমস্যা যাতে করে ব্যাক্তির স্মৃতি ধারণ ক্ষমতা,কথা বলা বা চিন্তার ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়; যা পরবর্তীতে আলঝেইমার্স নামক একটি ভয়াবহ মানুষিক রোগের উৎপত্তি ঘটায়। ।এটি হওয়ার সব চাইতে বড় কারণ হলো এমন ধরণের সরু ধমনী যাতে উচ্চ রক্তচাপের ফলে ব্লকেজ দেখা দেয়ায় মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহে বিঘ্ন ঘটে।
কিডনির উপর উচ্চরক্তচাপের ফলে যে ধরণের ক্ষতিকারক প্রভাব দেখা দিতে পারে-

• কিডনি ফেইলিউরঃ উচ্চ রক্তচাপ মাঝে মাঝে কিডনি ফেইলিউরেও ভূমিকা রাখে। সাধারণত উচ্চ রক্তচাপের ফলে ধমনী গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সঠিকভাবে রক্ত কিডনিতে সরবরাহ করতে পারে না এবং তারই ফলশ্রুতিতে কিডনি ফেইলিউর দেখা দিতে পারে।

• কিডনি আর্টারি এ্যানিউরিজমঃ উচ্চ রক্তচাপ ধমনী গুলো তে যেমন ব্লকেজ সৃষ্টি করে তেমনি ধমনী প্রাচীর গুলোতে অনেক সময় ক্ষত তৈরীর মাধ্যমে স্ফীতি সৃষ্টি করে যার ফলে কিডনি ধমনী গুলোতে অন্তঃপ্রাচীরে রক্ত ক্ষরণ দেখা দেয়

হাইপারটেনশন প্রায়শই চোখের ও বেশ ক্ষতি সাধন করে থাকে। যেমন-

• রেটিনোপ্যাথিঃ এটি এমন এক ধরণের রোগ যাতে রেটিনা তে সঠিক পরিমাণে রক্ত প্রবাহের অভাবে চোখের জ্যোতি নষ্ট হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে চোখে রক্ত ক্ষরণ পর্যন্ত হতে পারে। এর পেছনে কাজ করে ক্ষতিগ্রস্ত ধমনি যা কিনা উচ্চ রক্তচাপেরই ফসল

• অপটিক নিউরোপ্যাথিঃ এটি সাধারণত হয় চোখের নার্ভ বা স্নায়ু গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে। এর পিছনে প্রধান ভূমিকাই থাকে হাইপারটেনশনে ক্ষতিগ্রস্ত সরু রক্ত ধমনি যা সঠিক ভাবে চোখের স্নায়ু গুলোতে অক্সিজেন রক্ত প্রবাহে ব্যর্থ হয় এবং নার্ভ গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

উচ্চরক্তচাপজনিত ঝুঁকি বা সঙ্কট-

• স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে যাওয়া
• ব্যক্তিত্ব এ পরিবর্তন আসা
• কাজে মনোযোগের অভাব ঘটা
• ডিমেনসিয়া বা আলঝেইমার রোগে আক্রান্ত হওয়া
• বুকে ব্যাথা
• হার্ট এ্যাটাক বা হার্ট ফেইলিউরে আক্রান্ত হওয়া
• কিডনি কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া
• চোখের দৃষ্টি বিঘ্নিত হওয়া
• গর্ভকালীন অবস্থায় খিচুনি হওয়ার সম্ভবনা থাকা
• সর্বোপরি মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া

অনেক সময় উচ্চরক্তচাপ খুবই মারাত্মক ভাবে দেহের ক্ষতি সাধন করতে পারে। আমাদের একটু সচেতনতাই পারে আমাদের এই ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে রক্ষা করতে। তাই অতিরিক্ত তেল চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার এবং প্রতিদিন অল্প পরিমাণে ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলুন।



Source: pushtibarta