Author Topic: মানসিক চাপ | উৎস, প্রতিক্রিয়া, অসুখ ও মুক্তির উপায়!  (Read 5060 times)

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

Mr. Rasel

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 516
  • Gender: Male
    • View Profile
মানসিক চাপ হল কোন মানুষের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত কোন ঘটনা বা পরিস্থিতি, যা তার অনুভূতিতে পীড়া সৃষ্টি করে স্বাভাবিক জীবনযাপনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। মানসিক চাপের মুখে সব মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে না। যারা হয়ে পড়ে অসুস্থ বা কিংকর্তব্যবিমূঢ়, তাদের ব্যক্তিত্বের সমস্যা আছে বলে মনে করা হয়। ব্যাক্তিত্ব দূর্বল প্রকৃতির হলে, অথবা শারীরিক সমস্যা থাকলে মানসিক চাপে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে দেখা যায়।
মানসিক চাপ ও এর উৎস
১) এক গবেষণায় দেখা গেছে, কোন দম্পতির স্বামী বা স্ত্রীর মৃত্যুতে তার যে কষ্ট হয়, তার মাত্রা দুনিয়ার সমস্ত মানসিক চাপের চেয়ে বেশি। এভাবে এক একটি মানসিক চাপের মাত্রা এক এক রকম।
২) ডিভোর্স, দাম্পত্য জটিলতা, প্রিয়জনের অসুস্থতা ও মৃত্যু, পরিবার থেকে দূরে থাকা, যৌন সমস্যা, আর্থিক টানাপোড়েন, মামলা, প্রতিযোগিতা ও দ্বন্দ্ব, কর্মস্থলে অস্বস্তি, চাকরি হারানোর শঙ্কা ও অব্যাহতি, ইত্যাদি মানসিক চাপের উৎস হয়ে থাকে।
৩) যদি আপনি প্রায়ই ‘কষ্ট কমানোর জন্য’ মদ বা ঔষধ/মাদকদ্রব্য খুঁজেন বা প্রায়ই বেশি পরিমাণে মদ্যপান করেন তাহলে আপনি শুধুমাত্র সমস্যা মোকাবেলার চেয়ে সমস্যা ঢাকছেনই না বরং নিজেকে আরো বেশি আসক্তির ঝুঁকিতে ফেলছেন। এ ধরনের আসক্তি মানসিক চাপ বাড়ায়।
৪) সবচেয়ে বেশি প্রচলিত মানসিক চাপের উপসর্গসমূহের মধ্যে দেখা যায় বিভিন্ন মাত্রার তীব্র অনুভূতিসমূহ, দুঃখের পর্ব, অতি উৎফুল্ল আচরণের পর্ব এবং আরো অনেক কিছু। সবাই-ই অবশ্য দুঃখের এবং অতিমাত্রার অনুভূতিসমূহের মধ্য দিয়ে যায়˗এটা মানুষের আচরণের প্রাকৃতিক অংশ। সমস্যাটা হল মানুষের স্বাভাবিকতা এবং অস্বাভাবিকতার মধ্যে পার্থক্য করতে না পারা।
মানসিক চাপের শারীরিক প্রতিক্রিয়া
১. মাথাব্যথা
মাথাব্যথা হয় না এমন লোক খুজে পাওয়া ভার! মাথাব্যথার ৮৫% কারণ হল টেনশন। মানুষ যখন তার ক্ষোভ, দুঃখ, যন্ত্রণা, হতাশা, আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে না তখন তা শারীরিক লক্ষণ হিসেবে মাথাব্যথার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেতে পারে।
২. আইবিএস
একে বলে সাইকোলজিক্যাল বেইজড অসুখ। সকালে যখন অফিস, স্কুল, কলেজ ও কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য টেনশন হয়, তখন ৩-৪ বার বাথরুম যেতে দেখা যায় অনেককেই। কিন্তু সারাদিন মোটামুটি ভালো থাকে। অনেকের কাছে এটি পুরনো আমাশয় হিসেবে পরিচিত।
৩. হার্টের অসুখ
স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি স্লোগানে বলা হয়ে থাকে, “মানসিক চাপ মুক্ত থাকুন, হার্ট কে সুস্থ রাখুন”।
এছাড়াও হাইপার টেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ, মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন, পেপটিক আলসার,  অ্যাজমা, ডায়াবেটিস-এর মত বড় বড় অসুখের সঙ্গে মানসিক চাপের সম্পর্ক আছে।
মানসিক চাপ শারীরিক অসুখের তীব্রতা বাড়ায়। ফলে চিকিৎসার ব্যাঘাত ঘটে, কোন কোন ক্ষেত্রে শারীরিক অসুখের শুরুতে এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। যেমন, দেখা যায় স্বামীর মৃত্যুর কিছুদিনের মধ্যে স্ত্রীর হার্ট অ্যাটাক হয়ে মৃত্যু।
৪. শরীরের ইমিউনোলজিক্যাল পরিবর্তন
শরীরের ভেতরে কিছু জৈব পদার্থ আছে যা শরীরকে বিভিন্ন প্রতিকুল পরিস্থিতিতে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস থেকে রক্ষা করে। দীর্ঘদিন মানসিক চাপের মধ্যে জীবনযাপন করলে এই ইমিউনোলজিক্যাল সিস্টেম দূর্বল হয়ে যায়। এতে খুব সহজে অসুখে শরীর দুর্বল হয়ে যায়।
যেসব মানসিক অসুখ হতে পারে
১) বিষণ্ণতা
এর প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয় কোন বিয়োগান্তক ঘটনা। যেমন, ২৮ বছরের এক বিবাহিত মেয়ের ৬ মাস আগে স্বামী দুর্ঘটনায় মারা গেছে। ধীরে ধীরে মেয়েটির আচরণ ও অনুভব প্রকাশে পরিবর্তন দেখা দেবে।
২) পরীক্ষাভীতি
কিছু ছাত্রছাত্রী আছে পরীক্ষার আগে শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরীক্ষার তিন দিন আগেই শুরু হয় টেনশন, বুক ধরফর করা, ঘুমের সমস্যা ও বারবার বাথরুমে যাওয়া। মৌখিক পরীক্ষার সময় কোন কোন পরীক্ষার্থীর মুখ দিয়ে কথা বের হয় না, মুখ শুকিয়ে যায় ইত্যাদি। এই গ্রুপের ছাত্রছাত্রীদের সাইক্রিয়াটিস্টের পরামর্শ নেয়া উচিত।
এরকম মানসিক চাপে সৃষ্ট আরো রোগগুলো হলো- টেনশন, প্যানিক ডিজঅর্ডার, শুচিবায়ু, ফোবিয়া, পিটিএসডি, অনিদ্রা ইত্যাদি।
পিটিএসডি কী?
পিটিএসডি বা পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার হল কোন স্ট্রেস পরবর্তী মানসিক ধ্বস যা কোন ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার পরে দেখা দেয়। একটি মেয়ে যদি সেক্সুয়ালি অ্যাবিউজড অথবা ধর্ষিত হয়, পরবর্তীকালে সেক্সের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। পুরুষ দেখলে ভয় পায়, এড়িয়ে চলে।
মানসিক চাপ থেকে যেভাবে মুক্ত থাকা যায়
১. সমস্যাগুলো নির্দিষ্ট করে ফেলুন।
২. সমস্যা সমাধানের কৌশল আয়ত্ত করুন।
৩. বেশ কিছু বিকল্প সমাধান বের করুন।
৪. যে কোন চাপের মুখে পড়লে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিন।
৫. নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
৬. রিলাক্সেশন টেকনিক শিখুন ও প্রয়োগ করুন।
৭. সাইক্রিয়াটিস্টের পরামর্শ ও নির্দেশ মেনে চলুন।
৮. নিয়মিত ফলোআপে থাকুন।
আপনি যদি উপরিউক্ত যেকোন পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মেলাতে পারেন তাহলে আপনার একজন কাউন্সেলরের/ চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানীর সাথে অতি দ্রুতই কথা বলা দরকার। বেশিদিন মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে একসময় তা মানসিক রোগে পরিণত হয়। যত দ্রুত আপনি এই রোগসমূহের উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করবেন ততদ্রুতই আপনি আপনার প্রত্যাশিত এবং উপযুক্ত জীবনযাপনে ফিরে যেতে পারবেন।