Author Topic: দুধ কেনো খাবো ?  (Read 2036 times)

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

Mr. Rasel

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 516
  • Gender: Male
    • View Profile
দুধ কেনো খাবো ?
« on: February 09, 2020, 03:24:42 PM »
১. দুধ ক্যালসিয়ামের সব চাইতে ভালো উৎস। ছোট বাচ্চাদের দাঁতের জন্য দুধ খুবই উপকারী। দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারে থাকা ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস দাঁতের গঠন ও বিকাশে উপকারী। দুধে প্রচুর পরিমাণে থাকা আমিষ‘ক্যাসিন’ দাঁতের এনামেলের উপর প্রতিরোধী পাতলা স্তর গড়ে তোলে। মুখের ভেতর, দাঁত এসিডের সংস্পর্শে আসলে,এটি তখন দাঁত থেকে ক্যালসিয়াম ও ফসফেটের ক্ষয় রোধ করে। দন্তবিশেষজ্ঞরা বলেন যে, প্রতি বেলা খাবারের মধ্যবর্তী সময়ে পানি বাদে দুধই হচ্ছে আরেকটি নিরাপদ পানীয়। কারণ দুধ,দাঁত ক্ষয়ের সবচে’ নাজুক অবস্থাতেও দাঁতের ক্ষয়সাধন হতে দেয় না। তাই, বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকেই দুধ পানের অভ্যাস করানো উচিত।

২. ছোটবেলা থেকে শুরু করে সারা জীবন দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ করলে এটি আপনার হাড়কে করবে মজবুত আর রক্ষা করবে ‘ওসটিওপোরোসিস’ নামের হাড়ক্ষয়কারী রোগ থেকে। যদি দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার প্রতিদিনের টেবিলে না থাকে, তবে আপনার শরীরে দেখা দিতে পারে ক্যালসিয়ামের অভাব। যা বিশেষ করে মহিলাদের আর বয়স্কদের জন্য চিন্তার বিষয়। ক্যালসিয়ামের অভাবের কারণে ‘ওসটিও আর্থাইটিস’ নামক হাড়ক্ষয়কারী রোগ ও হতে পারে। 
   
৩.শুধু ফল ও সবজি খেলে যে উপকার হয়, তারচেয়ে ফল, সবজি আর স্বল্প চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার নিয়মিত পরিমাণে গ্রহণ করলে আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় দেখা গেছে-দুগ্ধজাত খাবারে রয়েছে ‘উচ্চমানসম্পন্ন আমিষ’ যা মানবদেহের জন্য দরকারি। দুগ্ধজাত আমিষ শরীরে অ্যামাইনো অ্যাসিড সরবরাহের মাধ্যমে অ্যামাইনো অ্যাসিডের কমতি থাকা ‘সেরিল’ ও সবজিজাত সাধারণ মানের আমিষের পুষ্টিমান বাড়িয়ে তোলে।
 
৪. এছাড়া বেশকিছু গবেষণায় দেখা গেছে-দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণের সাথে হৃদরোগের লক্ষণসমূহ হ্রাসের একটি যোগসূত্র পাওয়া গেছে। দেখা গেছে যারা স্বল্প পরিমাণে দুধ পান করেছিলেন তাদের চাইতে যারা বেশি পরিমাণে দুধ (বিশেষত সর বাদ দিয়ে) পান করেছিলেন তাদের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা কম।
এক্ষেত্রে আরো অন্যান্য নিয়ামক থাকতে পারে, তবে স্বাস্থ্য ও অসুস্থতা সংক্রান্ত এক গবেষণায় দেখা গেছে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণের সাথে হৃদরোগের ঝুঁকিহ্রাসের একটা সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ রক্তে বাজে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে আনতে পারে আর ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়াতে পারে। অধিকতর বাজে কোলেস্টেরল আর কম পরিমাণ ভালো কোলেস্টেরল দুটোই আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

যারা স্বল্প পরিমাণে দুধ পান করেছিলেন তাদের চাইতে যারা বেশি পরিমাণে দুধ (বিশেষত সর বাদ দিয়ে) পান করেছিলেন তাদের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা কম।

৫. স্থূলতা রোধে প্রচলিত ধারণার বিপরীতে জানা গেছে যারা দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ করেন না তাদের চাইতে যারা দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ করেন তারা তুলনামূলক ঝরঝরে শরীরের অধিকারী হয়ে থাকেন। পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে ক্যালরি নিয়ন্ত্রিত সুষম খাবারের অংশ হিসেবে দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ করলে ওজন হ্রাস ত্বরান্বিত হয়ে থাকে, বিশেষ করে তলপেট থেকে, যেখানটায় বেশি চর্বি  থাকা  স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি।

৬. নিয়মিত কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার খেলে টাইপ–২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস পাবেন। টাইপ-২ ডায়াবেটিস বলতে, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ও আপেক্ষিক ইনসুলিন ঘাটতির পরিপ্রেক্ষিতে রক্তে শর্করার মাত্রার আধিক্য বুঝায়। যা এখন শুধু বয়স্ক নয়, শিশু–কিশোরদেরও সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কম চর্বিযুক্ত , দুগ্ধজাত খাবারের এই উপকারিতার পেছনে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামসহ অন্যান্য দরকারি পুষ্টিগুণের সমন্বিত অবদান আছে। এতে থাকা স্বল্প গ্লাইসেমিক সূচক রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৩৭,০০০ মধ্যবয়সী মহিলার মধ্যে জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে যারা পর্যাপ্ত দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কম ছিল। ৩,০০০ অতিরিক্ত ওজনের বয়স্কদের মাঝে গবেষণায় দেখা গেছে পরিশোধিত চিনি ও শর্করা গ্রহণ না করে দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ করলে অতিরিক্ত ওজনের বয়স্কদের শরীরে টাইপ–২ ডায়াবেটিস জেঁকে বসাটা প্রতিরোধ করতে পারে।

৭. কর্মব্যস্ততার পর ক্লান্তি দূর করতে এক গ্লাস গরম দুধ আপনার জন্য খুবই উপকারী। গরম দুধ ক্লান্ত পেশি সতেজ করতে সাহায্য করে। এছাড়া, দুধ খেলে শরীরে মেলাটনিন ও ট্রাইপটোফ্যান হরমোন নিঃসৃত হয়, এই হরমোনগুলো ঘুম ভালো হতে সাহায্য করে।

৮. দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা আপনার মাংশপেশির গঠনে অনেক বেশি সহায়তা করবে। দুধ মাংশপেশির আড়ষ্টতা দূর করতে সক্ষম।

৯.  দুধে রয়েছে পটাশিয়াম যা আপনার হৃদপিণ্ডের পেশির সুস্থতা বজায় রাখবে। তাছাড়া এর খনিজ উপাদান হৃদপিণ্ড সতেজ রেখে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণও করতে পারে।

১০. আপনার চুলের জন্য ও দুধ খুব উপকারী। দুধে আছে প্রচুর ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা চুলের জন্য খুব উপকারী।

১১. প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ পান করলে বাইরের আজেবাজে তেলের খাবারের চাহিদা কমে যায়। এতে করে যারা ওজন সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগেন তাদের ওজনও কমতে সহায়তয়া করে।

১২. দুধে রয়েছে নানা ধরণের ভিটামিন, মিনারেলস ও নানা পুষ্টিগুণ। প্রতিদিন দুধ পান করলে আপনার ত্বকে এর বেশ ভালো প্রভাব পড়বে। ত্বক হয় উঠবে নরম, কোমল ও মসৃণ। 

দুধের অন্য একটি বড় গুণ হচ্ছে এটি মানসিক চাপ দূর করতে সহায়তা করে। দুধ পানে আপনার ঘুমের উদ্রেক হবে, যার ফলে মস্তিষ্ক শিথিল হয়ে যাবে এবং মানসিক চাপ দূর হয়ে যাবে।

১৩. দুধের অন্য একটি বড় গুণ হচ্ছে এটি মানসিক চাপ দূর করতে সহায়তা করে। দুধ পানে আপনার ঘুমের উদ্রেক হবে, যার ফলে মস্তিষ্ক শিথিল হয়ে যাবে এবং মানসিক চাপ দূর হয়ে যাবে। সারাদিনের মানসিক চাপ দূর করে  শান্তির নিদ্রা চাইলে প্রতিদিন রাতে এক গ্লাস কুসুম গরম দুধ পান করা উচিৎ।

১৪. অনেক ধরণের খাবার আমরা খাই যার ফলে আমাদের অ্যাসিডিটি হয় এবং বুক প্রচণ্ড জ্বালা পোড়া করে। এর সবচাইতে সহজ সমাধান হচ্ছে দুধ পান করা। দুধ পানে পাকস্থলী ঠাণ্ডা হয় এবং বুক জ্বালা পোড়ার সমস্যা দূর হয়।

১৫.  দুধে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি, ভিটামিন, মিনারেল রয়েছে যা আপনার দেহের ইমিউন সিস্টেম উন্নত করবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে। এটি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং রক্ত পরিষ্কারের পাশাপাশি রক্ত সঞ্চালনও বৃদ্ধি করে।

১৬. বেশ কিছু ক্ষেত্রে প্রমাণিত হয়েছে যে পর্যাপ্ত দুধ পান মলাশয় ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক হিসেবে কাজ করে । মলাশয়ের ক্যান্সারের  বিরুদ্ধে ক্যালসিয়াম ও দুধে স্বাভাবিকভাবে সৃষ্ট ‘Conjugated Linoleic Acid (CLA)’ প্রতিরোধমূলক কাজ করে থাকে বলে বিবেচিত হয় । যারা নিয়মিত দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ করেন, তাদের মধ্যে মলাশয়ের ক্যান্সার হবার হার কম থাকে।

১৭. নিয়মিত দুধ খেলে আর্টারিওস্ক্যারোসিসে আক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচা যেতে পারে। এ রোগ হলে আমাদের আর্টারিগুলোর দেয়াল পুরু, শক্ত ও অস্থিতিস্থাপক হয়ে যায়। এতে শরীরের রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয় এবং হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।

১৮. দুধ খেলে আপনার দৃষ্টিশক্তি বাড়বে।

১৯. কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থাকলে রাতে ঘুমানোর আগে প্রতিদিন এক গ্লাস গরম দুধ পান করুন।

২০.  সুস্থসবল মেধাবী নাগরিক হতে হলে প্রতিদিন কমপক্ষে ২৫০ মিলি দুধ খান এবং আপনার বাচ্চাকেও খেতে দিন। এটি আপনার বাচ্চার পড়াশোনায় মনোযোগ, চলাফেরার শক্তি আর খেলাধুলার উদ্দীপনা জোগাবে।


Source: Khaas Food