Author Topic: খাদ্যের মাধ্যমে ডিপ্রেশন দূর হয় কিভাবে?  (Read 2659 times)

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

Mr. Rasel

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 516
  • Gender: Male
    • View Profile
মানসিক সমস্যা গুলো খুবই জটিল হয়ে থাকে, আমাদের মস্তিষ্কও খুবই জটিল। আমাদের মানসিক অবস্থা নির্ভর করে মস্তিষ্কের সুস্থতার উপর। আমরা প্রতিদিন যেসব খাবার খাই তা দেহের বিভিন্ন অংশের স্বাভাবিকতা বজায় রাখে। আমাদের মস্তিষ্কের প্রচুর পরিমাণে শক্তির প্রয়োজন হয় তার বিভিন্ন কাজ চালানোর জন্য। আমরা প্রতিদিন যে খাবার খাই তা থেকে মস্তিষ্ক এই শক্তি পেয়ে থাকে। খাদ্য থেকে পাওয়া পুষ্টি উপাদান সমূহ আমাদের নার্ভাস সিস্টেম সচল রাখার জন্য শক্তি প্রদান করে। পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রয়োজনীয় পুষ্টিমানের খাদ্য গ্রহন করা না হলে আমাদের মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। তখন অপুষ্টি থেকেও মানসিক বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হয়।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কম পুষ্টি সম্পন্ন প্রসেসড খাদ্য বেশি গ্রহণ করা ব্যক্তিদের ডিপ্রেশনে ভুগার সম্ভাবনা প্রায় ৬০%. এক্ষেত্রে কিছু তথ্য মাথায় রাখা উচিত –

* সঠিক পুষ্টি আমাদের দেহের বিভিন্ন ইনফেকশন দূর করে। মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগ ও ইনফেকশন রোধ করে মস্তিষ্ক সুস্থ রাখে।
* খাদ্যের পুষ্টি উপাদান সমূহ আমাদের অন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখে, মস্তিষ্ক সচল রাখে, দেহের সকল কাজ সঠিক ভাবে সম্পন্ন করার জন্য বড় ভূমিকা পালন করে। দেহ সুস্থ সবল থাকলে ডিপ্রেশনের ঝুঁকি কম থাকে।
* আমরা পুষ্টিকর খাদ্য থেকে যে পুষ্টি পাই তা আমাদের দেহের কোষে প্রয়োজনীয় শক্তি যোগায়, আমাদের নার্ভাস সিস্টেম সচল রাখে।

ওমেগা ৩ যুক্ত খাবার বেশি করে খেতে হবে যেমন বিভিন্ন মাছের তেল, বাদাম, ডিম, বিভিন্ন ধরণের বীজ ইত্যাদি। এগুলো সুস্থ ব্রেন ডেভেলপমেন্ট করতে কাজ করে। ভিটামিন বি ও ডি জাতীয় খাবার যেমন মাংস, সবুজ শাকসবজি, সামুদ্রিক খাবার, হোল গ্রেন ফুড, বিভিন্ন ধরণের ডাল মস্তিষ্কের জন্য অনেক উপকারী। সেলেনিয়াম ও ট্রিপ্টোফ্যান সমৃদ্ধ খাবার যেমন আখরোট, ডিম, গরুর মাংস, দুগ্ধজাত খাবার খেতে হবে।

                     
অমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড যুক্ত খাবার

ডিপ্রেশন রোধ করার মতো কিছু খাবার –

১. গাড় সবুজ শাকসবজি: একটি ইনফেকশন রোধী উপাদান সমৃদ্ধ খাদ্য।
২. আখরোট: মেজাজ ভালো করার উপাদান ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড আছে এতে।
৩. মাশরুম: রক্তের অতিরিক্ত সুগার কমাতে সাহায্য করে।
৪. বিভিন্ন ধরনের বেরি যেমন স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, ক্রেন বেরি, রেস্পবেরি ইত্যাদি, এরা কোষ এর ক্ষয়ক্ষতি পূরণের এন্টিঅক্সিডেন্ট আছে।
৫. এভোকাডো: এর অলেয়িক এসিড দেয় ব্রেন পাওয়ার।
৬. পেঁয়াজ: ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান এলিয়াম সমৃদ্ধ।
৭. টমেটো: ডিপ্রেশন প্রতিরোধক।
৮. বিভিন্ন বিন বা সীমের বীচি: মেজাজের তারতম্য কমায়।

ডিপ্রেশন প্রতিরোধে খাবারের কিছু গাইডলাইন –


১. হোল গ্রেন অর্থাৎ বেশি আঁশযুক্ত খাদ্য খেতে হবে। যতটা সম্ভব টাটকা খাবার খেতে হবে, বাজারে পাওয়া প্রসেসড ফুড বর্জন করতে হবে।

২. ডিপ্রেশন রোধে দুগ্ধজাত খাবার খুবই উপকারী যেমন দই বা ইয়োগার্ট। এগুলো রেগুলার খেতে হবে। বিভিন্ন গাঁজানো বা ফারমেন্টেড খাদ্যও এক্ষেত্রে অনেক উপকারী।

৩. ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন ডি, এন্টিঅক্সিডেন্ট এসব জাতীয় খাদ্য যেহেতু ডিপ্রেশন রোধী তাই এদের বেশি খেতে হবে। তবে প্রাকৃতিক ভাবে পাওয়া খাদ্য থেকে এদের গ্রহণ করলে সর্বোত্তম হয়। সাপ্লিমেন্টস গ্রহণ করার আগে চেষ্টা করতে হবে যতটুকু সম্ভব দৈনিক আহারের মাধ্যমে এগুলো গ্রহণ করা। প্রতিদিন রোদে বের হয়ে ঘুরাঘুরি করলে, মুক্ত বাতাসে হাঁটলে ডিপ্রেশনের মাত্রা কমে আসে।

৪. কিছু খাদ্য ডিপ্রেশন বাড়ায় যেমন এলকোহল, ক্যাফেইন বা কফি, অতিরিক্ত চিনি। ক্যাফেইন ঘুম কমিয়ে দেয়, অস্থিরতা বাড়িয়ে দেয়। এলকোহল আমাদের নার্ভাস সিস্টেমের জন্য ক্ষতিকর যা ডিপ্রেশন তৈরি করে। অতিরিক্ত চিনি আমাদের দেহের ব্লাড সুগার বাড়িয়ে দেয় যা বিভিন্ন ইনফ্ল্যামেশন থেকে সুস্থ হতে ব্যাঘাত ঘটায়। এই খাবার গুলো অবশ্যই বর্জন করতে হবে।

ডিপ্রেশন একটি জটিল মানসিক অবস্থা, এটি সম্পূর্ণ নির্মূল করতে হলে অনেক গুলো ধাপ পার হতে হয়। চিকিৎসার সাথে সাথে এই ধরণের খাদ্যাভ্যাস তৈরি করা গেলে ডিপ্রেশন দূর করা অনেকটাই সহজ হয়। আর যারা ডিপ্রেশনের ঝুঁকিতে আছেন তারা আগে থেকেই সতর্ক হয়ে এই খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনধারা নিয়ে চললে ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হবেন না। শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা একে অপরের উপর নির্ভরশীল, শরীর সুস্থ থাকলে মনও ভালো থাকবে।

Source: পুষ্টি বার্তা