এ রকম বাক্য নিশ্চয়ই শুনেছেন, “ব্যবহার কর, নয়তো ক্ষয়ে যাবে” অথবা “ফেলে রাখলে, মরচে পড়ে”। এ কথাগুলো মানুষের শরীরের জন্য অনেক বেশি প্রযোজ্য। আপনি যদি আপনার শরীর ব্যবহার না করেন, তবে তার ক্ষয় হবেই। আপনার পেশি হয়ে পড়বে থলথলে, নিস্তেজ ও দুর্বল। আপনার শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন হার্ট, ফুসফুস, লিভার এগুলো ঠিকঠাক মত কাজ করবে না। আপনার শরীরের জয়েন্ট গুলো হয়ে পড়বে অনমনীয় এবং তা খুব সহজেই ইনজুরিতে পড়বে। বলা হয়ে থাকে, নিষ্ক্রিয়তা বা শরীর কাজে না লাগানো অনেকটা ধূমপানের মতোই তীব্র ক্ষতিকর।
কী কী কারণে ব্যায়াম এত গুরুত্বপূর্ণ ……• রোগ প্রতিরোধ করেঃরোগ মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু। এমন কোন মানুষ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া অসম্ভব, যিনি কোন প্রকার রোগে ভোগেন নি। মানুষ হিসেবে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রচেষ্টা বোধ হয়, রোগ মুক্ত থাকা। আর এই রোগ প্রতিরোধেই সাহায্য করে ব্যায়াম। নিয়মিত ব্যায়াম খুব প্রয়োজনীয় শারীরিক ফিটনেস ও ভালো স্বাস্থ্যের জন্য। এটা বড় বড় রোগ যেমন হৃদরোগ, ক্যান্সার, উচ্চ রক্ত চাপ, ডায়াবেটিকস ও অন্যান্য রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমায়। ব্যায়াম আপনার চেহারার আবেদন বাড়াতে এবং দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া ঠেকাতে সাহায্য করবে। তাই সুস্থ থাকতে ব্যায়ামের কোন বিকল্প নেই।
• সহনশক্তি (Stamina) বাড়ায়ঃব্যায়াম মানসিক শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। আপনি যখন ব্যায়াম করেন, তখন আপনার শরীর শক্তি ব্যয় করে। আপনার শরীর যদি স্থূল, চর্বিযুক্ত ও কায়িক পরিশ্রমহীন হয়ে থাকে, তাহলে আপনি অল্প শারীরিক শ্রমেই অধিক ক্লান্ত হয়ে পড়বেন। আপনি যখন নিয়মিত ব্যায়াম করবেন, তখন কম ক্লান্তিতেই অধিক পরিমাণে কাজ করতে পারবেন। ভয় পাওয়া কঠিন কাজটিও দেখবেন, এক তুড়িতেই করতে পারছেন।
• ব্যায়াম মনকে চাঙ্গা করেঃব্যায়ামের মাধ্যমে নানা রকম রাসায়নিক পদার্থ মস্তিষ্ক হতে নির্গত হয়। এসব রাসায়নিক উপাদান চিত্ত প্রফুল্ল করে এবং শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তির পাশাপাশি চেহারায় লাবণ্য ও ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়। যিনি নিয়মিত ব্যায়াম করেন তাকে বিষন্নতা কিংবা হতাশা সহজে হ্রাস করতে পারে না।
• শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করেঃসুস্থ থাকার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল শরীরের বাড়তি ওজন ও মেদ ঝরিয়ে ফেলা। কিন্তু বাড়তি ওজন কমাতে ব্যায়ামের কোন বিকল্প নেই। শারীরিক চর্চা করলে ক্যালরি খরচ হয়। এভাবে আমরা যতই ব্যায়াম করবো ততই আমাদের ক্যালরী খরচ হবে এবং যার ফলে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
• শরীরের নমনীয়তা (Flexibility) বাড়ায়ঃআমাদের শরীরকে ফ্লেক্সিবল করতে ব্যায়ামের কোন জুড়ি নেই। আমাদের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও মাংসপেশি নমনীয় হওয়াটা জরুরী। তাহলে শরীরের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে। ছোটখাটো আঘাতে মচকে বা ভেঙ্গে যাবার সম্ভাবনা কম থাকে। তাই নিয়মিত ব্যায়াম করুন ও ভালো থাকুন।
• শরীরকে করে শক্তিশালীঃমাংসপেশীর গাঁথুনি যার যত ভালো, সে ততো বেশি শক্তিশালী। ব্যায়াম প্রতিটি পেশীকে আলাদা আলাদা ভাবে গড়ে তোলে। পুরো ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে আপনার উপর। কেননা আপনি ঠিক যেভাবে আপানার পেশীকে শক্তিশালী করতে চান, সেভাবেই করতে পারবেন।
• কর্মস্পৃহা বাড়ায়ঃআপনি যদি শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ না থাকেন, তাহলে কাজের প্রতি আপনার অনীহা তৈরি হবেই। ব্যায়ামের ফলে আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে অতিরিক্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবারাহ হয়। এর ফলে সমস্ত শরীরে একটি সুস্থ প্রাণস্পন্দন ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। এটা আমাদের কর্মস্পৃহা বাড়ায়।
• সুনিদ্রায় সহায়কঃআপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন যে, আপনি যখন ক্লান্ত থাকেন, তখন খুব গাঢ় ও গভীর ঘুম হয়। তাই যাদের ঘুমের সমস্যা আছে তাদের জন্য ব্যায়াম অত্যন্ত উপকারী। ব্যায়াম অনিদ্রা দুর করে, অতি নিদ্রা হ্রাস করে। অবশ্য একেবারে ঘুমানোর আগে ব্যায়াম করা উচিত নয়। কারণ ব্যায়ামের পরে মানসিক চাঙা ভাবের কারণে ঘুম আসা বিলম্বিত হতে পারে। তাই নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিত ব্যায়াম করুন।