Author Topic: হিটস্ট্রোক কী? গরমে রোজা রেখে সুস্থ থাকার উপায়  (Read 1917 times)

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

Dr. Lamia Tahsin Kamal Purnata

  • Newbie
  • *
  • Posts: 21
  • Gender: Female
    • View Profile



গ্রীষ্মের প্রথম দিকে তেমন গরম অনুভূত না হলেও জ্যৈষ্ঠের সাথেই শুরু হয়েছে দাবদাহ। ইতোমধ্যে রাজধানীসহ সারা দেশেই পারদ ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে। আবহাওয়া অফিস থেকেও জানানো হয়েছে আগামী দুই দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। পূর্বাভাস বলছে চলমান দাবদাহ আরো চার দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এমন গরমে দীর্ঘ সময় রোদে থাকলে হিটস্ট্রোক হয়ে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে লোকজন। শিশু ও বয়স্কদের জন্য এই ঝুঁকি আরো বেশি।


গরম থেকে রক্ষা পেতে যা করবেন

১. পাতলা ও হালকা রঙের পোশাক পরুন

২. বাড়ির বাইরে থাকার সময় সরাসরি রোদ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন

৩. শরীরে পানিশূন্যতা এড়াতে অতিরিক্ত পানি ও শরবত পান করতে হবে

৪. স্যালাইন পানিতে থাকা সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও চিনি শরীর সজীব রাখতে বিশেষভাবে কার্যকর। দীর্ঘ সময় গরমে থাকলে স্যালাইন পান করুন।

৫. গ্রীষ্মকালীন ফল দিয়ে তৈরি তাজা জুস পান করুন

৬. মাংস এড়িয়ে বেশি করে ফল ও সবজী খান

৭. প্রস্রাবের রঙ খেয়াল করুন। প্রস্রাবের গাঢ় রঙ পানি স্বল্পতার লক্ষণ।

৮. সব সময় ছাতা বা টুপি সাথে রাখুন

৯. ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন

১০. চেষ্টা করুন যেন দিনে কম বাইরে যেতে হয়






 

হিটস্ট্রোক কী

ঢাকার আইসিডিডিআর’বি হাসপাতালের চিকিৎসক ড. আলিয়া নাহীদ জানান, বাইরে তাপমাত্রা যাই হোক না কেন আমাদের শরীর স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাপমাত্রা প্রায় স্থির রাখতে সক্ষম। কিন্তু অতিরিক্ত গরমে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কাজ করা বন্ধ করে দিলে তখন তাকে হিট স্ট্রোক বলা হয়। এর ফলে ঘাম বন্ধ হয়ে গিয়ে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বাড়তে শুরু করে।

হিটস্ট্রোকের লক্ষণ

১. শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে যাওয়া

২. গরমে অচেতন হয়ে যাওয়

৩. মাথা ঘোরা

৪. তীব্র মাথা ব্যথা

৫. ঘাম কমে যাওয়া

৬. ত্বক গরম ও শুষ্ক হয়ে যাওয়া

৭. শারীরিক দুর্বলতা ও পেশিতে টান অনুভব করা

৮. বমি হওয়া

৯. হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া

১০. শ্বাস কষ্ট

১১. মানসিক বিভ্রম

১২. খিঁচুনি








হিটস্ট্রোকের প্রাথমিক চিকিৎসা

কারো হিটস্ট্রোক হলে বা অচেতন হয়ে গেলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে যে কাজগুলো করতে হবে তা হলো:

১. হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে নিয়ে যেতে হবে। রোগীর শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় কাপড় খুলে ফেলতে হবে।

২. রোগীর শরীরে বাতাস করতে হবে। কাপড় ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে গা মুছে ফেলতে হবে।

৩. শরীরের তাপমাত্রা কমাতে বগল, ঘাড়, পিঠ ও কুচকিতে আইসপ্যাক ব্যবহার করতে হবে।




দেখতে দেখতে একটি বছর চলে গেল। বছর ঘুরে আবার রমজান সামনে এসেছে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা রোজা রাখবে।

তবে অন্যান্য বছরের চেয়ে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে এবার রমজানে। এবার রোজার বেশিরভাগটাই পড়েছে গরমের ভিতর।

তীব্র গরম এবং তাপদাহে অনেকেই রোজা রাখতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে এবং কিছু অভ্যাস গড়ে তুললে তীব্র গরমেও রোজা রেখে সুস্থ থাকা যায়।

বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদের মতে বছরের অন্যান্য সময়টাতে আমাদের খাবার হজম করতে পরিপাকতন্ত্র ব্যস্ত থাকে।

কিন্তু রোজার এই এক মাস পরিপাকতন্ত্র কিছুটা বিশ্রাম পায়। ফলে রোজা রাখা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।

আন্তর্জাতিক গবেষণায় উঠে এসেছে যে মানব শরীরের পরিপাকতন্ত্রের একটি বিষয় রয়েছে যেটিকে অটোফেজি নামে অভিহিত করা হয়।

বিশিষ্ট জাপানিস বিজ্ঞানী গবেষণা করে প্রমাণ করেন যে রোজা রাখা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

এটি আমাদের শরীরকে পুনর্জীবিত করে এবং পরিপাকতন্ত্রকে একটি শক্তিশালী প্রক্রিয়ায় পরিণত করে। তাই রোজা রাখা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।

আবার ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে রোজার গুরুত্ব অপরিসীম।

তবে অনেকেই তীব্র গরমে রোজা থাকতে ভয় পান। অনেকের ডিহাইড্রশন, পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন অসুবিধা যেমন বদহজম, পেট ফাঁপা, পেটের ভিতর অস্বস্তি ইত্যাদি দেখা যায়।

এর কারণ হিসেবে অসাস্থ্যকর খাবার মূলত দায়ী।

 সারাদিন রোজা রেখে মুসল্লিরা বেশিরভাগ সময় অস্বাস্থ্যকর ভাজাপোড়া খাওয়াই অভ্যস্ত। যদিও মুখে স্বাদ আনে কিন্তু এগুলো রয়েছে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি।

আসুন জেনে নেই রোজার সময় কিভাবে খাদ্য গ্রহণ করলে নিজেকে সুস্থ রাখা সম্ভব।







পর্যাপ্ত পানি পান
রমজানে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় পানি শূন্যতা। কারণ আমরা সেহরি এবং ইফতারের পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করি না।

সারাদিন পানি না খাওয়ার ফলে শরীরে একটি পানি শূন্যতা তৈরি হয়। এটি এড়াতে সেহরি এবং ইফতারের প্রচুর পরিমাণ পানি খেতে হবে।

মনে রাখতে হবে পানির বিকল্প নেই।



স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহন
সেহরি এবং ইফতারের স্বাস্থ্যকর খাবার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সাধারণত আমরা বেগুনি আলুর চপ ডিমের চপ ইত্যাদি ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার খেয়ে থাকি ইফতারে।

এগুলোর পরিবর্তে দই চিড়া কলা সবজি ফলমূল ইত্যাদি খাবার বেশি বেশি খেতে হবে। অস্বাস্থ্যকর ভাজাপোড়া খাওয়ার ফলে আমাদের পরিপাকতন্ত্রের অনেক ক্ষতি সাধন হয়।

তাই রমজানে ইফতার এবং সেহেরী হওয়া উচিত স্বাস্থ্যকর। না হলে আমাদের অজান্তেই শরীরে  বাসা বাঁধতে পারে পরিপাকতন্ত্র জনিত রোগ ব্যাধি।



সঠিক সময় খাবার গ্রহন
সারাদিন রোজা রাখার পরে বেশিরভাগ মানুষ ইফতারের অনেক বেশি পরিমাণ খেয়ে ফেলে। ফলশ্রুতিতে শরীরে খাদ্য গ্রহণের প্রবণতা কমে যায় এবং বেশিরভাগ মানুষ রাতের খাবার গ্রহণ করে না।

বরং একবারে সেহের ী করে থাকে। এটি অত্যন্ত খারাপ অভ্যাস যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর।

রাতের খাবার হিসাবে কিছু না কিছু অবশ্যই খেতে হবে সুস্থ থাকতে হলে।



পর্যাপ্ত ঘুম
রমজানে যুবক বয়সেই ছেলেমেয়েরা বেশিরভাগ রাতে না ঘুমিয়ে একবারে সেহরি করে ঘুমাতে চায়। এটি অত্যন্ত ক্ষতি করে একটি অভ্যাস।

রমজানে সব থেকে ভালো প্র্যাকটিস হলো রাতের খাবার গ্রহণ করে ১১ টার ভিতরে শুয়ে পড়া এবং ভোরবেলা উঠে সেহরি খাওয়া।

এতে আমাদের শরীর যেমন বিশ্রাম পায় তেমন পায় সারাদিনে রোজা রাখার শক্তি। সারারাত না ঘুমিয়ে একবারে সেহরি করলে শরীরের এনার্জি কমে যায়।

ফলে আস্তে আস্তে কমতে থাকে ইমিউনো শক্তি।



পরিমিত খাওয়া
সারাদিন রোজা রেখে বেশিরভাগ মানুষ ইফতারে একবারে অনেক বেশি খেয়ে ফেলে। সুস্থ থাকতে হলে ইফতারের অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে খাবার গ্রহণ করতে হবে।

এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে অবশ্যই খাবার চিবিয়ে খেতে হবে ভালোমতো। ধীরে ধীরে চিবিয়ে ফেলে খাবার যেমন ভালোভাবে হজম হয় তেমনি একবারে বেশি খাওয়া হয় না।

তাই পরিমিত খাবার গ্রহণ করতে চাইলে আস্তে আস্তে ভালোমতো চিবিয়ে খেতে হবে।



শরীর ঠান্ডা রাখতে সরবত
প্রচন্ড গরমে রোজা রাখলে শরীরে পানির চাহিদা বৃদ্ধি পায় এবং শরীরে হজমের ভারসাম্যতা নষ্ট হয়। এক্ষেত্রে ইসবগুল তোকমা দানা বেলের শরবত বা লেবুর শরবত অত্যন্ত উপদেয়।

এগুলো একদিকে শরীরে পানির ভারসাম্যতা রক্ষা করে অন্যদিকে শরীরকে ঠান্ডা করে।

এগুলোর আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো শরীরকে চাঙ্গা করে তোলা।

সারাদিন রোজা রাখার পরে এক গ্লাস ঠান্ডা শরবত দিতে পারে অনাবিল প্রশান্তি এবং বিভিন্ন শারীরিক উপকারিতা।







রোদ থেকে সুরক্ষা

রোজার সময় যেহেতু আমরা পানি বা পানি জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে পারি না সারাদিন। তাই যারা পরিশ্রমের কাজ করেন তাদের উচিত যতটা সম্ভব রোদ থেকে নিজেকে দূরে রাখা।

বাইরে গেলে অবশ্যই ছাতা নিয়ে যাওয়া।







মৌসুমি ফল
গরমের সময় ইফতারিতে যতটা সম্ভব মৌসুমী ফল রাখার চেষ্টা করা উচিত। বিশেষ করে গরমের সময় বেল তরমুজ বাঙ্গি ইত্যাদি মৌসুমী ফলের যোগান থাকে বাজারে।

মৌসুমী ফলগুলো একদিকে যেমন পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে অন্যদিকে শরীর কে ঠান্ডা রাখে।

তাই এ সময় যতটা সম্ভব মৌসুমী ফল খাওয়া উচিত।













Source: amarbanglahub.com/
« Last Edit: April 15, 2023, 11:12:25 AM by Dr. Lamia Tahsin Kamal Purnata »