দাঁতের ব্যথা একটা যন্ত্রণাদায়ক অবস্থার সৃষ্টি করে। আমাদের অনেকেই বিভিন্ন সময়ে দাঁত ব্যথায় ভুগে থাকি। দাঁত ব্যথার অনূভুতি ভিন্ন ধরনের হতে পারে কারন ব্যথার প্রকৃতি ব্যথার কারণ ও স্থানের উপর নির্ভর করে।
আবার দাঁত ব্যথা হালকা,মাঝারী থেকে তীব্র হতে পারে। কখনো কখনো এই ব্যথা এতই তীব্র হয় যে দিনের কাজ ও রতের ঘুম পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়। মুখের ও দাঁতের ব্যথা বা যেকোন সমস্যায় অবশ্যই একজন দাঁতের ডাক্তার দেখানো উচিৎ। দাঁতের ডাক্তার না দেখানো পর্যন্ত দাঁতের ব্যথা উপশম করতে নিচের যেকোন একটি পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
দাঁতের ব্যথার কারণবিভিন্ন কারণে দাঁত ব্যথা হয়। যেমনঃ দাঁত ক্ষয় হয়ে যাওয়া, দাঁতের মধ্যে খাদ্য আটকে থাকা, দাঁত অপসারণ, মাড়িতে ফোঁড়া, দাঁত বা মাড়িতে ইনফেকশন ইত্যাদি কারনে দাঁত ব্যথা হয়।
তবে দাঁত সবচেয়ে কমন কারন হলো দাঁতের নিচের স্নায়ু অর্থাৎ মাড়িতে জ্বালাপোড়া করা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাড়িতে জীবাণুর সংক্রমনের কারণে এই সমস্যাটি হয়। দাঁতের আরো একটি কমন সমস্যা হলো দাঁত ক্ষয় হয়ে যাওয়া। দাঁত ক্ষয় হতে হতে মাড়িতে সাথে লেগে যায়। আবার কারো কারো ঠান্ডা বা গরমের প্রতি সংবেদনশীলতা থাকতে পারে অর্থাৎ দাঁতে ঠান্ডা বা গরম লাগলে অসহ্য খারাপ লাগে, কখনো কখনো ব্যথা শুরু হয়।এই সমস্যাগুলি সমাধান করতে একজন ডেনটিস্ট এর (দাঁতের ডাক্তার) সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
যাইহোক, কতগুলো ঘরোয়া প্রতিকার রয়েছে যেগুলো প্রয়োগ করে আমরা দাঁতের ব্যথা কমানোর পাশাপাশি দাঁত ও মাড়ির ইনফেকশন রোধ করতে সাহায্যে করে।
আসুন দাঁত ব্যথার ঘরোয়া প্রতিকারগুলো জেনে নেই।
মাথা উঁচু রাখা:দাঁতের ব্যথায় কখনো মাথা নিচু করে রাখবেন না, এতে ব্যথা আরো বেড়ে যায়। একটু খেয়াল করলে দেখবেন যে ঘুমানোর সময় বা শুয়ে থাকলে ব্যথা বৃদ্ধি পায়। এর কারণ হলো ঘুমানোর সময় আমাদের শরীর সমতল অবস্থায় থাকে, তাই এই সময়ে আমাদের মাথার রক্তচাপ বেড়ে যায়।
এজন্য ঘুমানোর সময় আমাদের দাঁত ব্যথাও বেড়ে যায়। ঘুমানোর সময় দাঁত ব্যথা কমাতে যথাসম্ভব উঁচু বালিশে ঘুমাতে হবে।
লবণ পানির মিশ্রণ দিয়ে গার্গল: দাঁতের ব্যথা কমানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হল লবণ পানির মিশ্রণ দিয়ে কুলি করা। কুলি করার ফলে দাঁতের মধ্যে আটকে থাকা খাবার সরে যায়।
যেহেতু লবণ একটি প্রাকৃতিক জীবানু নাশক তাই ব্যথা কমানোর পাশাপাশি এটি সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
আধা চা-চামচ লবণ এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে গার্গল করলে দাঁত ব্যথায় ভালো ফল পাওয়া যায়।
হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড দিয়ে গার্গল: হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড দাঁতের যে কোন জীবানু সংক্রমণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকরী। তাই হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড পানির সাথে মিশিয়ে গার্গল করলে দাঁতের ব্যথা কমবে পাশাপাশি সংক্রমণও দূর হবে। তবে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড কখনো গিলে ফেলবেন না।
রসুন পেস্ট: রসুন ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধে করে পাশাপাশি দাঁতের ব্যথাও উপশম করে। রসুন পিষে পেস্ট বানিয়ে এই পেস্ট ব্যথা যুক্ত দাঁতে লাগালে ব্যথা অনেকটা উপশম হবে। এছাড়াও রসুনের রসে তুলা ভিজিয়ে লাগানো যায়।
লবঙ্গ তেল: রসুন ও লবঙ্গ দুটোই মশলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। রসুন ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে ভালো কাজ করে আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি। লবঙ্গও অ্যান্টিসেপটিক গুন রয়েছে। তাই দাঁতের ইনফেকশন রোধে ও ব্যথা কমাতে লবঙ্গ ব্যবহার করা যেতে পারে।
দাঁত ব্যথা উপশম করতে লবঙ্গ পিষে এর তেল বা রস বের করতে হবে। এই রস বা তেলে তুলা ভিজিয়ে ব্যথাযুক্ত দাঁতে লাগালে ব্যথা অনেকটা উপশম হবে।
তাছাড়া এক গ্লাস পানিতে কয়েক ফোঁটা লবঙ্গের রস মিশিয়ে মাউথওয়াশ বানিয়ে গার্গল করলে মুখের জীবাণু ধ্বংস হবে এবং দাঁত ব্যথাও উপশম হবে।
পেয়ারা পাতা: পেয়ারা পাতায় প্রদাহরোধী ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা দাঁত ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। পেয়ারা পাতা পানির সাথে মিশিয়ে সিদ্ধ করে, সেই পানি দিয়ে কুলি করলে দাঁত ব্যথায় ভালো ফল পাওয়া যায়।
এজন্য একজন ডেনটিস্টের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। ডাক্তার নির্দেশ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করা উচিৎ নয়। দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করলে না না ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বিঃ দ্রঃ এই ঘরোয়া প্রতিকারের মাধ্যমে শুধু সাময়িক ভাবে স্বস্তি পাওয়া যায়। দাঁতের সমস্যা স্থায়ীভাবে দূর করতে একজন ডেনটিস্টের সাথে যোগাযোগ করুন। দাঁতের সুরক্ষা ও যত্ন নিশ্চিত করতে তার নির্দেশ মেনে চলুন।
লেখক: সুশান্ত কুমার ঘোষ, ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ, ডিআইইউ মেডিকেল সেন্টার