Author Topic: গলা ব্যথা হলে করণীয় কি  (Read 2127 times)

0 Members and 2 Guests are viewing this topic.

Dr. Sushanta Kumar Ghose

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 363
  • Gender: Male
    • View Profile
গলা ব্যথা হলে করণীয় কি
« on: January 29, 2023, 08:52:26 AM »


গলা ব্যথা হলে করণীয় কি?

ছোট বড় আমাদের সবার গলা ব্যথা হয়ে থাকে।  সেটি হতে পারে ঠান্ডা জ্বর,  সর্দি কাশি এবং গলা ফুলে যাওয়ার কারণে।  সাধারণত বেশিরভাগ মানুষ গলা ব্যাথা হলে বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে ঔষধ সেবন করে থাকে এতে  ফলাফল খুব খারাপ হয়ে থাকে। ঔষধের খারাপ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে বাঁচার জন্য অবশ্যই আমরা ঘরোয়া উপায়ে গলা ব্যথা সারানোর চেষ্টা করব।  ঘরোয়া উপায়ে গলা ব্যথা  থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করতে পারে এতে কোন খারাপ ফলাফল হবে না বরং ভালোই হবে।

গলা ব্যথার কারনঃ-

১) থাইরয়েডঃ-  থাইরয়েড সমস্যার কারণে  গলা ফুলে যায় এবং গলা ব্যথা হয়ে থাকে।

২) ভাইরাস:-  অনেক সময় দেখা যায় ভাইরাসজনিত কারণে গলা ব্যথা হয়ে থাকে।

৩)  টনসিলঃ-  যাদের ঠান্ডা সমস্যা আছে সাধারণত তাদের টনসিলের সমস্যা হয় এবং গলা ব্যথা হয়ে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় টনসিল ইনফেকশন হয়ে থাকে।

 ৪) গলগন্ডঃ- অনেক সময় গলা ব্যথা  গলগন্ড রোগের কারণে হয়ে থাকে।

৫)  ঠান্ডা সমস্যাঃ-  বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায় ঠান্ডা সমস্যার কারণে গলা ব্যথা হয়ে থাকে।

৬) ব্যাকটেরিয়াঃ-  আমাদের মুখের লালার সাথে কোন ব্যাকটেরিয়া গলা প্রবেশ করলে তখন গলা ব্যথা হতে পারে।

৭)  এলার্জিঃ- অনেক মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায়  শরীরে প্রচুর পরিমাণে এলার্জি থাকার কারণে গলা ব্যথা হয়ে থাকে।

৮) ধূমপানঃ-  অতিরিক্ত মাত্রায় ধুমপান করলে গলা ব্যথা হয়ে থাকে অথবা হতে পারে।

৯) তামাকজাদ দ্রব্যঃ- তামাকজাত দ্রব্য  সেবনের কারণে গলা পাতা হতে পারে এমনকি ক্যান্সারও হতে পারে।

১০) আয়োডিনঃ-  আয়োডিনের অভাবে গলা ব্যথা হয়ে থাকে ।গলা ব্যাথার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে মানুষের শরীরে আয়োজনের অভাব।



গলা ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসাঃ-


গরম পানিঃ-আমাদের মধ্যে যাদের ঠান্ডা সমস্যা আছে তারা অবশ্যই গরম পানি ব্যবহার  করবো।  কারণ ঠান্ডা পানি ব্যবহার করলে ঠান্ডা জনিত সমস্যা বেড়ে যায় যেহেতু ঠান্ডার কারণে গলা ব্যাথা হয়ে থাকে অতএব আমরা সবসময় গরম পানি পান করার চেষ্টা করব এবং ব্যবহার করতে চেষ্টা করব এতে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।


আদাঃ- আদা গলা ব্যাথা সারাতে খুব কার্যকরী একটি উপাদান।  আদার খোসা ছাড়িয়ে  টুকরো করে সারাক্ষণ আমরা চিবতে পারি তাছাড়া আদা ভালো করে থেঁতলে নিয়ে  পানির সাথে মিক্স করে পাঁচ মিনিট ধরে ফুটিয়ে কুসুম গরম পান করতে পারি এভাবে পান করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।


দারচিনিঃ- আমরা সকলেই চিনি দারচিনি আমাদের রান্নায় ব্যবহৃত মসলা।  কিন্তু এটি গলা ব্যাথা সারাতে বেশ ভালো ভূমিকা পালন করে থাকে। আমরা দারচিনিকে গরম পানিতে ফুটিয়ে ওই ফুটানো পানি কুসুম গরম পান করতে পারি এতে খুব সহজে গলা পাতা সেরে যাবে।


তেজপাতাঃ-  তেজপাতা কেউ আমরা মসলা হিসেবে চিনি। কিন্তু তেজপাতা গলা ব্যাথা সারাতে খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। তেজপাতা পানির সাথে ভালো করে ফুটিয়ে নিয়ে ওই পানি কুসুম গরম   পান করলে খুব দ্রুত গলা ব্যথা সেরে যাবে। যেহেতু তেজপাতায় কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই অতএব ভয়ের কোন কারণ নেই।


মেথিঃ-আমরা সকলেই জানি মেথির দানে আছে অনেক স্বাস্থ্য উপাদান। মেথির দানা সেবনে অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। বিভিন্ন রোগের পাশাপাশি  মেথি দানা গলা ব্যাথা সারাতে খুব কার্যকরী একটি উপাদান। নির্ভয়ে আমরা মেথি দানা ব্যবহার করতে পারি । মেথি দানার সঠিক ব্যবহারে গলা ব্যথা থেকে মুক্তি মিলবে।


গোলমরিচঃ- গোলমরিচ শুধু রান্নার ব্যবহৃত হয় না রান্নার পাশাপাশি আমাদের শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি দিতে গুড় মরিচ খুব ভালো কাজ করে। গোল মরিচ নিয়মিত খেলে বিশেষ করে ঠান্ডা জনিত সমস্যা যেমনঃ সর্দি , কাশি , গলা ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তাই আমরা গোলমরিচ নিয়মিত ব্যবহার করার চেষ্টা করব।


রসুনঃ-  রসুনকে আমরা রান্না ব্যবহৃত মসলা হিসেবে চিনি। কিন্তু অনেকেই এটা জানে না যে গলা ব্যথা সারাতে রসুন খুব ভালো কাজ করে। নিয়মিত রসুনের ব্যবহার করলে অবশ্যই গলা ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।  বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত রসুন ব্যবহারের ফলে ঠান্ডা জনিত সমস্যা যেমন সর্দি-কাশি জ্বর এবং গলা ব্যথা থেকে খুব দ্রুত মুক্তি পাওয়া যায়।

বেকিং সোডাঃ-  গলা ব্যাথা সারাতে বেকিং সোডার কার্যকারিতা অনেক বেশি।  বেকিং সোডা আছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা ব্যাকটেরিয়াকে খুব দ্রুত ধ্বংস করে দেয়। তাই আমরা কুসুম গরম পানিতে  সামান্য পরিমাণ বেকিং  সোডা এবং লবণ মিশিয়ে  প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার গড়গড়া করতে পারি।  গরম পানি,  লবণ এবং বেকিং সোডা ব্যবহারের ফলে খুব দ্রুত গলা ব্যথা সেরে যাবে।

মধুঃ-  আমরা সকলেই জানি, মধু আমাদের শরীরের জন্য খুব ভালো একটি উপকারী উপাদান।  গলা ব্যথার জন্য চায়ের সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারি অথবা কুসুম গরম পানিতে মধু মিশিয়ে পান করতে পারে এটা খুব দ্রুত গলা ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে এবং মধুতে থাকা বিভিন্ন  পুষ্টি উপাদান শরীরের যে কোন ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। গলা ব্যাথা হলে মধু ব্যবহার করলে খুব দ্রুত গলার ভিতরে ক্ষতগুলো শুকিয়ে যাবে এবং গলা ব্যথা ঠান্ডা জ্বর কাশি থেকে খুব দ্রুত আরোগ্য লাভ করা যাবে।

হলুদ ও দুধঃ-   গলা ব্যথা কিংবা বিভিন্ন রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধে হলুদ দুধের কোন জুড়ি নেই। মানুষের শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের জন্য হলুদ দুধের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না।  কারণ হলুদে থাকা বিভিন্ন উপকরণগুলো আমাদের শরীরে এন্টিবায়োটিক এর কাজ করে।  যার ফলে বিভিন্ন সমস্যা থেকে খুব দ্রুত মুক্তি মেলে। আমরা সকলেই জানি দুধে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম,  প্রোটিন , এবং ভিটামিন ডি যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তাই বিশেষজ্ঞরা বলে থাকে গলা ব্যথা কিংবা ঠান্ডা জনিত কোন সমস্যার জন্য হলুদ দুধের কোন বিকল্প নেই।

গলা ব্যাথা হলে কি খাওয়া যাবেনাঃ-

গরম  কিংবা ঠান্ডার সময় সাধারণত আমাদের গলা ব্যথা হয়ে থাকে।  আমরা সাধারণত মনে করি শীতের সময় গলা  ব্যথা বেশি হয়ে থাকে।  এই গলা ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য যে খাবারগুলো আমরা এড়িয়ে চলব অথবা   খাওয়া যাবে না।


# মসলা জনিত খাবারঃ- যখন আমাদের ঠান্ডা লাগে অথবা শরীরটা একটু  খারাপ লাগে তখন আমরা মসলা জাতীয় জিনিস খেতে বেশি পছন্দ করি। কিন্তু আমরা জানি না মসলা জাতীয় খাবার গলা ব্যথার জন্য খুবই ক্ষতিকর। গলা ব্যথার সময় মসলা জাতীয় খাবার খেলে গলা জ্বালাপোড়া  করে। ব্যাথা করে এবং খুশখুস করে।  সেজন্য আমরা চাট মসলা,  চটপটি মসলা,  বা আনারদানার মসলা।  বিশেষ করে টক জাতীয় যে মসলাগুলো হয় সেগুলো খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে।  তাহলে দেখা যাবে গলা বেশি ব্যথা করবে না।  এবং তাড়াতাড়ি সুস্থ  হওয়া যাবে।

#দুধ জাতীয় খাবারঃ- দুগ্ধ জাতীয় খাবার বলতে বুঝায় দুধ,  দই এবং পনির। আমাদের যখন ঠান্ডা লাগে তখন  দই খেলে দেখা যাবে যে ঠান্ডা আরো বুকে বসে গেছে যার ফলে আরো বেশি সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।  সেই কারণে যখন ঠান্ডা লাগবে জ্বর গলা ব্যথা কাশি এগুলো হলে দই খাওয়া যাবেনা। শরীর সুস্থ হওয়ার পরে নরমাল ভাবে আমরা দই খেতে পারব ।   ঠান্ডা লাগা অবস্থায় দুধ এবং পনির খেলে ইনফ্লামেশন আরো অনেক বেশি বেড়ে যায় ।  সেজন্য আমাদের যখন ঠান্ডা লাগবে,  কাশি হচ্ছে, গলা ব্যথা হচ্ছে এবং যখন নাক বন্ধ হয়ে যায়। এই সময় গুলোতে আমরা দুগ্ধ জাতীয় খাবার থেকে একটু দূরে থাকবো তাহলে দেখা যায় খুব দ্রুত সুস্থ হওয়া যাবে।

টক জাতীয় খাবারঃ-আমাদের অনেক সময় মনে হয় যে গলা ব্যথা করছে অথবা শরীরটা ভালো লাগছে না টক খেলে হয়তো শরীরটা একটু ভালো লাগবে। কিন্তু আসলে সেটা নয় ।  এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ধারণাটাই আমাদের ভুল।  গলা ব্যথার সময় টক জাতীয় খাবার খেলে গলা আরো বেশি ব্যথা করে এবং গলা জ্বালাপোড়া করে। যার ফলে আমরা খুব দ্রুত সুস্থ হতে পারি না। খুব দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য ওই সময়টা একটু টক জাতীয় খাবার থেকে দূরে  থাকবো।

#তেলে ভাজা খাবারঃ-তেলে ভাজা খাবার বলতে বোঝায় আমাদের শরীর ভালো না লাগলে  বাইরের যে ভাজা খাবার গুলো আমরা পছন্দ করি।আমরা সকলেই জানি এই খাবারগুলো আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর।  কিন্তু মুখরোচক বলে আমরা পছন্দ করে থাকি।  যেমনঃ ফ্রেঞ্চ ফ্রাই,  পুরি,  সিঙ্গারা,  চিকেন ফ্রাই ইত্যাদি এগুলো আমাদের গলা ব্যথার সময় খুবই ক্ষতি করে থাকে। সেজন্য গলা ব্যথার সময় এ ধরনের খাবারগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে তাহলে খুব দ্রুত গলা ব্যথা সেরে যাবে।

#চিনি জাতীয় খাবারঃ-ছোট বড় সকলে আমরা চিনি জাতীয়  খাবারকে বেশি পছন্দ করি।  কিন্তু আমরা এটা জানি না চিনি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়।  গলা ব্যথার সময় চিনি দিয়ে চা খাওয়া চলবে না। চিনি দিয়ে চা খেলে শরীর সুস্থ হওয়ার  পরিবর্তে শরীরকে দুর্বল করে ।

#কোলড্রিংস জাতীয় খাবারঃ-কোল্ড ড্রিংকস জাতীয় খাবার খেতে আমাদের সকলের ভালো লাগে।  কিন্তু আমরা সকলেই জানি কোল্ড ড্রিংকস আমাদের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই গলা ব্যথার সময় অবশ্যই কোল্ড ড্রিংকস থেকে দূরে থাকতে হবে। কোল্ড  ড্রিংস খেলে এসিডের সমস্যা বেড়ে যায় এবং গলা জ্বালাপোড়া করে যার ফলে গলা ব্যথার সময় আরো বেশি সমস্যা সৃষ্টি করে।

#আইসক্রিমঃ-আইসক্রিম আমরা সকলেই খুব বেশি পছন্দ করি।  গরমের সময় আইসক্রিমের তো কোন জবাব নেই।  কিন্তু আইসক্রিম খেলে গলা ব্যথা সমস্যা বেড়ে যায়। গলা ব্যথার পাশাপাশি   ঠান্ডা,   সর্দি,  এবং কাশির মতো নানা ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে।  গলা ব্যথা থেকে বাঁচার জন্য অবশ্যই আইসক্রিম খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে। এতে দেখা যাবে খুব দ্রুত গলা ব্যথা ভালো হয়ে গেছে


এই সকল নিয়মগুলো মেনে চলার পরেও যদি গলা ব্যথা না কমে তবে অবশ্যই ডাক্তার এর পরামর্শ নিতে হবে।


লেখক: সুশান্ত কুমার ঘোষ, ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ, ডিআইইউ মেডিকেল সেন্টার