ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে তাপমাত্রারও পরিবর্তন ঘটে। হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তনের কারণে আমরা সর্দি ও কাশির মত বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় ভুগি। শরীর যখন প্রয়োজনের অতিরিক্ত মিউকাস তৈরি করে ঠিক তখনই অতিরিক্ত মিউকাস চেষ্টা করে নাক দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার।
সাধারণত আমরা যাকে বলি নাক দিয়ে পানি পরা।
বিভিন্ন কারণে নাক বন্ধ হতে পারে যেমন সাইনোসাইটিসের কারনে আমাদের নাক বন্ধ থাকতে পারে, আমাদের নাকের ভেতরে যে মধ্যভাগ রয়েছে তাকে বলা হয় নেজাল সেপটাম সেটি বাঁকা থাকতে পারে,যাদের নাকের হাড় বাঁকা সেটি সাধারণ কোন চিকিৎসার মাধ্যমে ঠিক হয় না তার জন্য প্রয়োজন হয় একটি ছোট সার্জারি।
নাক বন্ধ হলে করণীয় কিছু টিপসঃ- ১) বেশি করে পানি পান করতে হবে।
২)আমাদের সব সময় নাক ঝেরে ফেলতে হবে কখনো সর্দি আটকে রাখা যাবেনা।
৩) সব সময় স্যালাইন ড্রপ দিয়ে নাক পরিষ্কার করতে হবে।
৪) সুপ বা গরম চা পান করতে হবে।
৫) এলার্জি জনিত কারণে যদি নাক বন্ধ হয় তবে এলার্জির ওষুধ খেতে হবে।
৬) আমরা চাইলে গরম পানি দিয়ে গড় গড়া করতে পারি।
৭) বিভিন্ন ধরনের মেনথল জাতীয় মলম ব্যবহার করা যেতে পারে।
৮ )কপালে এবং নাকে গরম সেক দেওয়া যেতে পারে।
৯)সব সময় অনেক বেশি গরম পানি দিয়ে গোসল করা উচিত না।
নাক বন্ধ হলে করনীয় কিঃ-মেনথলঃ- মেনথল নাক বন্ধ হওয়ার সমস্যা থেকে খুব দ্রুত মুক্তি দেয়। গরম পানিতে অল্প মেন্থল দিয়ে মাথার উপর তোয়ালে দিয়ে ঢেকে ভাপ নিতে হবে।এর ফলে নাক বন্ধের সমস্যা থেকে অনেকটা মুক্তি পাওয়া যাবে।
লেবুঃ- নাক বন্ধ ও ইনফেকশন জনিত সমস্যায় লেবু খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
এক গ্লাস পানি গরম করে এর সাথে সামান্য পরিমাণ মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে খেতে হবে এই মিশ্রন খেলে নাক বন্ধ থেকে খুব সহজে মুক্তি পাওয়া যাবে।
তেজপাতাঃ- তেজপাতা অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি থাকে যা সর্দি কাশির মত বিভিন্ন ধরনের ঠান্ডা জনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
বিশেষ করে নাক বন্ধ থেকে মুক্তি দিতে এটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ১.৫ গ্লাস পানিতে ৬-৭ টি তেজপাতা নিয়ে 15 মিনিট ধরে জাল দিয়ে নিতে হবে। এরপর সেই পানি পান করতে হবে এর ফলে খুব সহজেই নাক বন্ধের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
রসুনঃ- রসুনে আন্টি-ইনফ্লামেটরি ও অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল নামক দুটি শর্ম থাকে। এক কাপ পানিতে দুই-তিনটি রোশন থেতলে নিতে হবে এবং দশ-পনের মিনিট ধরে জ্বাল দিতে হবে এরপর সেই কুসুম গরম পানি পান করতে হবে। এটি খুব সহজেই নাক বন্ধ থেকে মুক্তি দিবে।
আদাঃ- অল্প আদা ছোট ছোট টুকরো করে কেটে একটু লবণ দিয়ে চিবিয়ে আদার রস খেতে হবে। এভাবে আদার রস খেলে খুব সহজেই নাক বন্ধ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
স্টিম ইনহেলঃ- দিনে দুই থেকে তিনবার স্টিম ইনহেল নেওয়া যেতে পারে এবং এর পাশাপাশি অ্যান্টি অ্যালার্জিক ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। এর মাধ্যমে আমাদের শ্বাসনালীর সমস্ত বাধা পরিষ্কার হয়ে যায় এবং খুব সহজেই নাক বন্ধ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
ঘুমানোর সময় সতর্কতাঃ–ঘুমানোর সময় ২-৩ টি বালিশের উপর মাথা রেখে ঘুমালে কিছুটা আরাম পাওয়া যেতে পারে। এতে নাক বন্ধ কিছুটা হলেও ঠিক হবে।
পানিঃ- সব সময় অনেক বেশি গরম পানি দিয়ে গোসল করা উচিত না। আমাদের উচিত মাথায় ঠান্ডা পানি ঢালা এর ফলে বন্ধ নাক কিছুটা হলেও ঠিক হবে।
মাক্সঃ- বাইরে বের হওয়ার সময় মাক্স পড়ে বের হওয়া যেতে পারে। যাতে বাইরের ধুলোবালি ও ঠান্ডা হওয়া সরাসরি নাকের ভেতর প্রবেশ না করে।
ঝাল মরিচের গুড়াঃ- ঝাল মরিচের গুঁড়ায় থাকে ক্যাপসাইসিন যা সাইনাসকে পরিষ্কার ও শ্বাসকার্যকে সহজ করে। প্রথমে এক কাপ পরিমান পানি ফুটিয়ে নিতে হবে এবং এর সাথে ১/৪ চা চামচ মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে নিয়ে সেটি গরম গরম খেয়ে নিতে হবে এতে খুব সহজেই নাক বন্ধ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
পুদিনার চাঃ- পুদিনার চা হলো বন্ধ নাক থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি অসাধারণ ও সুস্বাদু উপায়। পুদিনার চায়ের প্রশান্তিদায়ক ও উষ্ণ উপাদান খুব দ্রুত আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস সহজ করতে পারে।
তরল জাতীয় খাবারঃ- পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও তরল উপাদান পান করতে হবে। যদি পারা যায় তবে কুসুম গরম পানি পান করা যেতে পারে। গরম পানি সাধারনত বন্ধ সাইনাসকে খুলতে সাহায্য করে তাই আমরা সহজেই নাক বন্ধ থেকে মুক্তি পেতে পারি ।
উপরিউক্ত পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করার পরেও যদি বন্ধ নাক না ঠিক হয় তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। লেখক: সুশান্ত কুমার ঘোষ, ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ, ডিআইইউ মেডিকেল সেন্টার