Author Topic: ব্যাকপেইন কি ও এ থেকে মুক্তির উপায়  (Read 1654 times)

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

Dr. Sushanta Kumar Ghose

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 363
  • Gender: Male
    • View Profile


ঘাড় থেকে শুরু করে কোমরের নিচ পর্যন্ত শরীরের অনেকগুলো হাড় এক হয়ে মেরুদণ্ড সৃষ্টি করেছে। এ মেরুদণ্ডই হচ্ছে স্পাইন। দেহের হাড় ও জয়েন্টকে সব সময় সচল ও কর্মক্ষম রাখতে হলে সঠিক নিয়মে প্রতিদিন ব্যায়াম করতে হবে। প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলাও জরুরি।

কোমর ব্যথা বা লো ব্যাকপেইন

লো ব্যাকপেইন অনেকেরই নিত্যদিনের সমস্যা। ঋতু পবির্তনের সময়ে ব্যথা যেন আরও বাড়ে। ব্যথার কারণ কিন্তু লাইফস্টাইল। বিশেষত যাদের দীর্ঘক্ষণ চেয়ারে বসে কাজ করতে হয়। মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসার কথা কারোই মনে থাকে না। ছুটি শেষে অফিসে ফিরে আবার দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ-এভাবে বসার সঙ্গে লো ব্যাকপেইন কিন্তু ইন্টারলিঙ্কড। মেরুদণ্ডের একটা নির্দিষ্ট আকার রয়েছে। ঠিকভাবে না বসলে আকার বজায় থাকে না। অ্যালাইনমেন্ট নষ্ট হয়। বেশিক্ষণ সামনে ঝুঁকে বসলে কোমরের ডিস্কে চাপ পড়ে বেশি। তার থেকেও এ ধরনের ব্যথা হয়। ব্যথার দ্বিতীয় কারণ হলো, বেশিক্ষণ একটানা বসে থাকার ফলে হিপের পেশির সংকোচন। এতেও মেরুদণ্ডের অ্যালাইনমেন্ট নষ্ট হয়। ফলে কোমরে ব্যথা হয়। অনেকেই হিল পরে অনেকক্ষণ হাঁটাহাঁটি করেন। তা থেকেই গোড়ালি বা কোমরে ব্যথা তৈরি হয়। আপনি যখনই হিল পরছেন, কোমর সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে দাঁড়ালে কোমরে যে চাপ পড়ে, হিল পরার কারণে তার চেয়ে অনেক বেশি চাপ পড়ে। ঋতু পরিবর্তনের সময়ে তাপমাত্রার তারতম্য হয় বলে মাসল টাইটনেস বাড়ে। এই সময়ে দীর্ঘক্ষণ শুয়ে থাকার পরে ঘুম থেকে উঠলেও কোমরে ব্যথা হতে পারে। কিছুক্ষণ চলাফেরার পরে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক হলে সে ব্যথা চলে যায়।

ব্যথার উপশম কীভাবে হবে

প্রথমেই বসার ভঙ্গি ঠিক করতে হবে। দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করলে কাঠের চেয়ারে বসুন। দ্বিতীয় হলো স্পাইনাল স্টেবিলাইজেশন। অর্থাৎ মেরুদণ্ডকে সুস্থ রাখার জন্য কিছু ব্যায়াম। দেখা গিয়েছে, লো ব্যাকপেইন শতকরা নব্বই শতাংশ লোকের ক্ষেত্রেই ঝুঁকে কাজ করার কারণে হয়। এ জন্য দরকার এক্সটেনশন, মেরুদণ্ডকে প্রসারিত করার ব্যায়াম।

বার্ড ডগ : দু’হাতের তালু ও হাঁটু মাটিতে রেখে মেরুদণ্ড টানটান রাখুন। ডান হাত ও বাঁ পা প্রসারিত করে ধরে রাখুন। দশ সেকেন্ড করে ধরে রাখতে হবে। দু’দিকেই অর্থাৎ ডান হাত, বাঁ পা এবং বাঁ হাত, ডান পা, ছয় থেকে আট বার করতে হবে।

ব্রিজ : মেঝেতে সোজা হয়ে শুয়ে পড়ুন। দুটি হাঁটু নব্বই ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ভাঁজ করে কোমরটাকে শূন্যে ধরে রাখুন। বুক এবং হাঁটু যেন এক রেখায় থাকে। দশ সেকেন্ড করে ধরে রাখতে হবে। ছয় থেকে আটবার এক্সারসাইজটি করতে হবে।

সাইড প্ল্যাঙ্ক : পাশাপাশি কনুই আর পায়ের পাতায় ভর দিয়ে শরীরটাকে শূন্যে তোলা। ডান কনুই ও ডান পায়ের পাতায় ভর রেখে শরীরকে শূন্যে দশ সেকেন্ড তুলে রাখুন। এভাবে বাঁ দিকেও করুন। তিন থেকে চার বার এক্সারসাইজ করুন।

ডেড বাগ : মাটিতে শুয়ে পড়ুন। দুটি হাঁটু শূন্যে ভাঁজ করে কোমরের ওপরে তুলুন। দুটি হাত একসঙ্গে সোজা করে তুলে রাখুন। এবার সাইকেল চালানোর ভঙ্গিতে ডান হাত ও বাঁ পা এবং বাঁ হাত ও ডান পা প্রসারিত করুন। পর্যায়ক্রমে ডান পা ও বাঁ হাত, বাঁ পা ও ডান হাত প্রসারিত করুন। দু’দিকেই বারো বার করে করুন। এ ব্যায়ামটি অবশ্য ডান হাত ও ডান পা প্রসারিত করেও করতে পারেন। তিন থেকে চারবার করে রিপিট করুন। এক্সারসাইজ বাছার সময়ে দেখতে হবে, জীবনযাত্রার ধরন এবং কী কারণে ব্যথা হচ্ছে। এ কটি এক্সারসাইজ কিন্তু যারা বসে কাজ করেন, তাদের জন্য খুব উপকারী। আবার দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থাকার জন্য যাদের কোমরে ব্যথা, তাদের জন্য ফ্লেকশন বেসড এক্সারসাইজ উপকারী, যাতে মেরুদণ্ডের সামনের দিকের পেশির জোর বাড়ে। ব্যথা কমানোর জন্য যে রকম জোর বাড়ানো দরকার, তেমনই অ্যালাইনমেন্ট ঠিক রাখার জন্যও পেশির স্ট্রেচিং দরকার। মেরুদণ্ডের স্টেবিলিটি এক্সারসাইজের সঙ্গেই যে পেশি সংকুচিত হয়েছে, তা দীর্ঘায়িত করার জন্য স্ট্রেচ করতে হবে। তবেই মেরুদণ্ডের অ্যালাইনমেন্ট ঠিক থাকবে। তাই কোর এক্সারসাইজের সঙ্গে স্ট্রেচও করতে হবে।

হ্যামস্ট্রিংয়ের স্ট্রেচ : হাঁটুর পেছনের পেশির (হ্যামস্ট্রিং) স্ট্রেচ করতে মাটিতে বসে এক পা ভাঁজ করে, অন্য পা সোজা করে সামনের দিকে ঝুঁকুন। পায়ের পাতা স্পর্শ করার চেষ্টা করুন। মেরুদণ্ড যেন টানটান থাকে। দীর্ঘক্ষণ কাজ করলে চেয়ারে বসেও স্ট্রেচটি করতে পারেন। একটি চেয়ারে বসে পা সামনের দিকে টানটান করে রাখুন। ডান পা ও বাঁ পা এভাবে দশ সেকেন্ড করে ধরে রাখুন। দু’বার করে রিপিট করুন।

গ্লুট (হিপের পেশির) স্ট্রেচ : চেয়ারে বসে ইংরেজি ফোরের মতো করে পা রেখে বসুন, (যেভাবে চেয়ারের ওপর পা তুলে বসে গল্প করি) সামনের দিকে ঝুঁকুন। দশ সেকেন্ড করে দু’তিন বার করুন।

নিয়মিত ব্যায়াম শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে, তাই নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যস গড়ে তুলুন।



 লেখক: সুশান্ত কুমার ঘোষ, ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ, ডিআইইউ মেডিকেল সেন্টার