Author Topic: প্লাস্টিক সার্জারী তে সাধারণত কি ধরণের অপারেশন করা হয়?  (Read 1951 times)

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

Dr. Sushanta Kumar Ghose

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 363
  • Gender: Male
    • View Profile


প্লাস্টিক সার্জারী কি:
প্লাস্টিক সার্জারী হল এক ধরনের সার্জারী বা অস্ত্রপাচার প্রক্রিয়া। এটি সার্জারীতে বহুল প্রচলিত পদ্ধতি। প্লাস্টিক সার্জারী তে মূলত যে ধরণের  রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয় / যে সকল সেবা দেওয়া হয় তার একটি  সংক্ষিপ্ত তালিকা এখানে দেওয়া হলো।

জন্মগত ত্রুটিঃ
১.জন্মগত ঠোঁট ও তালুকাটা

২. জন্মগত  জোড়া আঙুল

৩. জন্মগত অতিরিক্ত আঙুল

৪. জন্মগত শরীরের নানাবিধ বিকৃতি।

শরীরের বিভিন্ন রকম ক্ষত।
১. আঘাত জনিত ক্ষত।
২.সড়ক দূর্ঘটনা জনিত ক্ষত:
সড়ক দূর্ঘটনার ফলে অনেক সময় এমন গভীর ক্ষত তৈরি হয় যার ফলে হাত ও পায়ের অনেক গুরুত্বপূর্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেমন হাড় (Bones) , রক্ত নালি (Blood vessels), স্নায়ু (Nerves), রগ (Tendons) এর উপর হতে চামড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এইসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে  অনাবৃত করে ফেলে (Exposed vital structures) যা plastic surgery র মাধ্যমে আবৃত করা না গেলে ঐ হাত অথবা পা কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে অথবা বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ঐ হাত অথবা পা কেটে ফেলার প্রয়োজন দেখা দেয়।

Plastic Surgery র মাধ্যমে এক স্থান হতে প্রয়োজন অনুযায়ী Tissue কেটে নিয়ে (Flap or Skin graft) ওই ক্ষতিগ্রস্ত স্থান ভরাট করা হয়।

৩. ইনফেকশন (Infection) জনিত ক্ষত :
যে কোনও অপারেশনের পর ক্ষত স্থানে ইনফেকশন বা জীবাণু সংক্রমণ একটি নৈমিত্তিক ঘটনা। কখনও কখনও এই সংক্রমিত  জীবানু এমন গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করে যা ঔষধের মাধ্যম নিরাময় করা কঠিন হয়ে পড়ে। তখন plastic surgery র মাধ্যমে ওই ক্ষত ভরাট করা সম্ভব।

৪.দীর্ঘমেয়াদী ক্ষত বা অনিরাময়যোগ্য ক্ষত (Non Healing Ulcer) :
অনেক সময় আমাদের শরীরে এমন অনেক ক্ষত সৃষ্টি হয় যা দিনের পর দিন dressing করে অথবা বিভিন্ন রকম চিকিৎসা করেও সারতে চায় না। অনেক রোগী আসেন মাসের পর মাস চিকিৎসা করেও পায়ের একটি ক্ষত সারাতে ব্যর্থ হচ্ছেন।

এই ধরণের ক্ষত কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলে Non Healing Ulcer. আর Plastic Surgery র পরিভাষায় একে বলে Problem Wound. এই ধরনের ক্ষত অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপারেশনের মাধ্যমে চামড়া প্রতিস্থাপন করে (Flap Surgery অথবা Skin grafting) নিরাময় করা যায় ।

৫. ডায়াবেটিক রোগীর হাত ও পায়ের ক্ষত: (Diabetic foot or Hand infection) :
 যারা দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন এবং যাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে যা সহজে নিরাময়যোগ্য হয় না। এটা commonly দেখা যায় পায়ে যাকে আমরা বলি DIABETIC FOOT.

ডায়াবেটিস রোগীদের এই নানাবিধ ক্ষত অধিকাংশ ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে plastic surgery করতে পারলে নিরাময় করা যায়।

৬. প্রেসার বা বেড সোর (Pressure sore):
সাধারণতঃ পক্ষাঘাত অথবা প্যারালাইসিস (Paralysis), স্বাভাবিক চলাচল বা নড়াচড়া করতে অক্ষম রোগীদের অথবা দীর্ঘদিন বিছানায় শয্যাশায়ী রোগীদের শরীরে যে ক্ষত সৃষ্টি হয় তাকে প্রচলিত ভাষায় বলে “বেড সোর “ বা শয্যাক্ষত।

এই ধরণের ক্ষত Plastic Surgery র মাধ্যমে সঠিক সময়ে চিকিৎসা করা সম্ভব হলে ভালো করা যায়।


বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারঃ
- মুখমন্ডলের ক্যান্সার
- গালের ক্যান্সার
- ঠোঁটের ক্যান্সার
- ত্বকের ক্যান্সার
- স্তনের ক্যান্সার


হাতের সার্জারি (HAND SURGERY):
- হাতের এবং আঙুলের বিভিন্ন ধরনের টিউমার
- হাতের নানাবিধ ইনজুরি অথবা আঘাত জনিত ক্ষত
- হাতের রগ কেটে যাওয়া (Tendon Injury)
- হাতের পোড়া অথবা হাতে বিদ্যুতায়িত হওয়া অথবা বৈদ্যুতিক কারেন্টে হাত পুড়ে যাওয়া (HAND BURN)
- আঘাত, দূর্ঘটনা অথবা ইনফেকশন (INFECTION) জনিত কারণে সৃষ্ট হাতের ক্ষত
- আঘাত অথবা দূর্ঘটনায় সৃষ্ট আঙুলের মাথার ক্ষত (Finger tip Injury)
- কারখানায় কর্মরত অবস্থায় মেশিনে দূর্ঘটনা জনিত হাতের ক্ষত (Machinary Injuries of Hand)
- হাতের আঙুলের হাড় ভেঙে যাওয়া (Hand fractures)


পোড়া রোগী (BURNS)ঃ
- বিভিন্ন ধরনের পোড়া যেমন: আগুনে পোড়া, গরম পানিতে পোড়া, বৈদ্যুতিক কারেন্টে পোড়া সহ সকল ধরনের পোড়া রোগী।
- পুরাতন পুড়ে যাওয়া রোগীদের যে কোনও সমস্যা যেমন:
- পুড়ে যাওয়া স্থান কুঁকড়ে যাওয়া (Post Burn Scar Contracture)
- পুড়ে যাওয়া স্থান ফুলে যাওয়া ((Post Burn Hypertrophic Scar)
- পুড়ে যাওয়া অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিকৃতি অথবা হাত, পা, আঙুল, কনুই, গলা, ঘাড় ইত্যাদি বাঁকা হয়ে যাওয়া
- পুড়ে যাওয়া ক্ষতে পুনরায় ঘা হওয়া (Marjolin’s Ulcer)


ব্রেস্ট সার্জারী (BREAST SURGERY):
- স্তনের টিউমার (Breast tumour )
- স্তনের ক্যান্সার (Breast Cancer)
- স্তনের আকার ও আকৃতি পরিবর্তন
- আকারে ছোট স্তন বড়ো করা (Augmentation Mammoplasty)
- আকারে অস্বাভাবিক বড় স্তন ছোট করা (Reduction Mammoplasty)
- ব্রেস্ট ফিডিং (Brest feeding) অথবা বয়সের কারণে ঝুলে যাওয়া স্তনের স্বাভাবিক আকৃতি ফিরিয়ে আনা (Mastopaxy)


এনেসথেটিক সার্জারী (AESTHETIC SURGERY):
অনেকের কাছেই Plastic Surgery র এই শাখা cosmetic surgery নামে পরিচিত কারণ এই শাখা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সৌন্দর্য বর্ধন নিয়ে কাজ করে।

AESTHETIC SURGERY তে যে সকল কাজ করা হয় তার তালিকা লিখে শেষ করা কঠিন। এখানে অল্প কিছু বিষয়ের নাম উল্লেখ করা হলো

-বডি শেপিং: (BODY SHAPING)
-শরীরের বিভিন্ন স্থানের অবাঞ্ছিত চর্বি কেটে ফেলে দিয়ে শারীরিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা। সাধারণত দুই ধরনের অপারেশন এর মাধ্যমে এটা করা হয় :
-LIPOSUCTION (লাইপোসাকশন): শরীরের বিভিন্ন অংশ হতে অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি অপসারণ।
-ABDOMINOPLASTY (অ্যবডুমিনোপ্লাস্টি): তলপেটের মেদযুক্ত ও ঝুলে যাওয়া চামড়া অপসারণ।
-RHINOPLASTY (নাকের সৌন্দর্য বর্ধন)
-BLEPHAROPLASTY (চোখের সৌন্দর্য বর্ধন)
-SCAR REVISION (শরীরের যে কোনও কাটা দাগের সৌন্দর্য বর্ধন)




লেখক: সুশান্ত কুমার ঘোষ, ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ, ডিআইইউ মেডিকেল সেন্টার