Author Topic: স্তনের ক্যান্সার | উপসর্গ, ঝুঁকি ও চিকিৎসা নিয়ে কতটা জানেন?  (Read 5045 times)

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

Mr. Rasel

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 516
  • Gender: Male
    • View Profile
স্তনের ক্যান্সার ও আমাদের অবস্থান
নারীত্বের প্রতীক এই বিশেষ অঙ্গটি। আমাদের সৌন্দর্য ও মাতৃত্ত্বের জন্য একটি অপরিহার্য বিষয়।  এই একদম দরকারী অঙ্গটি নিয়ে আমাদের সচেতন হওয়া দরকার খুব। স্তনে অনেক ধরনের রোগ হতে পারে। এইসব রোগের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্নক আর ভয়ঙ্কর হচ্ছে স্তন ক্যান্সার। বিশ্বের মহিলাদের যেসব ক্যান্সারের কারণে মৃত্যুহার সবচেয় বেশি তার মধ্যে স্তন ক্যান্সার একেবারে উপরের দিকে। WHO এর মতে আমাদের দেশে জরায়ুমুখের ক্যান্সার পরেই মহিলাদের মৃত্যুহার বেশি হলো স্তন ক্যান্সারের কারণে। অথচ এই ক্যান্সার একদম প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করা সম্ভব হলে একেবারে নিরাময় করা সম্ভব। আমাদের সামাজিক অবস্থার কারণে বা লজ্জার কারণে মহিলারা সহজে স্তনের সমস্যা হলেও ডাক্তারের কাছে আসে না আর তাই প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ে না। একেবারে খারাপ অবস্থায় আসে। তখন হয়ত জীবন সংকটাপন্ন হয়। তাই আসুন  জেনে নেই এই প্রাণঘাতী রোগ সম্পর্কে।

স্তনের ক্যান্সার কী?
স্তনের ক্যান্সার এক ধরনের বিশেষ ক্যান্সার যা স্তন কোষ থেকে উৎপন্ন হয়। স্তন ক্যানসার পুরুষদেরও হতে পারে। তবে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের হওয়ার সম্ভাবনা ১০০ গুণ। মেয়েদের স্তন চর্বি, সংযোজক কলা এবং হাজার গ্রন্থি দিয়ে তৈরি।এইসব কোষ প্রয়োজন অনুযায়ী বিভাজন হয়। যাকে মাইটোসিস বলা হয়। এই মাইটোসিসের অনিয়ন্ত্রিত বিভাজনের কারণে ক্যান্সার কোষের সৃষ্টি হয়।

স্তন ক্যান্সারের উপসর্গ কী ও নিজে কিভাবে বুঝবো?
আগেই বলা হয়েছে যে, স্তন ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে তা সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। তাই ২০ বছরের পর থেকে প্রত্যেক মেয়ের উচিত মাসিক হওয়ার ২য় সপ্তাহে প্রতি মাসে নিজের স্তন পরীক্ষা করা। গোসল করার সময়ে বা সুবিধামত সময়ে আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজের স্তন ভালোভাবে দেখা। দেখে বোঝার চেষ্টা করা যে কোন অস্বাভাবিকতা আছে কিনা। এরপর ছুঁয়ে দেখা। যদি এ সময়ে নিচের কোন একটি উপসর্গ দেখা যায় যেমন-
১. এক বা দুটো স্তনেই এক বা একাধিক গুটি, চাকা বা গোটা কিছু অনুভব করা যা বিভিন্ন আকার ও আকৃতির হতে পারে। ৮০% স্তন ক্যান্সার চাকা বা গোটা পাওয়ার পর ধরা পড়ে।
২. যে কোন একটি বা উভয় স্তনের আকার আকৃতির পরিবর্তন। যেমন যে কোন একটি স্তন বড় ও নিচে ঝুলে পড়া অন্যটির তুলনায়।
৩. নিপল বা স্তনের বোঁটার আকার,আকৃতি পরিবর্তন হওয়া। বোঁটা স্তনের ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া।
৪. স্তনের বোঁটা থেকে বিভিন্ন নিঃসরণ বা কষ ক্ষরণ হওয়া।
৫. স্তনের চামড়া কুঁচকে যাওয়া।
৬. স্তনে বিভিন্ন লাল দাগ অথবা ঘা টাইপের কিছু হওয়া।
৭. স্তনের বোঁটার চারদিকে র্যাশ টাইপের কিছু হওয়া ।
৮. বগলের নিচে চাকা বা কোন ফোলাভাব থাকা।
৯. ব্যথা হলে, তবে অধিকাংশ ব্রেস্ট বা স্তন ক্যানসারে ব্যথা থাকে না । মাত্র ১.৭ শতাংশ ক্ষেত্রে স্তন ক্যানসারে ব্যথা হতে পারে ।

কাদের স্তনের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি?
১) সাধারণত বেশি বয়স্ক মহিলাদের এই ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ৫০বছর বয়সের বেশি মহিলাদের এই ক্যান্সার বেশি হয়।
২) যাদের খুব অল্প বয়সে মাসিক শুরু হয় এবং যাদের মাসিক খুব দেরিতে শেষ হয়, অর্থাত্ মেনোপোজ দেরিতে হয়।
৩) যাদের বংশে খুব নিকট আত্নীয়দের যেমন – মা বা বোনদের স্তন, গর্ভাশয় বা কোলন ক্যান্সার হয় তাদেরও ৭% সম্ভাবনা থাকে স্তন ক্যান্সার হওয়ার।
৪) খুব দেরিতে প্রথম সন্তান হলে। যেমন- ৩৫ এর পর যাদের প্রথম সন্তান হয়।
৫) আগে থেকে স্তনে বিনাইন টিউমার থাকলে।
৬) মেনোপোজের পর হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নিলে।
৭) এক স্তনে হলে অন্য স্তনে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৮) অতিরিক্ত মোটা হলে ও অ্যালকোহল পান করলে।
৯) কোন তেজস্ক্রিয় রশ্নিতে এক্সপোজার হলে। যেমন – রেডিয়েশন থেরাপি বা কেমোথেরাপি নেয়ার ইতিহাস থাকলে ।
১০) যারা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান না তাদের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
১১) অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করলে ,পরিশ্রম করার অভ্যাস না করলে।

কখন ডাক্তারের কাছে যাব?
যে উপসর্গগুলো এখানে উল্লেখ করা হলো সেগুলোর কোনটি দেখা দেয়ার সাথে সাথেই আমাদের উচিত হবে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের কাছে যাওয়া।

স্তন ক্যান্সারের জন্য কী ধরণের পরীক্ষা করেন ডাক্তাররা?
১) ডাক্তার রোগীর ইতিহাস নিয়ে এবং রোগীকে বসিয়ে ও শুইয়ে পরীক্ষা করেন। সন্দেহজনক কিছু মনে করলে এটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠান কিছু পরীক্ষা করার জন্য।
২) ল্যাবরেটরিতে ইমেজিং করা হয়। বিভিন্ন ধরনের ইমেজিং আছে। যেমন-আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ম্যামোগ্রাফি, এমআরআই, এমআর। সাধারণত বয়স ৪০ বছরের বেশি হলে ম্যামোগ্রাফি ভালো। ম্যামোগ্রাফি এক ধরনের এক্স-রে। এতে সাধারণ এক্স-রের চেয়ে কম রেডিয়েশন দেয়া হয়। ৪০ বছরের কম বয়স যাদের তাদের স্তন গ্রন্থিগুলো খুব ঘন থাকে তাই ম্যামোগ্রাফির চেয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করা ভালো।
৩) বায়োপসি করা; FNAC করা হয়; যাকে বলে ফাইন নিডল অ্যাসপাইরেশন সাইটোলোজি (fine needle aspiration cytology)– এই পদ্ধতিতে টিউমারের ভেতরে ছোট একটি সুঁই দিয়ে রস নিয়ে মাইক্রোস্কোপে পরীক্ষা করা হয়। এসব পরীক্ষার মাধ্যমে ডাক্তাররা স্তন ক্যানসার নির্ণয় করে থাকেন।

স্তনের ক্যান্সার হলে চিকিৎসা কী?
চিকিৎসকেরা ক্যান্সার বিস্তার, অবস্থান, এর প্রকৃতি ও স্টেজের ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন ট্রিটমেন্ট দিয়ে থাকেন যেমন –
১. সার্জিক্যাল ট্রিটমেন্ট
•   ম্যাসটেকটমি (সম্পূর্ণ স্তন অপসারণ)
•   র্যাডিক্যাল ম্যাসটেকটমি (স্তনসহ গ্রন্থি অপসারণ)
•   ব্রেস্ট কনসার্ভি সার্জারি (স্তন সংরক্ষণ সার্জারি)
•   বর্তমানে অনকোলাস্টিক টেকনিকের মাধ্যমে স্তন অপসারণ বা বিকৃতি না করেই চিকিত্সা সম্ভব।
২. কেমোথেরাপি
৩. রেডিওথেরাপি