আমাদের মধ্যে অনেকেই সাইনোসাইটিস ও সাইনাসের বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় ভুগে থাকি। মুখমন্ডলের হাড়ের ভিতরে কতগুলো ফাঁপা বায়ু ভর্তি জায়গা আছে তাকে সাইনাস বলে। মাথার খুলিতে অবস্থিত এই সাইনাসের বিভিন্ন কাজ রয়েছে। বলা হয়ে থাকে এইসব সাইনাস নাকের মধ্যস্থিত বাতাসকে উষ্ণ ও আর্দ্র রাখে, মাথাকে হালকা রাখে। কোন কারণে যদি সাইনাসের ঝিল্লিগুলির মধ্যে ঘা বা প্রদাহ হয় তখন তাকে সাইনোসাইটিস বলে।
রোগের কারণঃসাইনোসাইটিস অনেক কারণে হয়ে থাকে। সাধারণভাবে যে সব কারণে হতে পারে সেগুলো হচ্ছে-নাকের ইনফেকশন, নাকের হাড় বাকাঁ, নাকের মাংস ফুলে বড় হয়ে যাওয়া (হাইপারট্রফাইড ইনফিরিয়র টারবিনেট), নাকের পলিপ ইত্যাদি।
ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা এলার্জির কারণেও সাইনোসাইটিস হয়ে থাকে ।
অন্যান্য কারনঃদূষিত পানিতে গোসল করলে পানি সাইনাসে প্রবেশ করে ইনফেকশন হয়ে
আঘাতের কারণে সাইনাস ছিদ্র হয়ে উন্মুক্ত হলে ইনফেকশন হয়ে
দাঁতের মাড়ির একদম শেষ প্রান্তের দুটি দাঁত তুলে ফেলার সময় দাঁতের গোড়া দিয়ে সাইনাস উন্মুক্ত হয়ে
ইনফেকশন হয়ে ঠাণ্ডা ও ভেজা পরিবেশ, ধোঁয়া, ধূলোবালি ইত্যাদি পরিবেশ সাইনোসাইটিস হওয়ার জন্য দায়ী।
রোগের লক্ষণ ও উপসর্গঃসাইনোসাইটিস রোগে প্রচন্ড মাথাব্যথা হয়। সকালে কম থাকে, দুপুরের দিকে ব্যথার তীব্রতা বেড়ে যায় আবার বিকেলের দিকে সামান্য কমে যায়
মাথা নাড়াচাড়া করলে, হাঁটলে বা মাথা নিচু করলে ব্যথার তীব্রতা আরো বেড়ে যায়
জ্বর জ্বর ভাব থাকে, কোনো কিছুতেই ভালো লাগে না এবং অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যায়
নাক বন্ধ থাকে। পরীক্ষা করলে নাকের ভেতর পুঁজ পাওয়া যেতে পারে
সাইনাস এর এক্স রে করলে সাইনাস ঘোলাটে দেখায়।
সাইনোসাইটিস-এর জটিলতাঃসাইনাসগুলো চোখ এবং ব্রেইনের পাশে থাকে বলে সাইনাসের ইনফেকশন হলে তা চোখ এবং মস্তিষ্কেরও জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন-
অরবিটাল সেলুলাইটিস এবং এবসেস বা চোখের ভেতরের ইনফেকশন।
মেনিনজাইটিস বা ব্রেইনের পর্দার প্রদাহ।
এক্সট্রাডুরাল এবং সাবডুরাল এবসেস।
অস্টিওমায়েলাইটিস (মাথার অস্থির প্রদাহ)।
কেভেরনাস সাইনাস থ্রম্বোসিস প্রভৃতি।
কাজেই দেখা যাচ্ছে, সাইনোসাইটিসের কারণে চোখের ভেতরে ইনফেকশন ঢুকে চোখটি নষ্ট করে দিতে পারে, আবার মাথার ভেতর ইনফেকশন ঢুকে মেনিনজাইটিস এমনকি ব্রেইন এবসেসের মতে মারাত্মক জটিল রোগের জন্ম দিতে পারে।
সাইনোসাইটিস হলে করনীয়ঃ১. স্টিম বাথ: স্টিম বাথ বা বাষ্পীয় প্রশ্বাস গ্রহণ দারুণ কার্যকরি। আর্দ্রতার কারণে নাকে সূক্ষ্ম সিলিয়াগুলো তাদের কার্যক্ষমতা ফিরে পায় ও সাইনাসের মুখ খুলে যায়। দিনে দু বার স্টিম বাথ বা বাষ্পীয় প্রশ্বাস গ্রহণ করা যেতে পারে। বালতি বা গামলায় বাষ্পসুদ্ধ সিদ্ধ পানি নিয়ে ঝুঁকে বসতে হবে, একটা তোয়ালে দিয়ে মাথা ঢেকে ফেলুন যাতে উদ্বায়ী বাষ্প বেরিয়ে যেতে না পারে। এবার শ্বাসের সঙ্গে গরম বাষ্প টেনে নিতে হবে। দিনে দু'বার করতে হবে। পানির সঙ্গে টিংচার আয়োডিন বা ক্রিস্টাল মেন্থল মেশালে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
২. সাইনোসাইটিসের প্রকোপ কমাতে নিয়মিত নাক পরিষ্কার রাখা জরুরি। ঘন শ্লেষ্মা বা সিক্রেশনগুলো বের করে ফেলতে হবে।
৩. সারাদিনে প্রচুর পরিমাণ পানি বা পানীয় (ঠাণ্ডা এবং গরম দুটোই) গ্রহণ করা উচিৎ। এতে সাইনাসের নিঃসরণ পাতলা হয় এবং সাইনাসের কার্যক্ষমতা সচল থাকে।
৪. দুই নাক একসঙ্গে ঝাড়া যাবেনা। তাতে প্রদাহ বা সংক্রমণ কান পর্যন্ত ছড়িয়ে যাবে।
৫. সাইনাসের নিঃসরণ পাতলা হলে সহজে বেরিয়ে যায়। সেজন্যে খাবারে রসুনের পরিমাণ বাড়াতে পারেন। রসুন ন্যাচারাল ডিকনজেসটেন্ট হিসেবে কাজ করে, ফলে বন্ধ নাক খুলে যায়।
৬. খানিকটা শারীরিক পরিশ্রম করলে সাইনাসের মুখ খুলে যেতে পারে, এতে কিছুটা উপশম পেতে পারেন।
৭. সংশিষ্ট সাইনাসের ওপর চাপ প্রয়োগে ব্যথা অনুভব হতে পারে। এক্ষেত্রে ভেজা হালকা গরম কাপড় কয়েক মিনিটের জন্যে রেখে দিলে ব্যথা কমে আসবে।
৮. সাইনোসাইটিসের ব্যথার সঙ্গে ক্ষুধার সম্পর্ক রয়েছে। ব্যথার সময় খিদে পেলে দ্রুত খেয়ে ফেলবেন, নয়তো ব্যথা বেড়ে যাবে।
চিকিৎসা বা আরোগ্য লাভের উপায়ঃসাইনোসাইটিসের কারণে মাথব্যথা হয়েছে বলে মনে হলে যতদ্রুত সম্ভব একজন নাক, কান, গলারোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে এ রোগের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক, এন্টিহিস্টামিন, নাকের ড্রপ এবং ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহার করা হয়। যদি ওষুধপত্রে এই রোগ নিরাময় না হয় তবে সাইনাসের ওয়াশ বা আরো বড় ধরনের অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে।
Source: Health Tips