Author Topic: টেস্ট টিউব বেবি | আইভিএফ-যুগান্তরের এক নতুন দৃষ্টান্ত!  (Read 2242 times)

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

Mr. Rasel

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 516
  • Gender: Male
    • View Profile
“কেন এই টেস্ট টিউব বেবি বা আইভিএফ কারও দরকার হয়?”

আমাদের চারপাশে অনেকেই বন্ধ্যাত্ব সমস্যায় ভোগেন।
সন্তান ধারণের আশায় কোন দম্পতি কোন ধরনের জন্ম নিরোধক উপায় অবলম্বন না করে এক বছর স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবন যাপনের পরেও যখন স্ত্রীর গর্ভধারণ হয় না তখন তাকে বন্ধ্যাত্ব বা ইনফার্টিলিটি (Infertility) বলে।
 
বন্ধ্যাত্বের কারণগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে স্ত্রী, ৩৫ শতাংশ ক্ষেত্রে স্বামী এবং ১০-১২ শতাংশ ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের ত্রুটির জন্য সন্তান হয় না। বাকি ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে সন্তান ধারণ করতে না পারার কোন সঠিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।
বর্তমান সময়ে বন্ধ্যাত্ব নিরসণের অনেক রকম চিকিৎসা বের হয়েছে। টেস্ট টিউব বেবি হচ্ছে বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসার সর্বজনস্বীকৃত একটি পদ্ধতি।

টেস্ট টিউব বেবি কী?
টেস্ট টিউব বেবি সম্পর্কে অনেক রকম ভুল ধারণা রয়েছে। টেস্ট টিউব বেবি– এই শব্দগুলো থেকেই অনেকের মনে ভুল ধারণার জন্ম হয়েছে। এ কারণে অনেকেই মনে করেন, টেস্ট টিউব বেবির জন্ম হয় টেস্ট টিউবের মধ্যে!! আবার কেউ কেউ মনে করেন, টেস্ট টিউব বেবি কৃত্রিম উপায়ে জন্ম দেয়া কোন শিশু। কাজেই কৃত্রিম উপায়ে এভাবে সন্তান লাভে ধর্মীয় বাধা থাকতে পারে। কিন্তু টেস্ট টিউব বেবির বিষয়টি মোটেই তা নয়। বিভিন্ন রোগের যেমন নানা চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে, এটিও তেমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি।

আইভিএফ কী?

টেস্ট টিউব বেবি বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসার একটি বিশেষ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিরও বিভিন্ন কৌশল রয়েছে। তাঁদের মধ্যেই একটি হচ্ছে আইভিএফ বা ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (IVF- In vitro fertilisation) পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে স্ত্রীর পরিণত ডিম্বাণু ল্যাপারোস্কপিক পদ্ধতিতে খুব সতর্কতার সাথে বের করে আনা হয়। তার পর সেটিকে প্রক্রিয়াজাতকরণের পর ল্যাবে সংরক্ষণ করা হয়। এটি করতে সময় লাগে মাত্র ২০-৩০ মিনিট।
একই সময়ে স্বামীর অসংখ্য শুক্রাণু সংগ্রহ করে তা থেকে ল্যাবে বিশেষ প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বেছে নেয়া হয় সবচেয়ে ভালো জাতের এক ঝাঁক শুক্রাণু। তারপর অসংখ্য সজীব ও অতি ক্রিয়াশিল শুক্রাণুকে ছেড়ে দেওয়া হয় নিষিক্তকরণের লক্ষ্যে রাখা পেট্রিডিশ-এ। ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর এই পেট্রিডিশ-টিকে তারপর সংরক্ষণ করা হয় মাতৃগর্ভের পরিবেশের অনুরূপ একটি ইনকিউবেটর-এ।

এই মিশ্রণে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর অনুপাত থাকে ৭৫০০০ঃ১। তবে আলাদা আলাদা মিশ্রণে থাকতে পারে একাধিক ডিম্বাণু। সেক্ষেত্রে আনুপাতিক হারে শুক্রাণুর সংখ্যাও বাড়বে। ইনকিউবেটর-এর মধ্যে ২৪-৪৮ ঘন্টা পর্যবেক্ষণের পরেই বোঝা যায় নিষিক্তকরণের পর ভ্রূণ সৃষ্টির সফলতা সম্পর্কে। নিশ্চিতভাবে নিষেক ঘটাতে চাইলে ইন্ট্রাসিটোপ্লাজমিক স্পার্ম ইনজেকশন পদ্ধতিতে কেবল একটি শুক্রাণুকে সরাসরি ডিম্বাণুর ভেতর প্রতিস্থাপন করা হয়।
সঠিকভাবে নিষিক্ত হলে ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই নিষিক্ত ডিম্বাণুটি ৬-৮ টি কোষের একটি গুচ্ছে পরিণত হয়। এ অবস্থাতেই কোষগুচ্ছ বা ভ্রূণটি নারীর জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা হয়। জরায়ুতে ভ্রূণ সংস্থাপন সম্পন্ন হওয়ার পরই তা চূড়ান্তভাবে বিকাশ লাভের জন্য এগিয়ে যেতে থাকে। সূচনার এই সময়টুকু ছাড়া বাকি সময়টাতে শিশু একদম স্বাভাবিক গর্ভাবস্থার মতই মাতৃগর্ভে বেড়ে ওঠে এবং সেখান থেকেই জন্ম নেয়। কোন টেস্ট টিউবে এই শিশু বড় হয় না।

টেস্ট টিউব পদ্ধতি যাদের জন্য প্রযোজ্য
বন্ধ্যাত্ব থাকলেই বা সন্তান জন্মদানে বিঘ্ন ঘটলেই যে টেস্ট টিউব বেবি নিতে পারবেন, তা কিন্তু নয়। এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করার জন্য কিছু শর্ত থাকে। যখন বন্ধ্যাত্ব নিরসণের অন্য সকল প্রকার চিকিৎসা ব্যর্থ হয় এবং নির্দিষ্ট কিছু ক্রাইটেরিয়া থাকে স্বামী এবং স্ত্রীর কেবলমাত্র তখনই টেস্ট টিউব বেবি নেয়া সম্ভব। যেমন-
(১) নারীর টিউবাল ডিফেক্ট বা ডিম্বনালীর সমস্যা। এ সমস্যার কারণে শুক্রাণু জরায়ুতে প্রবেশ করতে বাধাপ্রাপ্ত হয়।
(২) ডিম্বাশয় ঠিক থাকার পরেও জন্মগতভাবে বা রোগের কারণে ডিম্বনালী সংকুচিত হলে, নষ্ট হলে, এর মুখ বন্ধ হয়ে গেলে এ পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়।
(৩) পুরুষের ক্ষেত্রে কার্যকর শুক্রাণুর সংখ্যা কম থাকলে বা জরায়ুর মুখ থেকে ডিম্বনালী পর্যন্ত প্রয়োজনীয় শুক্রাণু যেতে অসমর্থ হলেও এ পদ্ধতির সাহায্য নেয়া যেতে পারে।

টেস্ট টিউব চিকিৎসার সফলতা
এই পদ্ধতিতে চিকিৎসায় সাফল্যের হার সব সময়েই একইরকম থাকবে এমনটি বলা যাবে না। সামগ্রিকভাবে এ পদ্ধতিতে গর্ভধারণে সাফল্যের হার ১৫-৩০ শতাংশ। তাঁর মধ্যে থেকে ২৫-৩৫ বছরের মহিলাদের মধ্যে সাফল্যের হার ৩০-৪০%। ৩৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১৫ থেকে ২০% এবং ৪০ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে ১০ থেকে ১৫%। স্ত্রীর বয়স ছাড়াও সফলতার সম্ভাবনা শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর গুণগত মান, প্রজননে অক্ষমতার মেয়াদ, জরায়ুর স্বাস্থ্য ইত্যাদির উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।

টেস্ট টিউব পদ্ধতি ব্যর্থ হওয়ার কারণ
১) ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণুর পরিপক্কতা লাভের যে সময় প্রয়োজন তা সম্পর্কে ভুল অনুমান করা।
২) ডিম্বাণু পূর্ণাঙ্গ হওয়ার আগেই পৃথকীকরণ।
৩) পৃথকীকরণের সময় ডিম্বাণু আঘাত প্রাপ্ত হলে বা নষ্ট হলে।
৪) নিষিক্ত ডিম্বাণু থেকে ভ্রূণের বিকাশ না ঘটলে।
৫) ভ্রূণ তৈরি হলেও তাঁর বিকাশ ঠিকমত না হলে।
৬) ত্রুটিপূর্ণ প্রতিস্থাপন।
৭) ব্যবহৃত যন্ত্র ও প্রযুক্তির ত্রুটির কারণে।

যখন কোন দম্পতি সন্তান পেতে পুরোপুরি সকল চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তাঁদের অনেকেই তখন টেস্ট টিউব বেবির কথা ভাবেন। চিকিৎসকরাও তাঁদের টেস্ট টিউব বেবি নেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সন্তান লাভের এ প্রয়াসও যে শতভাগ সফল হবে সে ব্যাপারে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এখনও সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত নন। তারপরেও অনেক নিঃসন্তান দম্পতিদের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে এই টেস্ট টিউব বেবি।