ঘুম আমাদের দৈনন্দিন রুটিনের একটি অপরিহার্য অংশ এবং আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য এটি যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। তবে, কিছু লোকের দিনে ঘুমানোর এবং রাতে জেগে থাকার প্রবণতা রয়েছে। এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন কাজের সময়সূচী, জীবনধারা, বা চিকিৎসা পরিস্থিতি। এই নিবন্ধে, আমরা অন্বেষণ করব দিনে ঘুমানো এবং রাতে জেগে থাকা স্বাস্থ্যকর কিনা।
প্রথমত, আসুন সার্কাডিয়ান ছন্দের ধারণাটি বুঝতে পারি। সার্কাডিয়ান রিদম হল প্রাকৃতিক জৈবিক ছন্দ যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া যেমন ঘুম-জাগরণ চক্র, হরমোন নিঃসরণ এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এই ছন্দগুলি মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসে অবস্থিত একটি অভ্যন্তরীণ জৈবিক ঘড়ি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। ঘড়িটি বাহ্যিক পরিবেশের সাথে সিঙ্ক্রোনাইজ করা হয়, বিশেষ করে আলো-অন্ধকার চক্র, যা চোখ দ্বারা অনুভূত হয়।
আমরা যখন রাতে ঘুমাই, তখন আমাদের শরীর মেলাটোনিন হরমোন তৈরি করে, যা আমাদের ঘুমিয়ে পড়তে এবং ঘুমিয়ে থাকতে সাহায্য করে। দিনের বেলায়, কর্টিসল হরমোন তৈরি হয়, যা আমাদের জাগ্রত এবং সতর্ক থাকতে সাহায্য করে। অতএব, যখন আমরা দিনের বেলা ঘুমিয়ে এবং রাতে জেগে থাকার মাধ্যমে আমাদের স্বাভাবিক ঘুম-জাগরণ চক্রকে ব্যাহত করি, তখন আমরা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা অনুভব করতে পারি।
এই ধরনের ঘুমের প্যাটার্নের সাথে যুক্ত সবচেয়ে সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির মধ্যে একটি হল ঘুমের অভাব। ঘুমের অভাব ঘটে যখন আমরা পর্যাপ্ত ঘুম পাই না বা যখন আমাদের ঘুমের মান খারাপ হয়। এটি বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন স্থূলতা, ডায়াবেটিস, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা রাতের শিফটে কাজ করে বা অনিয়মিত ঘুমের ধরণ আছে তাদের ঘুমের অভাব হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
দিনের বেলা ঘুমানো এবং রাতে জেগে থাকার সাথে যুক্ত আরেকটি স্বাস্থ্য সমস্যা হল সামাজিক বিচ্ছিন্নতা। যেহেতু বেশিরভাগ লোকেরা দিনের বেলায় সক্রিয় থাকে, তাই যারা দিনের বেলা ঘুমায় তাদের সামাজিকীকরণ এবং অন্যদের সাথে যোগাযোগ করা কঠিন হতে পারে। এটি একাকীত্ব, বিষণ্নতা এবং উদ্বেগের অনুভূতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।
তদুপরি, দিনে ঘুমানো এবং রাতে জেগে থাকা আমাদের খাদ্যাভ্যাসকে ব্যাহত করতে পারে। আমাদের শরীর দিনে খাওয়ার জন্য এবং রাতে উপবাস করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। যাইহোক, আমরা যখন দিনের বেলা ঘুমাই এবং রাতে জেগে থাকি, তখন আমাদের খাদ্যাভ্যাস অনিয়মিত হতে পারে, যা ওজন বৃদ্ধি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে।
এছাড়াও, দিনে ঘুমানো এবং রাতে জেগে থাকাও আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা রাতের শিফটে কাজ করে বা অনিয়মিত ঘুমের ধরন আছে তাদের মেজাজের ব্যাধি, যেমন হতাশা এবং উদ্বেগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
অন্যদিকে দিনে ঘুমানো এবং রাতে জেগে থাকার কিছু উপকারিতা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, যারা নাইট শিফটে কাজ করেন তারা রাতে ফোকাস করা এবং মনোনিবেশ করা সহজ মনে করতে পারেন যখন সেখানে কম বিভ্রান্তি থাকে। তদুপরি, কিছু লোক দিনের বেলা ঘুমাতে পছন্দ করতে পারে কারণ এটি শান্ত এবং আরও শান্তিপূর্ণ।
উপসংহারে, যদিও দিনে ঘুমানো এবং রাতে জেগে থাকার কিছু সুবিধা রয়েছে, এই ধরণের ঘুমের প্যাটার্নের সাথে যুক্ত অনেক স্বাস্থ্য সমস্যাও রয়েছে। ঘুমের অভাব, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এবং মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলি সবচেয়ে সাধারণ কিছু সমস্যা। অতএব, নিয়মিত ঘুম-জাগরণ চক্র বজায় রাখা এবং আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। আপনার যদি ঘুমাতে অসুবিধা হয় বা অনিয়মিত ঘুমের প্যাটার্ন থাকে, তাহলে পরামর্শের জন্য আপনাকে একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের সাথে পরামর্শ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
source:www.quora.com