Author Topic: গর্ভাবস্থায় মায়ের সুস্বাস্থ্যে ব্যয়াম  (Read 1719 times)

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

Dr. Sushanta Kumar Ghose

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 363
  • Gender: Male
    • View Profile

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও শরীর সুগঠিত করতে ব্যয়ামের উপকারিতার কথা আমরা সবাই জানি। মেয়েদের শিক্ষা জীবনে এর প্রতি আগ্রহ থাকলেও সংসার জীবনে ঢুকে যাওয়ার পর অনেকেরই আর এর পেছনে সময় দেয়া হয় না। আজকাল যদিও শহুরে শিক্ষিত মেয়েদের মাঝে গর্ভকালীন ব্যয়ামের গুরুত্ব বাড়ছে কিন্তু অনেকেই এই বিষয়ে সঠিকভাবে জানেন না। আবার সন্তান প্রতিপালনের সময়ও নিজের যত্নে ব্যয়ামের গুরুত্ব সম্পর্কে অনেকে সচেতন না। আজকে লিখব গর্ভকালীন কিছু ব্যয়াম নিয়ে ও মা হয়ে যাওয়ার পরও জীবনে ব্যয়ামের ভূমিকা নিয়ে। শুরু করছি গর্ভকালীন কিছু প্রচলিত কার্যকরী ব্যয়ামের কথা দিয়ে।

গর্ভকালীন কিছু ব্যয়াম নিয়ে ও মা হয়ে যাওয়ার পরও জীবনে ব্যয়ামের ভূমিকা নিয়ে। শুরু করছি গর্ভকালীন কিছু প্রচলিত কার্যকরী ব্যয়ামের কথা দিয়ে।

১। হাঁটা – গর্ভবতী মায়েদের প্রতিদিন কোন প্রকারের ব্যয়াম করা উচিত। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ শক্তির উপস্থিতির জন্য ও শরীরকে কষ্টসহিষ্ণু করে তৈরি করার জন্য হাঁটা হচ্ছে বিশেষজ্ঞ নির্দেশিত ব্যয়াম। এটা করতেও অত্যন্ত সহজ। হাঁটা মায়ের পেলভিসকে উন্মুক্ত হতে ও প্রসবের জন্য বাচ্চাকে ভালো অবস্থান নিতে সাহায্য করে। প্রসবব্যথা চলাকালীন হাঁটলে প্রসব দ্রুত হয় এবং এই সময় কাছের মানুষদের উচিত মাকে যতক্ষণ পর্যন্ত তার পক্ষে সম্ভব হাঁটতে উৎসাহিত করা।   



২। পেলভিক ফ্লোর (Pelvic Floor) বা কেজেল (Kegel) ব্যয়াম – এই ব্যয়ামকে সবগুলোর মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলা যেতে পারে এবং আজীবন এর চর্চা করলে উপকৃত হবেন। কারণটা, গর্ভাবস্থায় হাঁচি, কাশি দেয়ার সময় বা জোরে হাসার সময় প্রায়ই প্রস্রাব বের হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। সন্তান জন্ম দেয়ার পরও এমনটা হয়। এর কারণ গর্ভাবস্থায় ও সন্তান প্রসব করার পর এই পেশী শিথিল হয়ে যায়। তবে আপনাদের জন্য ভালো খবর হচ্ছে, এই পেশী বেশ দ্রুতই ব্যয়ামের প্রতি সাড়া দেয়। প্রথমে আপনাকে বুঝতে হবে এটা কোন পেশী। এগুলো হচ্ছে মেয়েদের পিউবিক হাড়ের নিচে স্ত্রীযোনি ও মলদ্বারের মাঝের টিস্যুগুলো। কিভাবে একে চিহ্নিত করবেন? টয়লেটে প্রস্রাব করতে গিয়ে প্রস্রাবের ধারা ইচ্ছাকৃতভাবে বন্ধ করে দেবেন। এভাবে থামিয়ে দিতে আপনি যে পেশীগুলো ব্যবহার করবেন সেগুলোই হচ্ছে পেলভিক ফ্লোর পেশী। তবে, পূর্ণ ব্লাডারে কখনোই এই ব্যয়াম করবেন না। একে চিহ্নিত করার পর ধীরে ধীরে একে সংকুচিত করুন, কিছুক্ষণ ধরে রাখুন ও ধীরে আবার ছেড়ে দিন। এভাবে আস্তে আস্তে আপনাকে চেষ্টা করতে হবে দৈনিক ১০০ থেকে ২০০ বার করতে। এর সুবিধা হচ্ছে আপনি দৈনন্দিন কাজের মাঝেই এটা করতে পারেন, যেমন ফোনে কথা বলার সময় বা দুপুরে বিছানায় শুয়ে একটু এলিয়ে নেয়ার সময়ও। 



৩। আড়াআড়িভাবে মেঝেতে বসা (Crisscross floor sitting) – স্কুলের বাচ্চাদের মতো মেঝেতে আড়াআড়িভাবে বসা। এর ফলে উরুর ভেতরের দিক প্রসারিত হয় ও পায়ে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। এসবই স্বাভাবিক প্রসবের জন্য উপকারী। 



৪। নিতম্ব গোটানো বা পেলভিক আন্দোলিত করা (Hip Tucks or Pelvic Rocks) – মা এই ব্যয়াম করার সময় চার হাত-পায়ে ভর দিয়ে থাকবে। প্রথমে পিঠের নিচের অংশকে ঝোলাবে, এরপর একে সোজা করবে ও শেষে নিতম্ব নিচের দিকে গুটিয়ে আনবে। একে সঠিকভাবে রপ্ত করে পারা একটু কঠিন তবে ঠিকমতো করতে পারলে এটা পিঠের ব্যথার জন্য আরামদায়ক। প্রতিদিন কয়েকবার করলে কন্ট্রাকশনের সময় জরায়ুকে সামনের দিকে যেতে জরায়ুর পেশীকে তৈরি হতে সহায়তা করবে।



৫। উবু হওয়া (Squatting) – আপনার জেনে রাখা ভালো যে, যেমনটা আমরা নাটক, সিনেমায় দেখি বা বর্তমানে বেশিরভাগ হাসপাতালে প্রচলিত আছে যে গর্ভবতী মা প্রসব করার জন্য বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে আছে সেটার বিপরীতে উবু হওয়া হচ্ছে মানুষের জন্য স্বাভাবিক প্রসব ভঙ্গী। শোয়া অবস্থার সাথে তুলনা করলে উবু হওয়া অবস্থায় মায়ের পেলভিস প্রায় ৩০% হারে খুলে যায়। এই ব্যয়াম মায়ের পেলভিসের পথকে নমনীয় করার পাশাপাশি পায়ে শক্তি যোগাবে ও পেরিনিয়ামকে প্রসারিত করবে। উবু হওয়া একরকম আছে যা শূণ্যে বসার মতো, আরেকটা আছে লো-কমোডে বসার মতো। 




মনে রাখবেন, গর্ভাবস্থায় ব্যয়াম করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিবেন। ধীরে শুরু করবেন ও একটা ব্যয়াম রপ্ত হয়ে গেলে তারপর এর পরিমাণ বাড়াতে পারেন তবে কখনোই শরীরের ওপর চাপ দিবেন না ও গর্ভকালীন ব্যয়ামে কখনো ব্যথা লাগার কথা না।  এছাড়াও, গর্ভাকালীন উপসর্গ হিসাবে শরীরের নানা অঙ্গে ব্যথা হতে দেখা যায়। এসবের জন্যও কার্যকরী ব্যয়াম আছে যা আপনাকে সহজেই আরাম দিতে পারে।