একজন নারী মা হওয়ার শুরু থেকে সন্তান জন্ম দেয়া পর্যন্ত নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে সময় পার করেন। যেমন রক্ত স্বল্পতা, ব্লিডিং, বমি, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ইত্যাদি। এছাড়া অনেকে একটোপিক প্রেগনেন্সি বা জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণ-সহ নানান সমস্যায় পড়ে।
এখন অনেকেরই গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বা জেসটেশনাল ডায়াবেটিস (Gestational Diabetes) হচ্ছে, সংক্ষেপে যেটাকে বলা হয় জিডিএম (G.D.M.)। এবং আগে যেটা দেখা যেত যে যারা ত্রিশ পার করার পর মা হচ্ছেন, তাদের এই সমস্যাটা বেশি হত, কিন্তু এখন যেকোন বয়সীদেরই জিডিএম হচ্ছে।
জেসটেশনাল ডায়াবেটিসের লক্ষণ (১) ঘনঘন প্রস্রাবের বেগ পাওয়া।
(২) ঘনঘন গলা শুকিয়ে যাওয়া, তৃষ্ণা পাওয়া।
(৩) ক্লান্ত লাগা।
(৪) দৃষ্টি ঝাঁপসা হয়ে যাওয়া।
(৫) ইউরিন ইনফেকশন হওয়া।
জেসটেশনাল ডায়াবেটিসের কারণ(১) কারো প্রি-ডায়াবেটিস থেকে থাকলে।
(২) আগের প্রেগন্যান্সিতে ডায়াবেটিস থাকলে।
(৩) নিকট আত্মীয় যেমন বাবা বা মায়ের ডায়াবেটিস থাকলে।
(৪) পলিসিস্টিক ওভারী সিন্ড্রোম থাকলে।
(৫) অতিরিক্ত ওজন হলে (বি এম আই ৩০ এর বেশী হলে)।
(৬) ৩০ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়স হলে।
(৭) ইতিমধ্যে ৪ কেজি বা ৯ পাউন্ডের বেশী ওজনের বাচ্চা জন্ম দিলে।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস কি?প্রেগন্যান্সির ডায়াবেটিস বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বিশেষ এক ধরনের ডায়াবেটিস, যেটি কিনা কেবল প্রেগন্যান্সিতেই হয়ে থাকে। হরমোনের লেভেল ও নতুন শারিরীক পরিবর্তনের কারনে মায়ের শরীর সঠিক পরিমান ইনসুলিন তৈরী করতে ব্যার্থ হয়। ইনসুলিন এক ধরনের হরমোন, যা অগ্ন্যাশয়ে তৈরী হয়। এটি শরীরকে রক্তের গ্লুকোজের লেভেল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। যখনি শরীর যথেষ্ট পরিমান ইনসুলিন উৎপাদন করতে ব্যর্থ হয়, রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণও বেড়ে যায়। যাকে ডাক্তারী পরিভাষায় জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস মেলিটাস বলা হয়। সাধারণত ডেলিভারীর পর এইটা চলে যায়। তবে, অনেকের ক্ষেত্রে টাইপ ২ এর মতো থেকেও যেতে পারে। তবে থাকুক, আর নাই থাকুক, অবশ্যই নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের মধ্যে থাকতে হবে।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হলে করনীয় কী?(১) গ্লুকোজ টেস্ট
নিয়মিত গ্লুকোজ টেস্ট করাবেন। সবচেয়ে ভালো হয় বাসাতেই একটা গ্লুকোমিটার কিনে নিলে। সকালে খালি পেটে, ব্রেকফাস্টের দু ঘণ্টা পর, আবার লাঞ্চের দু ঘণ্টা পর, এভাবে নিয়ম করে মাপবেন, এবং একতা চার্টে লিখে রাখবেন যেন ডাক্তারকে পরবর্তী চেকআপের সময় দেখাতে পারেন।
(২) হাঁটা-চলার বিকল্প নেই
শারীরিকভাবে অ্যাক্টিভ থাকার চেষ্টা করবেন। নিয়মিত কমপক্ষে আধঘণ্টা করে হাঁটবেন। নিজের কাজগুলো নিজে করার চেষ্টা করবেন। অযথা শুয়ে বসে থাকবেন না।
(৩) কার্বোহাইড্রেট এবং মিষ্টি জাতীয় জাতীয় খাবারে সাবধানতা
কার্বোহাইড্রেট এবং মিষ্টি জাতীয় জাতীয় খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিবেন, এবং সিম্পল কার্বের পরিবর্তে কমপ্লেক্স কার্ব খাওয়ার চেষ্টা করবেন। ডায়েটে প্রোটিন রিচ ফুড বেশি রাখবেন। তাজা ফলমুল, শাকসবজি, মাছ-মাংস, বাদাম, দুধ এবং অন্যান্য ডেইরি প্রোডাক্ট বেশি রাখবেন। মনে রাখবেন, ফুড ইনটেক-ই আপনাকে একটা হেলদি প্রেগন্যান্সি দিতে পারে।
(৪) দুশ্চিন্তাকে দূরে ঠেলুন
দুশ্চিন্তা করবেন না। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস এখন খুব কমন একটা ব্যাপার। অনেকেরই হয়। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন আর সঠিক খাদ্যাভ্যাসই আপনাকে একটা হেলদি প্রেগন্যান্সি দিতে পারে।
(৫) ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওরাল মেডিসিন অথবা ইনসুলিন নিতে হতে পারে।
অনেকেই ভাবেন যে, ডায়াবেটিস হলেই নরমাল ডেলিভারি অসম্ভব! কথাটা কিন্তু ভুল। যদি আপনার জেসটেশনাল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং আপনার অন্য কোন শারিরিক সমস্যা না থাকে তাহলে আপনি আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অবশ্যই নরমাল ডেলিভারির জন্য ট্রাই করতে পারেন।