হেপাটাইটিস বি একটি যকৃতের ভাইরাস যা মানব দেহে ইনফেকশন করতে পারে। শিশুদের মধ্যে এই রোগ আরও বেশি হতে দেখা যায়।
হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ, প্রতিরোধ, প্রতিকার ও নির্ণয় পদ্ধতিক্যাটেগরি১. Inactive carrier যাদের ভাইরাল ডি এন এ 2000 IU/ml এর কম বা নেগেটিভ।
২. Active carrier যাদের ভাইরাল ডি এন এ 2000 IU/ml এর বেশি।
হেপাটাইটিস বি রোগটি কিভাবে ছড়ায়? ১. রক্ত ও শরীরের রসের মাধ্যমে। যেমন পুরুষের বীর্য ও নারীর যোনি নিঃসৃত রস।
২. জন্মকালীন সংক্রমণ (মা হতে সন্তানে)
কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর ১. ব্লাড ট্রানফিউশন বা সোজা বাংলায় একের শরীর থেকে অন্য শরীরে রক্ত সঞ্চালন (আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে)
২. ডায়ালাইসিস, আকুপাংচার, ট্যাটু করা, সুঁই এর মাধ্যমে ড্রাগ নেওয়া , রেজর বা টুথ ব্রাশ শেয়ার করা (সংক্রমিত ব্যাক্তির সাথে)
৩. এই রোগ বেশি হয় এমন শহর বা দেশে ভ্রমণ করা।
প্রচলিত ভুল ধারণাকিছু প্রচলিত ভুল ধারণা আছে হেপাটাইটিস বি নিয়ে। তাই জেনে নেওয়া ভালো কী কী করলে এটি ছড়ায় না। হাত ধরা, একই গ্লাসে পানি খাওয়া, কাশি, জড়িয়ে ধরা, চুমু দেয়া, হাঁচি দেয়া, সন্তানকে দুধ খাওয়ালে।
হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধহেপাটাইটিস বি এইডস থেকে প্রায় ৫০ থেকে ১০০ গুণ বেশি সংক্রামক। তাই প্রতিরোধের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে ।
ভ্যাক্সিন৪টি টিকা আছে। প্রথম তিনটি এক মাস পর পর। শেষটি প্রথমটি নেওয়ার এক বছর পরে নিতে হবে। নেওয়ার আগে অবশ্যই পরীক্ষা করতে হবে আপনি ইতোমধ্যে পজিটিভ কিনা। মাত্র একশ’ টাকা দিয়ে আপনি এই পরীক্ষাটি করে নিতে পারেন। যদি পজিটিভ হন, তবে টিকা দিয়ে আপনার কোন লাভ নেই। আর যদি নেগেটিভ হন তাহলেই আপনি এটি নিতে পারবেন এবং আপনার শরীরে এর বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি হবে । ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রেই এটি কার্যকরী এবং শিশুদের ক্ষেত্রে আরও বেশি। বিভিন্ন কোম্পানি ভেদে, তৈরি প্রণালী ও খরচ সাপেক্ষে এক এক ভ্যাক্সিনের দাম এক এক রকম। এক এক ডোজে আনুমানিক ৫০০ / ৬০০ খরচ হতে পারে।
প্রতিরোধ১. সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা
২. অন্যের ব্যবহারকৃত জিনিস ব্যবহার না করা ।
৩. ড্রাগ না নেয়া।
৪. ভ্যাক্সিন নেয়া ।
৫. দাঁতের চিকিৎসার ক্ষেত্রে জীবাণুমুক্ত সরঞ্জামাদি ব্যবহার করা ।
৬. মা হতে সন্তানের সহজেই হতে পারে, তাই গর্ভকালীন চেক আপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের ভ্যাক্সিন নেওয়া থাকলে বা ইমিউন থাকলে বাবার থাকলেও সমস্যা নেই। মার যদি হেপাটাইটিস থাকে, তবে শিশু জন্মের ১২ ঘণ্টার মধ্যে ভ্যাক্সিন ও immunoglobulin দিতে হবে। মা যদি inactive carrier হয় তবে বাচ্চার হেপাটাইটিস হবার সম্ভাবনা কম।
৭. হাসপাতালে চিকিৎসার জন্যে আনা সিরিঞ্জ, সুঁই এক জন ব্যক্তিকেই ব্যবহার করতে দেওয়া। ব্যবহারের পর নষ্ট করে ফেলা।
৮. অবৈধ যৌন মিলন হতে বিরত থাকা।
৯. রক্ত নেওয়া বা দেয়ার আগে পরীক্ষা করে নেয়া।
লক্ষণসমূহ১. এক তৃতীয়াংশ মানুষের ইনফেকশন হওয়ার পরেও কোন লক্ষণ থাকে না ।
২. যাদের acute infection হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে acute viral hepatitis হয়ে থাকে। যার লক্ষণ হচ্ছে বমি, বমি বমি ভাব, জ্বর, মাথা ব্যথা, ক্ষুধা মন্দা, প্রস্রাব হলুদ হওয়া, ডায়রিয়া ইত্যাদি। দেখা গিয়েছে শরীর চুলকানো সব হেপাটাইটিসেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। এক তৃতীয়াংশ মানুষের এই লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে।
৩. বাকি এক তৃতীয়াংশের ফ্লু ভাইরাসের মত কিছু লক্ষণ দেখা যায়। যেমন – মাথা ব্যথা, গা শিরশির করা , জ্বর আসা । এই অবস্থা হওয়ার পর অধিকাংশ মানুষই ভালো হয়ে যায়। খুব কম ব্যক্তিরই লিভার অকেজো হয়ে যায়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে , হেপাটাইটিস বি ভাইরাস রক্তে থাকলেই সবার ইনফেকশন হবে তা নয়। আবার ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ মানুষেই acute থেকেই ভালো হয়ে যায়। কিন্তু ৫ বছরের নিচের শিশুদের প্রায় ৯০ ভাগেরই ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদী ইনফেকশন হয়ে থাকে। তাই শিশুদের জন্য হেপাটাইটিস বি ভাইরাস হুমকিস্বরূপ। পূর্ণ বয়স্কদের ক্ষেত্রে chronic( দীর্ঘদিন ইনফেকশন থাকা ) অবস্থায় গড়ায় শুধু ১-৪ % জনের। বাকিদের হেপাটো সেলুলার কার্সিনোমা অথবা যকৃতের ক্যান্সার এবং লিভার সিরোসিস বা যকৃতের কোষ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
হেপাটাইটিস বি নির্ণয়ের উপায়মানুষের রক্তে হেপাটাইটিস বি সার্ফেস এন্টিজেন, হেপাটাইটিস বি আই জি এম কোর এন্টিজেন, হেপাটাইটিস ই এন্টিজেন, পাশাপশি যকৃতের এনজাইমের আধিক্য থেকে বোঝা যায় একটি ব্যক্তি acute infection এ আক্রান্ত কি না ! আর chronic infection আছে নাকি জানতে হলে হেপাটাইটিস বি আই জি জি কোর এন্টিজেন, যকৃতের এনজাইম, সার্ফেস এন্টিজেন ও ই এন্টিজেন রক্তে আছে নাকি তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে ।
প্রতিকারএর আলাদাভাবে কোন চিকিৎসা নেই । প্রতিরোধই প্রধান আর লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করা যেতে পারে।
প্রতি বছর হেপাটাইটিসের সংক্রমণে লাখ লাখ লোক মারা যাচ্ছে। WHO এর একটি রিপোর্টে দেখা গেছে, বাংলাদেশের মোট জনগণের প্রায় ৫ শতাংশ দীর্ঘমেয়াদী হেপাটাইটিসের বাহক এবং এই ৫ শতাংশ মানুষের ২০ শতাংশের যকৃতের ক্যান্সার ও যকৃত অকেজো হয়ে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি । তাই আজই ভ্যাক্সিন নিন। পরিবারের সবাইকে নিতে বলুন ।