Author Topic: ভিটামিন কি বা ভিটামিন কাকে বলে? ভিটামিন এর প্রয়োজনীয়তা?  (Read 1671 times)

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

Dr. Sushanta Kumar Ghose

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 363
  • Gender: Male
    • View Profile


ভিটামিন হল প্রয়োজনীয় পুষ্টি যা আপনার শরীরকে সঠিকভাবে কাজ করতে এবং সুস্থ রাখতে সক্ষম করে। অর্থাৎ দেহের স্বাভাবিক পুষ্টি, বৃদ্ধি, রক্ষানাবেক্ষণ ও অন্যান্য কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনসহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অতি প্রয়োজনীয় এবং স্বল্প পরিমাণে খাদ্যে উপস্থিত জৈব রাসায়নিক পদার্থকে ভিটামিন বলে।


তাহলে বলতে পারি যে, ভিটামিন হলো পুষ্টি উপাদান যা আমাদের দেহের ক্রিয়াকলাপ এবং রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন। আমাদের শরীর ভিটামিন তৈরি করতে পারে না তাই আমারা বিভিন্ন প্রকার খাবার গ্রহণ এর মাধ্যমে ভিটামিন পেয়ে থাকি। প্রায় ১৩ টি ভিটামিন রয়েছে এবং এগুলি মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয় কারণ আমাদের কেবল প্রতিদিন অল্প পরিমাণে, সাধারণত মিলিগ্রাম বা মাইক্রোগ্রাম প্রয়োজন হয়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এর তথ্য নিম্নরুপ:

ভিটামিন এ(Vitamin A):

Vitamin এ আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারি, এটি ভাল দৃষ্টিশক্তি এবং উন্নত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া এটি স্বাস্থ্যকর ত্বক, বিভিন্ন অঙ্গ রক্ষণাবেক্ষণ, পেশী টিস্যুগুলির সুস্থ বৃদ্ধি এবং একটি স্বাস্থ্যকর প্রজনন ব্যবস্থায় সাহায্য করে। ভিটামিন এ সাধারণত ডিম, মাছ এবং বিভিন্ন দুধজাত পণ্যতে পাওয়া যায়। Vitamin এ আপনার দাঁত, হাড়, ত্বক, প্রজনন এবং স্বাস্থ্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।


ভিটামিন সি(Vitamin C):


Vitamin C আপনার শরীরের জন্য একটি প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং গুরুত্বপূর্ণ। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে অর্থাৎ কোষের ক্ষতি রোধ করতে এবং নির্দিষ্ট ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং অন্যান্য রোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে। তাছাড়া ভিটামিন সি ক্ষত নিরাময়ে এবং আপনার দেহকে আয়রন শোষণে সহায়তা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। Vitamin সি পাওয়া যায় সাইট্রাস ফল এবং অনেক শাকসব্জিতে যেমন: টমেটো, আলু, শাক, বাঙ্গি, বেরি, মরিচ, ব্রোকলি ইত্যাদি।


ভিটামিন ডি (Vitamin D):

ভিটামিন ডি আপনি সূর্যের আলো থেকে পেতে পারেন, ক্যালসিয়াম শোষণকে সহায়তা করে এবং শক্তিশালী হাড় এবং দাঁত তৈরি করে এবং বজায় রাখে। আপনি Vitamin ডি পেতে পারেন মাছ, দুগ্ধজাত খাবার যেমন ডিমের কুসুম, ফ্যাটি ফিশ, ফিশ-লিভার অয়েল দই, পনির এবং দুধ এবং মাছের তেলে ইত্যাদি।


ভিটামিন ই (Vitamin E):
Vitamin E আপনার শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে। তাছাড়া পেশী এবং লাল রক্ত কোষ বজায় রাখে, শরীরকেও রোগের বিরুদ্ধে আরও ভাল প্রতিরক্ষা করতে সহায়তা করে। ভিটামিন ই সাধারণত গম, বাদাম, তেল, ভুট্টা ইত্যাদিতে পাওয়া যায়।


ভিটামিন বি
ভিটামিন বি ,ভিটামিন বি কমপ্লেক্স নামেও পরিচিত। এই ভিটামিন জলে দ্রবণীয় এবং ভঙ্গুর। বি ভিটামিনের অনেকগুলো কার্বোহাইড্রেট বিপাকে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এখানে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন বি সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে।

ভিটামিন বি ওয়ান বা থায়ামিন

ভিটামিন বি১-এর রাসায়নিক নাম থায়ামিন যা একটি বর্ণহীন, কেলাসাকৃতির পদার্থ। থায়ামিন শরীরের ভিতর থায়ামিন পাইরোফস্ফেটে পরিণত হয় যা কার্বোহাইড্রেট বিপাকে একটি সহ-উৎসেচক (যা উৎসেচকের সাথে মিলিত হতে হয়ে কিছু আংশিক বিক্রিয়া অণুঘটিত করে) হিসেবে কাজ করে। থায়ামিনের অভাবে বেরিবেরি রোগ হয় যা পেশী দূর্বল করে দেয়। এছাড়াও হৃৎপিণ্ডের আকার বেড়ে যাওয়া, পায়ে খিল ধরা এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে হৃৎযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুর কারণ হিসেবে এই ভিটামিনের অভাব কাজ করে। স্নায়ু উদ্দীপক পদার্থ সংশ্লেষণে এটি ভূমিকা রাখে। সবচেয়ে বেশি থায়ামিন সমৃদ্ধ খাদ্যের মধ্যে রয়েছে: শূকরের মাংস, যকৃত, হৃৎপিণ্ড এবং বৃক্কের মাংস, ভাঁটিখানার ঈস্ট, চর্বিহীন মাংস, ডিম, ঢেকিছাটা চাল, শস্যদানা, গমের বীজ, বৈঁচী (এ ধরনের বীচিশূন্য ফল),চিনাবাদাম এবং শুঁটি। শস্যপেষাই কলের মাধ্যমে শস্যদানা ঝালঅই করার সময় এর থায়ামিনসমৃদ্ধ অংশগুলো নষ্ট হয়ে যায়। তাই চাল বা পেষাইকৃত গমে থায়ামিনের পরিমাণ কম থাকে। বর্তমানকালের গবেষণায় চাল ও গমে থায়ামিনের পরিমাণ বেশ বাড়ানো সম্ভব হয়েছে, তথাপি অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই সমস্যা রয়েই গেছে।

ভিটামিন বি টু বা রাইবোফ্ল্যাভিন

ভিটামিন বি২-এর রাসায়নিক নাম রাইবোফ্ল্যাভিন (C17H20N4O6)। রাইবোফ্ল্যাভিন থেকে ফ্ল্যাভিন মনোনিউক্লিওটাইড ও ফ্ল্যাভিন অ্যাডেনিন ডাইনিউক্লিওটাইড নামে দুটি সহ-উৎসেচক তৈরি হয়। এই সহ-উৎসেচক কার্বোহাইড্রেট, চর্বি এবং শ্বসনীয় আমিষ বিপাকে সাহায্য করে থাকে। শ্লেষ্মা ঝিল্লীর রক্ষণাবেক্ষণেও এর ভূমিকা রয়েছে। বি২-এর অভাবে যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় সেগুলো অতটা স্পষ্ট নয়। কিছু লক্ষণের মধ্যে রয়েছে: ত্বকের বিকৃতি (বিশেষত নাক ও ঠোটের চারপাশে) এবং আলোক সংবেদনশীলতা। রাইবোফ্ল্যাভিনের ভালো উৎসগুলোর মধ্যে আছে: কলিজা, দুধ, মাংস, গাঢ় সবুজ রঙের সব্জি, শস্যদানা, পেস্তা, পাউরুটি এবং মাশরুম।

ভিটামিন বি থ্রি বা নিকোটিনিক অ্যাসিড

এর রাসায়নিক নাম নায়াসিন (C6H5NO2) বা নিকোটিনিক এসিড। এটিও সহকারী উৎসেচক যা পুষ্টিকর খাদ্য থেকে শক্তির বিমুক্তকরণে সাহায্য করে। নায়াসিনের অভাব হলে অপুষ্টি রোগ দেখা দেয়। এর প্রাথমিক লক্ষণ হল ত্বকের যে অংশ সরাসরি সূর্যের আলো পায় সে অংশে বিভিন্ন স্ফোটক উদগত হয় যাতে মনে হয় সূর্যের আলোয় সে অংশ পুড়ে গেছে। পরবর্তী লক্ষনগুলো হল: লাল ও

ভিটামিন বি ফাইভ বা প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড

ভিটামিন বি সিক্স বা পাইরিডক্সিন

এর রাসায়নিক নাম পাইরিডক্সিন। ভিটামিন বি৬ শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে।

ভিটামিন এইচ বা বায়োটিন বা ভিটামিন বি সেভেন

ভিটামিন এইচের রাসায়নিক নাম হচ্ছে বায়োটিন (biotin - C10H16N2O3S) যা চর্বি বিপাকে সহায়তা করে। ডিমের কুসুম এবং কলিজায় এটি পাওয়া যায়। বায়োটিনের অভাবে ক্ষুধামন্দা, অন্তঃত্বকের কিছু রোগ, চুল পড়ে যাওয়া এবং অ্যানিমিয়া দেখা দেয়।[৯]

ভিটামিন এম বা ফোলিক অ্যাসিড বা ভিটামিন বি নাইন

সুতরাং, Vitamin আমাদের শরীরের জন্য খুব প্রয়োজনীয় পুষ্টি যা আমাদের দেহে হাড়, দাঁত, পেশী, ত্বক, রক্ত এবং চুল নির্মান এবং রক্ষণাবেক্ষণ এবং আমাদের মস্তিষ্ক, চোখ, স্নায়বিক এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভাল কাজ করার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করতে সক্ষম।



লেখক: সুশান্ত কুমার ঘোষ, ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ, ডিআইইউ মেডিকেল সেন্টার