হিপ জয়েন্ট পেইন বা ব্যথা কি?
হিপ জয়েন্ট পেইন বা ব্যথা হল হিপ জয়েন্টে বা তার চারপাশে অস্বস্তির অনুভূতি,যেখানে উরুর হাড়ের (ফিমার)উপরের প্রান্তটি হিপের হাড়ের সকেটে ফিট করে। হিপের ব্যথার অনেকগুলি কারণ রয়েছে,যার বেশিরভাগই হিপ এলাকায় অবস্থিত পেশী, হাড়,জয়েন্ট এবং টেন্ডনের অবক্ষয়,আঘাত বা প্রদাহের সাথে সম্পর্কিত। হিপের ব্যথার সাধারণ কারণগুলির মধ্যে রয়েছে আর্থ্রাইটিস,বারসাইটিস,হাড় ভাঙা,পেশীর খিঁচুনি এবং স্ট্রেন। হিপের ব্যথা এমন রোগের কারণেও হতে পারে যা মেরুদণ্ড এবং পিঠ থেকে বিকিরণ করে ব্যথা সৃষ্টি করে,যেমন সায়াটিকা এবং হার্নিয়েটেড ডিস্ক। হিপের ব্যথার একটি তত্ত্ব যা নিতম্বের আর্থ্রাইটিসে পরিণত হয় তা হল ফেমোরাল অ্যাসিটাবুলার ইম্পিংমেন্ট ডিসঅর্ডার।।আর্থ্রাইটিসের প্রারম্ভিক পর্যায়ে নিতম্বের ব্যথার কারণ হিসাবে এই অবস্থাটি তাত্ত্বিক।
হিপ জয়েন্ট পেইন বা ব্যথার কারণ?
হিপ ব্যথার বিভিন্ন উৎস রয়েছে। যাইহোক ৫০ বছরের বেশি মানুষের মধ্যে,তারা প্রায়শই অস্টিওআর্থারাইটিসের সাথে যুক্ত হয়।হিপ অস্টিওআর্থারাইটিস বা কক্সারথ্রোসিস,প্রায় ৩% প্রাপ্তবয়স্কদের হয়ে থাকে।
হিপ ব্যথার কারণটি আরও ভালভাবে সনাক্ত করতে হলে নিচের বিষয়গুলি জানতে হবেঃ
* ইতিহাস (কোন আঘাত আছে,একটি পতন,রোগী কি ক্রীড়া খেলেছে)
* ব্যথার অবস্থান (এটা কি হিপ, পা, পিঠের নিচের দিকে নেমে আসে বা কোন লাইন ধরে ব্যথা করে)
* ব্যথার ধরন ( মেকানিক্যাল বা যান্ত্রিক,প্রদাহজনিত, নাইট পেইন বা নিশাচর ব্যথা কিনা ইত্যাদি)
* সংশ্লিষ্ট লক্ষণ (কঠোরতা,অস্বস্তি এবং দৈনন্দিন জীবনে প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি)
নিতম্বের অস্টিওআর্থারাইটিসের জন্য বেশ কয়েকটি ঝুঁকির কারণ রয়েছে,যার মধ্যে রয়েছেঃ
- হেরেডিটি বা পারিবারিক ইতিহাস জনিত সমস্যা।
- খেলাধুলা বা পেশাগত এক্সারসাইজ জনিত সমস্যা।
- নিতম্বের কোন ধরনের ত্রুটি।
- ফ্রাকচার হিপ বোন বা হাড়ের।
বিভিন্ন ধরনের প্রদাহজনিত বাত যেমন,রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিসও নিতম্বকে ব্যথা তৈরি করতে পারে। অন্যান্য সম্ভাব্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছেঃ
- ফিমোরাল অস্টিওনেক্রোসিস (আংশিক ধ্বংস) বা পায়ের হড়ের পচন জনিত সমস্যা যেমন কর্টিকোস্টেরয়েডের দীর্ঘায়িত ব্যবহার,ডিসলিপিডেমিয়া,সিকেল সেল অ্যানিমিয়া (রক্তের রোগ)এয়ার এমবোলিজম ইত্যাদি।
- হিপ বোন বা হাড়ের অস্টিওপোরোসিস,বা কর্টিকোস্টেরয়েডের দীর্ঘায়িত খাওয়ার ফলে হয়ে থাকে।
- অন্যান্য আঘাতমূলক ব্যথা যেমন স্থানচ্যুতি বা স্থানচ্যুতি,ল্যাব্রামের টিয়ার, পোসাসের টেন্ডোনাইটিস (ইলিয়াক পোসাস এমন একটি পেশী যা কটিদেশীয় স্তরে এবং উরুর পূর্ববর্তী অংশে মেরুদণ্ডের সামনের অংশে সংযুক্ত থাকে)গ্লুটাসের টেন্ডোনাইটিস মধ্যম।
- ইনগুইনাল বা ক্রুরাল হার্নিয়া।
- হার্নিয়েটেড ডিস্ক, সায়াটিকা,স্পাইনাল স্টেনোসিস ইত্যাদির কারণে একটি স্নায়ু “পিঞ্চিং”।
- ক্যান্সার (হাড়ের মেটাস্টেস, লিউকেমিয়া ইত্যাদি)ইত্যাদি।
এক্স-রে বা এমআরআই ডাক্তারকে রোগ নির্ণয় করতে সাহায্য করতে পারে।
হিপ জয়েন্ট পেইন বা ব্যথার লক্ষণ
হিপের ব্যথা যে অবস্থার উপর নির্ভর করে বা যে কারনে হয় সেগুলো হলঃ
* উরু ব্যথা।
* জয়েন্ট ব্যথা।
* কুঁচকি ব্যথা।
* হিপের গতি হ্রাস।
* উষ্ণতা বা গরম ভাব।
* হিপের উপর ফোলা।
* হিপের কোমলতা।
* হিপের জন্য ঘুমাতে অসুবিধা।
* পাছায় ব্যথা।
* কখনও কখনও শরীরের অন্যান্য অংশ থেকে ব্যথা হয়,যেমনঃপিঠ বা কুঁচকি (হার্নিয়া থেকে),হিপে বিকিরণ করতে পারে।আপনি লক্ষ্য করতে পারেন যে আপনার ব্যথা কার্যকলাপের সাথে আরও খারাপ হয্ বিশেষ করে যদি এটি আর্থ্রাইটিসের কারণে হয়।ব্যথার পাশাপাশি আপনি গতির পরিসীমা হ্রাস করতে পারেন।কিছু লোকের ক্রমাগত হিপের ব্যথা থেকে একটি লম্পট তৈরি হয়।
হিপ ব্যথার প্রতিরোধ?
- দুর্বল ভঙ্গি এবং ভুল নড়াচড়া: বেশির ভাগ হিপের ব্যথার কারণ হয়। প্রতিদিনের চলাচলের সময়ও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। পশ্চার সঠিক ভাবে মেনে চলতে হবে।
- ভারী জিনিস উত্তোলন,ঘন ঘন বাঁকানো এবং
- প্রি ওয়ার্ম এক্সারসাইজ ছাড়া খেলাধুলার করা
- কম্পিউটারে খুব দীর্ঘ সময় বসে কাজ করা
দৈনন্দিন জীবনের কয়েকটি পরিবর্তন দ্বারা প্রতিকার করা যেতে পারে। যদি ভারী বোঝা তুলতে হয়,তবে নির্দিস্ট পন্থা অবলম্বন করতে হবে। হাটু ভেঙ্গে বসে তুলতে হবে। খেলাধুলা করার আগে ওয়ার্ম আপ করে নিতে হবে, মাংশপেশীর শক্তি বৃদ্ধি রাখতে হবে।
হিপ ব্যথা কীভাবে নির্ণয় করা যায়?
ডাক্তার সাধারণত কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে হিপের ব্যথার কারণ খুঁজে বের করতে পারেন পরীক্ষা এবং পাশাপাশি স্ক্যান , এক্স রে ও প্যথলজী টেস্ট করতে পারেন। কোন হাড় বিশেষজ্ঞ (অর্থোপেডিক সার্জন), রিমাটোলজিস্ট বিশেষজ্ঞ বা ফিজিওথেরাপিস্টও এ রোগ নির্নয় করতে পারেন।
*** সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য আপনার ডাক্তার আপনাকে একটি চেকআপ দেবে যা এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারেঃ
মেডিকেল ইতিহাসঃ এই প্রতিবেদনটি ডাক্তারকে আপনার শরীরে কোথায় কোথায় ব্যথা বা ফোলা আছে বা স্বাস্থ্যের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা তা খুঁজে পেতে সহায়তা করে।
শারীরিক চেকআপঃ এই পরীক্ষার সাহায্যে হিপ জয়েন্ট ফোলা হয়েছে বা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কিনা তা নির্ধারণ করা যায়?
রক্ত পরীক্ষাঃ এই ল্যাব পরীক্ষাটি রিউম্যাটয়েড বা লুপাসের মতো সংক্রমণ এবং অটোইমিউন রোগগুলির জন্য পরীক্ষা করে।
এক্স-রেঃ এই পরীক্ষাটি হিপ জয়েন্ট,নীচের অংশের হাড়ের ভাঙা বা ক্ষতি সনাক্ত করতে সহায়তা করে।
এমআরআই স্ক্যানঃ এই ইমেজিং পরীক্ষাটি হিপ পেশী, লিগামেন্টস এবং টেন্ডসগুলিতে আঘাত বা ক্ষতির জন্য চেক করতে সহায়তা করে।
শারিরীক পরীক্ষাঃ এটি হ’ল এক ধরণের শারীরিক পরীক্ষা যা হিপ জয়েন্টে চলাচলের মূল্যায়ন করে।
গেইট পরীক্ষাঃ এই পরীক্ষাটি আপনি যখন হাঁটেন তখন আপনার হিপ এবং পা কীভাবে নড়াচড়া করে তা পরীক্ষা করে।
হিপ জয়েন্ট পেইন বা ব্যথার চিকিৎসা
ব্যথা নাশক মেডিসিন: নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি মেডিসিন (এনএসএআইডি) আপনার ব্যথা কমাতে সাহায্য করার জন্য যেমন প্যরাসিটামল এবং আইবুপ্রোফেন খাওয়া যেতে পারে , বিশ্রাম নিতে হবে এবং হালকা ব্যায়াম করা যেতে পারে। যদি আপনার হিপের ব্যথার উন্নতি না হয়,তাহলে আরও পরামর্শের জন্য ডাক্তারের সাথে দেখা করা উচিত।
হিপ ব্যথার ফিজিওথেরাপি
একজন ফিজিওথেরাপিস্ট আপনার অবস্থা বুঝে নির্দিষ্ট থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ বা ব্যায়াম এবং বিভিন্ন ম্যানুয়াল টেকনিক এপ্লাই করে হিপকে নড়াচড়াতে সাহায্য করতে সক্ষম হবে।
প্রশিক্ষিত ও বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক হিপের ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে এবং বিভিন্ন ধরনের থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ এর মাধ্যমে পেশী শক্তিশালীকরণ এবং স্বাধাবিক জীবনে ফিরে আসতে সহায়তা করে। আপনার হিপকে আবার সঠিকভাবে চলতে সাহায্য করে।
ফিজিওথেরাপি নিচের কাজগুলো করে থাকে:
- দুর্বল পেশী শক্তিশালী করা ও ফাংশন উন্নতি করা।
- আপনার অঙ্গবিন্যাস উন্নত করার পরামর্শ।
- জয়েন্ট শক্ত হওয়া থেকে প্রতিরোধ করার জন্য ব্যায়াম।
- জয়েন্ট মুভমেন্ট পরিসীমা বৃদ্ধি ব্যায়াম।
- সফট টিস্যুতে চাপ কমাতে এবং হিপের এবং পিঠের অবস্থান সম্পর্কে আপনার সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করে।
-ম্যানিপুলেশন ও মবিলাইজেশন এর মাধ্যমে সফট বা নরম টিস্যু এবং জয়েন্টগুলির সমস্যা সমাধান করে।
হিপ ব্যথার সার্জারি
হিপ ব্যথায় আক্রান্ত প্রত্যেকেরই অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয় না। হিপ ফ্র্যাকচারের জন্য,হাড়কে স্থিতিশীল করতে এবং এটিকে যথাস্থানে ধরে রাখতে অনেক সময় অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। হিপ বলের প্রতিস্থাপনও প্রয়োজন হতে পারে।
লেখক: সুশান্ত কুমার ঘোষ, ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ, ডিআইইউ মেডিকেল সেন্টার
