Author Topic: পারকিনসন ডিজিজ বা অনিয়ন্ত্রিত হাতের কাঁপুনি হওয়ার কারণ ও চিকিৎসা  (Read 1519 times)

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

Dr. Sushanta Kumar Ghose

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 363
  • Gender: Male
    • View Profile
হাতের কাঁপুনি বন্ধ করতে পারছেন না। কথা বলার সময় কাঁপুনি আরও বেড়ে যায়। হাত-পায়ে শক্তিও কম পান।এই ধরনের সিচুয়েশনে অনেকেই পড়তে পারেন।অনিয়ন্ত্রিত হাতের কাঁপুনি কে মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রের রোগ   বা পারকিনসন ডিজিজ বলা হয়।



পারকিনসন ডিজিজ এর উপসর্গ
পারকিনসন ডিজিজ হচ্ছে মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রের রোগ। আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের খুবই গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক পদার্থের নাম ডোপামিন। যখন কোনো কারণে এই ডোপামিন সৃষ্টি না হয় বা যদি এর কার্যক্ষমতা নষ্ট যায়, তখন আমাদের শরীর তার স্বাভাবিক নড়াচড়ার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এই রোগের উপসর্গ অনেক। ব্যক্তি ভেদে উপসর্গ আলাদা হতে পারে। দেখে নিন সেগুলো কী কী….



১) শরীরে অনিয়ন্ত্রিত ঝাঁকুনি
বিশেষ করে হাত বা আঙ্গুল কাঁপার কারণে হাতের লেখার পরিবর্তন হতে দেখা যায়। হাতের লেখায় জড়তা দেখা দেয় অথবা সিগনেচার বা স্বাক্ষর করার সময়ে হাত কাঁপে। বড় বড় অক্ষরে লেখা শুরু করে লেখাগুলো ছোট হতে শুরু করে।

২) শরীরের জয়েন্টে নড়াচড়া করার ক্ষমতা কমে যাওয়া
পারকিনসন ডিজিজ এ আক্রান্ত হলে হাত পায়ের জয়েন্ট শক্ত হয়ে যায় এবং চলাফেরায় সমস্যা দেখা দেয়। এ ধরনের সমস্যায় হাঁটা-চলা, দাঁত ব্রাশ করা, শার্টের বোতাম লাগানোর সমস্যা, নিজের হাতে খাবার খাওয়া, পানি ভর্তি গ্লাস ধরে রাখতে না পারা অথবা চা/পানি পান করতে সঠিক ব্যালেন্সের সমস্যা হয়। এমনকি ফল ও তরকারি কাটার সময়ও জড়তা অনুভূত হয়।

এছাড়াও আরও অনেক উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন-

  • ঘাড়, হাঁটু ও বিভিন্ন মাংসপেশিতে ব্যথা অনুভব করা
  • শক্তি কমে যাওয়া
  • ঘ্রাণ শক্তি হ্রাস পাওয়া অর্থাৎ খাবার বা ফুলের ঘ্রাণ কম অনুভব করা
  • কথা বলার ক্ষমতা হারানো
  • হঠাৎ করে কথা বলার ধরন পরিবর্তন
  • একই শব্দ একাধিকবার বলা
  • অতিরিক্ত মানসিক অবসাদ বা আনন্দঘন মুহূর্তে হাত কাঁপার সমস্যা বেশি হওয়া
  • ডিপ্রেশন বা মানসিক অবসাদ
  • অনিয়ন্ত্রিত প্রস্রাব, কোষ্ঠকাঠিন্য
  • খাবার গিলতে সমস্যা
  • ঘুম কমে যাওয়া
  • যৌন ক্ষমতা হারানো
এছাড়াও কিছু মানসিক কিছু সমস্যা দেখা যায়, যেমন- ভুলে যাওয়া, একই ঘটনাকে এক এক জনের সাথে বিভিন্নভাবে বলা ইত্যাদি।



কারণ কী?
আসলে ঠিক কী কারণে পারকিনসন রোগটি হয় তা এখনো ভালোভাবে জানা যায়নি। পারকিনসন একধরনের নিউরো ডিজেনারাটিভ বা স্নায়বিক রোগ। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন এটি আসলে জিনগত ও রাসায়নিক পদার্থের সমষ্টিগত প্রভাবে হয়। যদি কোনো কারণে কলখারকানার রাসায়নিক পদার্থ বা ফসলের মাঠে ব্যবহৃত কীটনাশক বা বালাইনাশক আমাদের শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে তা হলেও এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

পারকিনসন ডিজিজ কাদের হয়?
যে কারোই এই রোগটি হতে পারে তবে কিছু কারণে কারও কারও এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যদি কারও নিকট আত্মীয়ের এই রোগ থাকে, তাহলে তার এই রোগটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেমন- বাবা, মা, দাদা-দাদির থাকলে এ রোগ হবার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। নারীদের চেয়ে পুরুষদের (পঞ্চাশ ঊর্ধ্ব ব্যক্তি) এই রোগটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যারা অনেক দিন যাবত নিয়মিত নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থের মধ্যে কাজ করেন, যেমন- কলখারকানার শ্রমিক, কৃষক এদের ক্ষেত্রে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

চিকিৎসা



পারকিনসন ডিজিজ সম্পূর্ণভাবে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে চিকিৎসার মাধ্যমে রোগের প্রকোপ বেড়ে যাওয়া প্রতিরোধ করা যায়। উপসর্গ কমানোর জন্য চিকিৎসকেরা ব্যবস্থা নেন। এ রোগের চিকিৎসায় বেশি জরুরি হলো, রোগীর মাংসপেশির কার্যক্ষমতা ঠিক রাখা এবং জয়েন্টগুলো যাতে শক্ত না হয়, সেজন্য প্রয়োজন সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা। কিছু মেডিসিনের মাধ্যমে মস্তিকের ডোপামিন লেভেল ঠিক রাখা যায়। এ জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসা নিতে হবে। রোগের শুরুতেই চিকিৎসা নেওয়া হলে রোগকে কন্ট্রোল করা সহজ হয়।

পারকিনসন ডিজিজ বা অনিয়ন্ত্রিত হাতের কাঁপুনি হওয়ার কারণ ও চিকিৎসা নিয়ে আজ আমরা অনেক কিছু জানলাম। নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে দিন শুরু করুন। ভিটামিন ডি ও সি যুক্ত খাবার আপনার খাদ্যতালিকায় রাখুন। লক্ষণ দেখা যাওয়া মাত্রই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। আজ তাহলে এই পর্যন্তই! সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন।


লেখক: সুশান্ত কুমার ঘোষ, ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ, ডিআইইউ মেডিকেল সেন্টার