এ্যাজমা হল শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ। এর কিছু লক্ষণ হল শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, শ্বাসের সময় শব্দ হওয়া, বুকে ব্যথা অনুভব, কাশি। এসব লক্ষণ সাধারণত রাতের দিকে বেশি অনুভূত হয়। এ রোগে বাইরে থেকে কিছু স্টিমুলেটিং বস্তু বা এ্যালার্জি শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহের সৃষ্টি করে এবং এর গঠনগত পরিবর্তন করে। এর ফলে বায়ু চলাচলের পথ সরু হয়ে শ্বাস কষ্ট হয়। গর্ভাবস্থায় শ্বাসকষ্ট ঘটাতে পারে এমন কিছু কারণ হচ্ছে –
শ্বাসকষ্ট হওয়ার কারণ• ধুলোবালি, ফুলের রেনু , ঠান্ডা আবহাওয়া
• শারীরিক পরিশ্রম, ব্যায়াম
• পরিবেশ দূষণ , সিগারেটের ধোঁয়া
• মানসিক চাপ
• প্রেগন্যান্সি
গর্ভাবস্থায় শ্বাসকষ্ট হওয়ার কারণবাচ্চা গর্ভে থাকা অবস্থায় মায়েদের অল্প-বেশি শ্বাসকষ্ট হওয়া একটি সাধারণ বিষয়। কারণ গর্ভাবস্থায় ফুসফুসের অবস্থানের পরিবর্তন ও হরমোনের তারতম্যের কারণে এমনটি হয়ে থাকে। তাই এ সময় কেউ যদি প্রথমবারের মত এ্যাজমার লক্ষণ নিয়ে আসে তবে তা নির্নয় করা কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ এটি স্বাভাবিক প্রেগ্ন্যান্সির কারণে হতে পারে আবার অন্যান্য প্যাথলজিও থাকতে পারে, যেমন এ্যাজমা, থাইরয়েড হরমোনের এ্যাবনরমালিটি, রক্ত শুন্যতা ইত্যাদি। তাই এ্যাজমা নির্ণয়েরজন্য দরকার সঠিক হিস্ট্রি ও পর্যবেক্ষণ।
গর্ভবতী নারীদের প্রতি একশত জনে তিন থেকে চার জন এ্যাজমায় ভুগে থাকে। গর্ভকালীন সময় কারো কারো ক্ষেত্রে শ্বাস কষ্ট বাড়ে এবং নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যায়, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে অপরিবর্তিত থাকতে পারে অথবা আগের চেয়ে শ্বাস কষ্ট কমেও যেতে পারে।
অনিয়ন্ত্রিত এ্যাজমা গর্ভধারনকালীন সময়ে মা ও বাচ্চার জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে যেমন, কম ওজনের বাচ্চা জন্মদান, সময়ের আগেই বাচ্চা প্রসব, মায়ের ব্লাড প্রেসার বেড়ে যাওয়া, প্রি-এক্লাম্পসিয়া ইত্যাদি। পরিনতিতে অনিয়ন্ত্রিত এ্যাজমা মা ও বাচ্চার অধিক মৃত্যু ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে এ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে থাকলে তা প্রেগনেনসিতে তেমন ক্ষতিকর নয়।
গর্ভাবস্থায় শ্বাসকষ্ট বা এ্যাজমা আক্রান্ত মায়েদের কিছু করণীয়যেসব গর্ভবতী মায়ের এ্যাজমা আছে বা গর্ভাবস্থায় এটি ধরা পড়েছে তাদের উচিত প্রথম থেকেই একজন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নিয়মিত তত্বাবধানে থাকা। প্রত্যেক মায়ের শ্বাস কষ্টের পরিমাণ অনুযায়ী আলাদা চিকিৎসা প্লান থাকে। শ্বাস কষ্টের জন্য প্রচলিত দুটি ইনহেলার হল beta adrenargic agonist ও corticosteroid ইনহেলার। এছাড়া অন্যান্য মুখে খাবার ঔষধের মধ্যে রয়েছে থিওফাইলিন, মন্টিলুকাস্ট, কিটোটিফেন, স্টেরয়েড ট্যাবলেট। এ্যাজমা আক্রান্ত মায়েদের একটি বিষয়ে নিশ্চিন্তকরা প্রয়োজন যে এ রোগে ব্যবহৃত এই ঔষধগুলো গর্ভের বাচ্চার জন্য নিরাপদ। দেখা যায় অনেকেই গর্ভস্ত বাচ্চার ক্ষতির কথা ভেবে ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে হঠাৎ করে ঔষধ খাওয়া বন্ধ করে দেন, যার ফলে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ার আশংকা থাকে এবং অনেক সময় তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
হজমে সমস্যা বা বুক-জ্বালা পোড়া এ্যাজমার প্রকোপ বাড়াতে পারে। তাই ঔষুধের মাধ্যমে এসিড নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, একবারে বেশি না খেয়ে বার বার অল্প করে খেতে হবে এবং খাওয়ার তিন থেকে চার ঘণ্টা পর শুতে যাওয়া উচিত।
যে মায়েদের গর্ভাবস্থায় শ্বাসকষ্ট মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে তাদের উচিত গর্ভধারণের সাত মাস পর হতেই নিয়মিত বাচ্চার নড়া চড়া খেয়াল করা। বাচ্চার নড়া চড়া কম মনে হলে তা ডাক্তারকে জানানো উচিত।
যেসব এ্যালার্জি জাতীয় দ্রব্যাদির কারণে এ্যাজমার প্রকোপ বাড়তে পারে তা থেকে দূরে থাকে হবে। এতে করে ঔষধ ব্যবহারের পরিমাণ কম থাকবে।
এ্যাজমার প্রকোপ কমাতে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভেকসিন দেয়া যেতে পারে যা গর্ভধারণকালীন যেকোন সময় দেয়া যায়।
গর্ভাবস্থায় শ্বাসকষ্ট আক্রান্ত মায়েদের নিয়মিত তাদের বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে উৎসাহিত করা হয়, এতে করে বাচ্চা মায়ের কাছ থেকে তার প্রয়োজনীয় এ্যান্টিবডি পাবে যা তাকে পরবর্তীতে এ্যাজমা বা যেকোন এ্যালার্জির আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখবে।