Author Topic: বয়স অনুযায়ী শিশুর খাদ্যতালিকা যেমন হওয়া উচিৎ  (Read 1950 times)

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

Dr. Lamia Tahsin Kamal Purnata

  • Newbie
  • *
  • Posts: 21
  • Gender: Female
    • View Profile
একটি শিশুর বেড়ে উঠা এবং পর্যাপ্ত পুষ্টির জন্য সঠিক মাত্রা ও সুষম খাদ্য গ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সদ্য জন্ম নেওয়া নবজাতক থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের শিশুদের দৈহিক পুষ্টির চাহিদা এবং খাদ্যতালিকাও এক নয়। বয়স অনুযায়ী তৈরি করতে হবে শিশুর সঠিক খাদ্যতালিকা।




টিভির বিজ্ঞাপনের মতো আরাবিও এইমাত্র সুজির চামচ মুখে নিল কি নিল না দিল ভো দৌড়, এদিকে আরাবির আম্মুও বাটি নিয়ে পিছু পিছু দৌড়। যেন টম এন্ড জেরি খেলা। খুব ছোট বয়সে পুষ্টিকর খিচুড়ি জাতীয় খাবারও তাকে খাওয়াতে হতো জোর করে করে। ফলস্বরূপ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব, পুষ্টিহীনতা, অ্যানিমিয়া একের পর এক রোগ লেগেই থাকে। আর আছে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যের প্রতিই যত ঝোঁক। ফল-সবজি খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করানো কিংবা প্রচেষ্টা করার দুঃসাহস ও যেন করতে পারছেন না। মাঝে মাঝে বুঝেও উঠতে পারছেন না সঠিক বয়সে কোন খাবার কিভাবে দেওয়া উচিত। শিশুদের বয়স অনুযায়ী খাদ্য ও পুষ্টি তালিকা নিয়ে মায়েদের নিত্যদিনের ভোগান্তি এবং তা জানার অভাব-আগ্রহ নিয়েই আজকের এই আয়োজন।

প্রথম ৬ মাসের জন্য, বুকের দুধ বা ফর্মুলা (যদি মায়ের দুধ না পেয়ে থাকে) হল একমাত্র খাবার যা একটি নবজাতকের সকল পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে। এরপরে শিশুর অন্যান্য খাবার খাওয়ার লক্ষণ দেখা দিলে একটু করে শক্ত খাবার শুরু করাতে হবে। প্রথমে ছোট্ট সোনামণিদের প্রতিদিন মাত্র কয়েক চা চামচ করে এক-উপাদানযুক্ত খাবার (যেমন একটি বিশুদ্ধ ফল বা  শাকসবজি বা মাংস) দিয়ে শুরু করতে হবে। কয়েক মাসের মধ্যে শিশুরা বিভিন্ন খাবার এবং দিনে এক থেকে দুই খাবারের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। ৮ থেকে ১২ মাস বয়সের মধ্যে শিশুদের মাঝে বিভিন্ন খাবারের প্রতি উৎসাহ খেয়াল করা যায় যারা মায়ের হাতের নরম খাবার উপভোগ করতে থাকে এবং প্রতিদিন তিন বেলা খাবারের সাথে হালকা নাস্তাও খেতে চায়।




নবজাতক থেকে ছয় মাস




নবজাতক সহ দুই বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের দৈহিক ও মানসিক সুষ্ঠ বিকাশের জন্য মায়ের বুকের দুধ অন্যতম ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে সন্তান প্রশবের পর প্রথম যে হলুদ বর্ণের শাল দুধ রয়েছে তা নবজাতকের প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও অন্যান্য পুষ্টিগুণ সরবরাহের জন্য দায়ী। কিন্তু অধিকাংশ মা ই তা নবজাতকের জন্য তা ক্ষতিকর আশংকা করে, কুসংস্কারে বিশ্বাসী হয়ে ফেলে দেন যা একদম উচিত নয় বরং শিশুর জন্য এই শাল দুধ না পাওয়াটা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

জন্ম হওয়ার পর থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে মায়ের বুকের দুধ ছাড়া অন্য কোন ধরনের খাবার, পানীয়, গরু-ছাগলের দুধ, প্রক্রিয়াজাত দুধ, পান করানো থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়াও শিশুকে বুকের দুধ পান করানোর ফলে মাতৃস্বাস্থ্যের বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার (স্তন,জরায়ু ইত্যাদি) ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
তবে শিশু যদি যথাযথ ভাবে নায়ের দুধ না পেয়ে থাকে তবে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।




৬ মাস থেকে ১২ মাস



ছয় মাস থেকে এক বছর বয়সী শিশুদের প্রধান খাদ্য মায়ের বুকের দুধ এর পাশাপাশি দুই থেকে তিনবেলা অল্প পরিমাণে অন্যান্য খাবার দেওয়া প্রয়োজন।

- নরম ও সহজপাচ্য হবে এমন চাল-ডাল-সবজি সহযোগে খিচুড়ি

- ফল বা ফলের রস

- অল্প ডিম বা অল্প কুসুম (অবশ্যই পুষ্টিগুণ ঠিক থাকে এরকম ভাবে রান্না করা অথবা উত্তম হয় সেদ্ধ করলে)

- অল্প মাছ (ভালভাবে কাঁটা ছাড়িয়ে মিশিয়ে খাবার উপযোগী করে দেওয়া)

- সুজি

- সাবু

- ঘরে তৈরিকৃত ভেজালহীন স্বাস্থ্যকর খাবার, তরকারি, ইত্যাদি।

এসকল খাবার ধাপে ধাপে অল্প অল্প পরিমাণে শিশুর দৈনিক খাদ্য তালিকার সংযুক্ত করা।

একঘেয়েমি এড়ানোর জন্য নিত্যনতুন খাদ্যতালিকা পরিবর্তন করা ও শিশু নিজে থেকে আগ্রহী বা আকৃষ্ট হয় এরূপ ভাবে খাদ্য পরিবেশন করা। এটি শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ সাধনে সহায়তা করবে।

এছাড়া জোরপূর্বক কোন প্রকার খাবার গ্রহণে শিশু কে বাধ্য না করাই উত্তম এবং সেই সাথে ওন খাবার গ্রহণে শিশুর দৈহিক বিকাশ কিরুপ হচ্ছ, তার পাকস্থলীয় হজমশক্তি কিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, এলার্জিক প্রতিক্রিয়া কিরূপ মাত্রায় প্রদর্শন করছে কিনা ইত্যাদি বিষয়েও সজাক দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।




১ বছর থেকে ২ বছর



এই সময় শিশু নরম ও শক্ত উভয় ধরনের খাবার গ্রহণের জন্য যথেষ্ট পরিপক্ক হয়। এ সময় থেকেই শিশুর দৈহিক বিকাশ তুলনামূলক দ্রুত হয়। তাই খাদ্য পিরামিড, পুষ্টি পিরামিড থেকে সকল ধরনের পুষ্টিমান বহন করে এরূপ খাবারগুলো বাছাই করা উচিত।

বিভিন্ন ধরনের সবুজ ও রঙ্গিন শাক-সবজি (অবশ্যই সঠিক পদ্ধতিতে সহজপাচ্য করে রান্না করা)

ফল যা চোখ এর দৃষ্টিশক্তি বিকাশ ও বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে

মাছ, মাংস, ডিম, গরুর দুধ, দুগ্ধজাত খাবার-মিষ্টান্ন গ্রহণে উদ্ধুদ্ধ করা যা হাড়ের বিকাশ, গঠন,দৃঢ়তা দানে, মানসিক বিকাশ ঘটাতে ভূমিকা রাখে

ঘরে তৈরি কৃত অন্যান্য খাবার অল্প পরিমাণে শিশুর সাথে পরিচিত করা ও গ্রহণে আগ্রহী করে তোলা

প্রতিদিন খাদ্য গ্রহণের নির্দিষ্ট  সময়, পরিমাণ, নিজস্ব পছন্দ বুঝতে পারা এবং বুঝাতে পারা ইত্যাদি সম্পর্কে অভ্যস্ত করে তোলাও জরুরী।




২ বছর এর অধিক বয়সী



এরুপ বয়সের শিশুদের দৈনন্দিন স্বাভাবিক খাবারের সাথে ধাপে ধাপে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে।

শুধু মাত্র সহজপাচ্য, তরল বা নরম নয় বরং শক্ত, তৈলাক্ত, তুলনামূলক পরিমাণ বৃদ্ধি করে এমন সব ধরনের স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণে উৎসাহিত ও অভ্যস্ত করা উচিত।

জাঙ্ক ফুড এবং কোমল পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে। ক্রিস্প, কুকিজ, কেক, সোডা এবং ক্যান্ডির মতো কারখানায় তৈরি স্ন্যাকসগুলি অস্বাস্থ্যকর। এগুলিতে প্রচুর পরিমাণে চিনি, লবণ, চর্বি এবং রাসায়নিক রয়েছে যা শিশুর জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।





শিশুদের বাড়ন্ত শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টি যেন অনীহায় ফেলে রাখা বাটিতেই না রয়ে যায়। একটি সুস্থ ও সৃজনশীল ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ার জন্য মায়েদের প্রচেষ্টা হোক আরও সহজ ও সুন্দর।





















source: aastha.life/