Author Topic: গর্ভধারণে ব্যর্থতা | কারণ ও প্রতিকার জানা আছে কি?  (Read 2137 times)

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

Mr. Rasel

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 516
  • Gender: Male
    • View Profile
মাতৃত্ব একজন নারীর জীবনের সবচেয়ে আকাঙ্খিত অনুভূতি। প্রত্যেকটি মেয়েই চায় মা হতে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে সব মেয়েই মা হতে পারে না। গর্ভধারণে ব্যর্থতা বা ইনফার্টিলিটি (infertility) আজকের দিনে খুব সাধারণ একটি ঘটনা।যদিও আমাদের সমাজে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেয়েদের দায়ী করা হলেও এর জন্য নারী বা পুরুষ উভয়েরই ব্যর্থতা থাকতে পারে ।

ইনফার্টিলিটি কী?
যখন কোন নারী এক বছর বা তারও বেশি সময় চেষ্টা করার পরও গর্ভধারণে ব্যর্থ হয় তখন সেই সমস্যাকে ইনফার্টিলিটি বলে।
•     প্রাইমারী ইনফার্টিলিটি
যদি কোন নারী কখনোই সন্তান ধারণে সক্ষম না হন তখন সেই  ইনফার্টিলিটিকে বলা হয় প্রাইমারী ইনফার্টিলিটি।
•   সেকেন্ডারী ইনফার্টিলিটি
যখন একজন নারীর সফলভাবে কমপক্ষে একটি সন্তান ধারণের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকে তখন সেই ঘটনাকে বলে সেকেন্ডারী ইনফার্টিলিটি।

গর্ভধারণে ব্যর্থতা কী কারণে হয়?
ইনফার্টিলিটি শুধু মহিলাদের  সমস্যা নয়। পুরুষরাও ইনফার্টাইল (Infertile) হতে পারে। মহিলা এবং পুরুষ সমানভাবে এই সমস্যার জন্য দায়ী হতে পারে। মহিলাদের  স্বাস্থ্য সম্পর্কিত এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ইনফার্টিলিটির জন্য মহিলাদের  অক্ষমতা এক-তৃতীয়াংশ ভাগ দায়ী। বাকিটুকুর জন্য যথাক্রমে পুরুষের অক্ষমতা, নারী ও পুরুষ উভয়ের সমস্যা এবং অজানা কিছু কারণকে দায়ী করা হয়। তাদের গবেষণায় আরো উঠে আসে , প্রায় ২০  আমেরিকান নারী ৩৫ বছরের বেশি বয়সে সন্তান ধারণ করছে; যা কিনা বয়সের সাথে ইনফার্টিলিটির সম্পর্কটা একটু হলেও জোরদার করে। যদিও চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্রমাগত উন্নতির এ যুগে এ ধরনের পরিসংখ্যান নিয়ে অনেকেই দ্বিমত পোষণ করে থাকে।

পুরুষের  ইনফার্টিলিটির  কারণ

পুরুষদের ইনফার্টিলিটি সাধারণত  নিচের কিছু ফ্যাক্টর-এর সাথে সম্পর্কিত আর তা হলো-
স্পার্ম (Sperm) বা শুক্রাণুর –
•   উৎপাদন
•   সংখ্যা
•   আকার
•   চলাচল
ঝুঁকির কারণগুলি কী কী?
•   বেশি বয়স
•   ধূমপান
•   মদ্যপান
•   অতিরিক্ত ওজন
•   কীটনাশক বা ভারী ধাতুর সংস্পর্শে  আসা

মহিলাদের ইনফার্টিলিটির কারণ

এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেমন-
•   যখন পরিণত ডিম্ব (0very) থেকে বেরিয়ে আসে
•   ফেলোপিয়ান নালীতে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলন হলে
•   জরায়ু প্রাচীরে নিষিক্ত ডিম্ব ধীরে ধীরে বেড়ে উঠলে।
ঝুঁকির কারণগুলি কী কী?
•   বেশি বয়স
•   ধূমপান
•   মদ্যপানের অভ্যাস
•   ওজন অতিরিক্ত কম বা বেশি হওয়া
•   সেক্সচুয়ালি ট্রান্সমিটেড ইনফেকশন থেকে থাকলে

গর্ভধারণে ব্যর্থতা সমস্যার চিকিৎসা
যেসব নিঃসন্তান দম্পতি গর্ভধারণে ব্যর্থতা সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে চিকিৎসা নিতে চান, তাদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় জড়িত থাকে। যেমন
১) ইনফার্টিলিটির কারণ (যদি জানা থাকে)
২) কত দিন ধরে কনসিভ করার চেষ্টা করছে
৩) স্বামী-স্ত্রীর বয়স
৪) স্বামী-স্ত্রীর সার্বিক স্বাস্থ্য অবস্থা
৫) চিকিৎসা পদ্ধতির ব্যাপারে নিজস্ব পছন্দ

পুরুষদের জন্য চিকিৎসা
পুরুষদের  চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে সার্জারী, ঔষধের মাধ্যমে চিকিৎসা, অ্যাসিস্টেড রি-প্রোডাকটিভ টেকনোলোজির মাধ্যমে চিকিৎসা।
মহিলাদের  জন্য চিকিৎসা
মহিলাদের জন্য পুরুষদের মতোই চিকিৎসা পদ্ধতি থাকলেও বর্তমানে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির কল্যাণে সার্জারীর মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের হার অনেকটাই কমেছে।
অ্যাসিস্টেড রিপ্রোডাকটিভ টেকনোলোজির (A.R.T)  মাধ্যমে চিকিৎসার মধ্যে আই. ভি. এফ ( IVF) এখনকার দিনে একটি ফলপ্রসূ পদ্ধতি। যে সমস্ত ঔষধ নারীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় সেগুলো সাধারণত তাদের শরীরে হরমোনের মতো কাজ করে এবং ওভ্যুলেশনে সাহায্য করে।
এছাড়া প্রাকৃতিকভাবেও কিছু  চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে যা অনেক ছোট সমস্যার দ্রুত সমাধান আনে। তার মধ্যে রয়েছে-
•   আকুপাংচার
•   যোগব্যায়াম
কিছু কিছু ভিটামিন ও মিনারেলস  ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তার মধ্যে রয়েছে-
•   ফোলেট
•   জিংক
•   ভিটামিন সি
•   ভিটামিন ই
•   আয়রন
•   এছাড়াও ওমেগা- ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যা কিনা সামুদ্রিক মাছে পাওয়া যায় ফার্টিলিটিতে খুবই সহায়ক
তাছাড়া সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, গ্রীন-টি এর অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট একটি সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যদিও এর ভূমিকা নিয়ে অনেকে দ্বিমত পোষণ করেন।

গর্ভধারণে ব্যর্থতা সচেতনতায় ডায়েট
কিছু পথ্য নির্দেশকা ফার্টিলিটি ডায়েটের মধ্যে আছে যেগুলি ইনফার্টিলিটি প্রতিরোধে বা ফার্টিলিটি ক্ষমতা বাড়াতে পরোক্ষ ভূমিকা পালন করে।
১) শাকসবজি ও ফলমূল-  রিফাইন্ড জাতীয় খাবার এড়িয়ে ফাইবার জাতীয় খাবার যেমন-শাকসবজি ও ফলমূল গ্রহণের উপর জোর দিতে হবে।
২) অতিরিক্ত তেল জাতীয় খাবার-  অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার বাদ দিতে হবে।
৩) দুধ- সরসহ দুধ বা দুধ জাতীয় খাবার গ্রহণের অভ্যাস করতে হবে।
৪) অতিরিক্ত তেল মসলা জাতীয় খাবার বাদ দিয়ে অল্প তেল মসলা দিয়ে রান্না করা পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের অভ্যাস করতে হবে।

নির্দেশকাগুলোর সাথে সাথে সুস্থ নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন পদ্ধতি এই সমস্যার একটি পরোক্ষ সমাধান।