ব্লাড ক্যান্সার বা লিউকোমিয়া (Leukemia) এক ধরনের ব্লাড ক্যান্সার যা মানুষের রক্তের মাঝে থাকা শ্বেত রক্ত কণিকা গুলোকে আক্রমণ করে। শ্বেত রক্ত কণিকা সাধারণত আমাদের শরীরের অ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। যেসব মানুষ লিউকোমিয়াতে ভোগেন তাদের রক্তের শ্বেত রক্ত কণিকাগুলো কার্যক্ষম হয় না। যার কারণে রোগীর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় এবং আক্রান্ত ব্যক্তি খুব দ্রুতই ভয়ানক অবস্থায় চলে যেতে পারেন।
লিউকোমিয়া যে কারো হতে পারে। তাই আগে থেকে এর লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানা থাকলে শুরু থেকেই চিকিৎসা করানো সম্ভব।
লিউকোমিউয়ার লক্ষণ ১. ফ্লু
লিউকোমিয়ার ক্ষেত্রে সবচাইতে কমন যে লক্ষণ চোখে পড়ে সেটা হচ্ছে ফ্লু। লিউকোমিয়া হলে শরীরের অ্যান্টিবডি যখন কাজ করা বন্ধ করে দেয় তখন সবার আগে শরীরে ফ্লু-এর সংক্রমণ হয়। যদি দুই/তিন দিন পর ফ্লু ভালো হয়ে যায় সেটা সাধারণ ফ্লু-এর লক্ষণ। কিন্তু যদি টানা জ্বর, শীত করা, ক্লান্তি- অনুভূত হয় তবে দ্রুত ডাক্তার দেখানো জরুরী।
২. অবসাদ
অবসাদ লিউকোমিয়ার অন্যতম উপসর্গ। এই রোগে আক্রান্ত রোগী খুব অবসাদে ভোগেন এবং এটি সাধারণ অবসাদের থেকে ভিন্ন এবং মাত্রায় অনেক বেশি হয়ে থাকে। লিউকোমিয়া রোগের প্রথম ধাপ থেকেই অবসাদের ব্যাপারটা শুরু হলেও অনেকে এটিকে এড়িয়ে যান। কিন্তু যদি কেউ কখনো টানা তীব্র অবসাদ অনুভব করেন তবে তার দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
৩. ওজন হ্রাস
লিউকোমিয়া রোগী নিয়মিত ওজন হারাবেন। ওজন অনেক কারণেই কমতে পারে তবে সেটা একসময় থেমে যায় এবং ওজন ঘাটতি পূরণও হয়ে যায়। কিন্তু লিউকোমিয়ার ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রতিনিয়ত ওজন হারাতে থাকবেন। সেই মুহুর্তে নিয়মিত খাওয়া দাওয়া কিংবা পুষ্টিকর খাবারেও লাভ হয় না।
৪. অল্পতেই রক্তপাত
লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির খুব সহজেই রক্তপাত হওয়ার হার অনেক বেশি। এর কারণ হচ্ছে লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত হলে ব্যক্তির রক্তে লোহিত রক্ত কণিকা ও অনুচক্রিকা বা প্লেটলেটের হার অনেক কমে যায়, যা এনেমিয়ারও লক্ষণ। এই কারণে চামড়ায় সামান্য আঘাতেই অনেক রক্তপাত হয়। কারো সাথে এই ব্যাপারটি ঘটলে ব্যাপারটা খেয়াল রাখা উচিত কারণ এটি লিউকোমিয়ার অনেক বড় একটি লক্ষণ।
৫. শরীরে রক্ত জমাট বেঁধে দাগ হওয়া
লিউকোমিয়া হলে শরীরে বিভিন্ন জায়গায় রক্ত জমাট বেঁধে চামড়ার ভেতরে দাগ হয়ে যাবে। অনেক সময় চামড়ায় ঘষা লেগে কিংবা চাপ লেগে লাল হয়ে যেতে পারে। কিন্তু লিউকোমিয়ার ক্ষেত্রে উপসর্গটি সম্পূর্ণ আলাদা। চামড়ায় চাকা চাকা লাগ দাগ হয়ে যাবে এবং অনেক ক্ষেত্রে ফুলতেও পারে।
৬. ইনফেকশন
লিউকোমিয়া রক্তে থাকা শ্বেত রক্ত কণিকা নষ্ট করে দেয় বিধায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। যার ফলে জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া খুব সহজেই চামড়ায় ইনফেকশনের সৃষ্টি করতে পারে। তাই চামড়ার সামান্য আঘাতে যদি কখনো ইনফেকশন-এর সৃষ্টি হয় তবে তা লিউকোমিয়ার লক্ষণ হিসেবেই ধরা হয়।
৭. হাড় ব্যথা
যদি আপনার হাড়ে অযথাই ব্যথা হয়, তাহলে সেদিকে মনোযোগ দেয়া উচিত। অনেকের বাতের ব্যথা থাকতে পারে। কিন্তু আপনার যদি বাত না থাকে, অথচ হাঁটুসহ শরীরের বিভিন্ন অস্থিসন্ধিতে ব্যথা অনুভব করেন তবে দ্রুত ডাক্তার দেখানোই শ্রেয়।
লিউকোমিয়ার অনেক গুলো কারণ আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – ১. আগে কখনো কেমোথেরাপী নিয়ে থাকলে।
২. তেজস্ক্রিয়তা।
৩. জিনগত সমস্যা।
৪. ধূমপায়ী হলে।
৫. পরিবারে কারো আগে থেকে থাকলে (বংশগত)।
৬. বেনজিন জাতীয় রাসায়নিক তরলের সংস্পর্শে থাকলে।
তাই সবসময় উপরের ব্যাপারগুলো খেয়াল রাখবেন। যতটুকু সম্ভব ব্লাড ক্যান্সার (লিউকোমিয়া) হওয়ার কারণগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন। আর যদি ব্লাড ক্যান্সার (লিউকোমিয়া) হয়েই যায়, তাহলে দ্রুত অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করুন।