অনেকেরই দাঁত বিশেষ করে মাড়ি থেকে রক্ত ঝরে। মুখ দিয়ে কোনো কিছু চুষতে গেলে এমনকি ব্রাশ করার সময়ও রক্ত আসে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এ সমস্যাকে জিনজিভাইটিস বা মাড়ির প্রদাহ বলা হয়।
দাঁত থেকে রক্তপাত হওয়া খুবই স্বাভাবিক একটি রোগ। শুরুতেই ডেন্টিস্টের কাছে গেলে নিরাময় ও সহজে প্রতিকার পাওয়া সম্ভব। মূলত মাড়িতে কোনো সংক্রমণ থাকলে এমন হয়। আসলে দাঁতের কোথাও খাদ্যকণা জমা হলে, সেখানে ব্যাকটেরিয়ার জন্ম হয়। ব্যাকটেরিয়া থেকে এক ধরনের টক্সিক্রেটের ফলে রক্তপাত হয়।
আবার অনেকের শুরুতে দাঁতের ওপর একটি সাদা আস্তর জন্মে, যেটিকে ডেন্টাল প্লাগ বলা হয়। ধীরে ধীরে সেটি পাথর বা ক্যালকুলাসে পরিণত হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে চোখে দেখা যায় না, এমন পাথর জমে। এক পর্যায়ে তা বড় হয়ে দাঁতের রক্তপাতের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর এটি হয় নিয়মিত দাঁত ব্রাশ না করার কারণে।
ক্যালকুলাস দাঁত ও মাড়ির মাঝখানে অবস্থান করে এবং প্রতিনিয়ত নরম মাড়ির সাথে ক্যালকুলাসের ঘর্ষণের কারণে খুব সহজে মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে। এতে অনেক সময় মাড়ি ফুলে যন্ত্রণাও হয়।
জোরে জোরে দাঁত ব্রাশ করা, ঠিকমতো ফ্লসিং না করা, লিউকোমিয়া (এক ধরনের রক্তের ক্যানসার), রক্ত পাতলাকারী ওষুধ, গর্ভাবস্থায় হরমোনের প্রভাব, স্কার্ভি, ভিটামিন ‘সি’ ও ভিটামিন ‘কে’র ঘাটতির কারণেও রক্তপাত হতে পারে।
রক্তপাত বন্ধে করণীয়রক্ত পড়লে অবশ্যই একজন ডেন্টান সার্জনের শরণাপন্ন হতে হবে এবং দাঁতের স্কেলিং করাতে হবে। স্কেলিংয়ের পর সাধারণত আর রক্তপাত হবে না। ছয় মাস পর পর স্কেলিং করাতে হবে। স্কেলিং করলে দাঁতের মাড়ির ক্ষয় হয়, এমন ধারণা সঠিক নয়।
প্রতিদিন সকালে নাস্তার পরে ও রাতে ঘুমানোর আগে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। এতে দাঁত পরিষ্কার থাকবে এবং রোগ-জীবাণুর আক্রমণ কম হবে। ভালো মানের পেস্ট ও ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে। এক টুথপেস্ট দীর্ঘদিন ব্যবহার না করা ভালো।
প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। দিনে আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পানে দাঁত ছাড়াও শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রতঙ্গ ভালো থাকবে। দাঁতের সুস্থতায় সুষম খাবারের বিষয়েও মনোযোগী হতে হবে। আঁশজাতীয় খাবার ও সবুজ শাকসবজি দাঁতের জন্য ভালো। নিয়মিত ক্যালসিয়াম, ভিটামি ‘সি’ ও ‘ডি’ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
আমলকি, কমলালেবু, বাতাবিলেবু, লেবু, আমড়া ইত্যাদি ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ থাকে। দুই বেলা দাঁত পরিষ্কারের পাশাপাশি মাঝেমধ্যে মাউথওয়াশ দিয়ে কুলি করলে মুখে দুর্গন্ধ হবে।