বর্তমানে অ্যাসিডিটি-এর (Acidity) সমস্যা একটি সাধারণ সমস্যা। যাকে আমরা পেটে গ্যাসের সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করি। তাই ভোজনবিলাসীদের সুবিধার্থে আজ আমি অ্যাসিডিটি থেকে বাঁচার কয়েকটি উপায় বলে দেব যাতে করে যে কোন উৎসব বা প্রতিদিনের জীবনেও মজার খাবারগুলো শুধু চোখে নয়, চেখে দেখার সু্যোগ মেলে নিশ্চিন্তে। অ্যাসিডিটি-এর জন্য দামী দামী ওষুধ কেনার কোন দরকার নাই, দরকার কিছু সাধারণ উপাদান যা আমাদের রান্না ঘরেই পাওয়া যায়। চলুন এবার দেখে নেই উপাদানগুলো কী কী!
অ্যাসিডিটি দূরীকরণের উপাদান১) তুলসীহাজারো গুণে গুণান্বিত তুলসী পাতা। অ্যাসিডিটি দূর করতে ঘরোয়া পদ্ধতিগুলোর মধ্যে এটি খুবই অন্যতম ভূমিকা পালন করে। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ৫-৬ টি তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে দেখবেন অ্যাসিডিটি কমে গেছে। এমনকি তুলসী পাতা প্রতিদিন ব্লেন্ড করে পানি দিয়ে খেলে তার অ্যাসিডিটি হওয়ার প্রবণতা একেবারেই কমে যাবে।
২) জিরাগবেষকরা বলেন হজমে গণ্ডগোল হলে জিরা পানি বা জিরা চা খেয়ে দেখতে পারেন, উপকার পাবেন। জিরাতে যে তেল জাতীয় পদার্থ থাকে তা বদহজম ও পেট ফাপা ভাব দূর করতে সাহায্য করে।
৩) দারুচিনিহজম ক্রিয়ার জন্য খুবই ভাল, এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড (Natural Antacid) যা পেটের গ্যাস দূর করে। এক কাপ পানিতে আধা চা চামচ দারুচিনি গুঁড়া দিয়ে ফুটিয়ে নিয়ে দিনে ২/৩ বার এটা খেতে পারেন। চাইলে সুপ/সালাদে দিয়েও খেতে পারেন। এছাড়া অন্ত্রের কোন ইনফেকশন থেকে থাকলে তা ঠিক করতে এবং কিছুটা আরাম দিতে এর জুরি নেই।
৪) গুড়কখনো ভেবে দেখেছেন কি যে মুরুব্বিরা অনেক সময় খাবারের শেষে কেন একটু গুড় মুখে দেন? কারণ এতে আছে অনেক উচ্চ মাত্রার ম্যাগনেসিয়াম (Magnesium) যা পাকস্থলীর অতিরিক্ত অম্লভাব কমিয়ে পরিপাকে সাহায্য করে ও পেটকে ঠাণ্ডা রাখে।
৫) আদাআদা এমন একটি ভেষজ উপাদান যা আমাদের অনেক কাজে লাগে। প্রতিবার খাদ্য গ্রহণের আধা ঘণ্টা আগে ছোট এক টুকরো আদা খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা চলে যাবে। কিন্তু সবসময় হয়ত হাতের কাছে আদা নাও পেতে পারেন, সেক্ষেত্রে আগে থেকে আদা পাতলা করে কেটে রোদে শুকিয়ে নিতে পারেন। তারপর তা ছোট্ট বোতলে করে পকেটে বা ভ্যানিটি ব্যাগে করে সহজেই ক্যারি করতে পারবেন।
৬) ঠাণ্ডা দুধদুধও অ্যাসিডিটি কমাতে সাহায্য করে। কারণ দুধে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম (Calcium), যা পাকস্থলীর এসিড কমাতে সাহায্য করে। রাতে একগ্লাস দুধ ফ্রিজে রেখে দিয়ে পরদিন সকালে খালি পেটে খেলে সারাদিন অ্যাসিডিটি থেকে মুক্ত থাকা যায়। তবে কারও পেট দুধের প্রতি অতিসংবেদনশীল হলে তাদের দুধ না খাওয়াই ভালো।
৭) লং বা লবঙ্গহজমজনিত সমস্যা দূর করতে চিনা আয়ুর্বেদ-এ লবঙ্গ বহু বছর ধরেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। লবঙ্গ পেটে গ্যাস ফর্ম হতে বাধা দেয়। এটি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভালো কাজ দেয়। দুটি লবঙ্গ মুখে নিয়ে চাবালে এর রসটা আপনার অ্যাসিডিটি দূর করতে সাহায্য করবে।
৮) অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারএর ক্ষারধর্মী প্রভাব পাকস্থলীর অ্যাসিডিটি-এর সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। ১-২ চা চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার এক কাপ পানিতে মিশিয়ে খাবার আগে বা দিনে এক বা দুইবার খেতে পারেন।
৯) গরম পানি, লেবু ও লবণলেবুর কথা শুনে হয়ত অনেকে ভাবতে পারেন যে এটা আমি কী বলছি! একে তো অ্যাসিডিটি, তার উপর লেবু খাবেন? জ্বি হ্যা, অ্যাসিডিটি-এর সমস্যা হলে বা বুক জ্বলাপোড়া করলে এক কাপ গরম পানিতে এক থেকে দেড় চা চামুচ লেবুর রস আর খুবি সামান্য একটু লবণ দিয়ে মিশিয়ে খেয়ে দেখুন। অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই বুক জ্বালাপোড়া ভাব কমে যাবে। তবে মনে রাখবেন, ঠাণ্ডা পানি নয় অবশ্যই হালকা গরম পানি নেবেন।
এছাড়াও কিছু বদ অভ্যাস পরিবর্তন করে খুব সহজেই আমরা অ্যাসিডিটি থেকে দূরে থাকতে পারি। যেমন আমজনতার একটি বড় বদ অভ্যাস হল, খাওয়ার সময় তারা সামনে গ্যালন গ্যালন পানি নিয়ে বসেন। পানি ছাড়া অনেকেরই ভাত গলা দিয়ে নামতে চায় না। খাওয়ার সময় পানি খেলে যা হয় তার একটু সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেই-
১. খাবার গলা দিয়ে নামার জন্য প্রাকৃতিকভাবেই গলার ভেতর পিচ্ছিল মিউকাস বের হয়। পানি খেলে সেই মিউকাস পানির সাথে ধুয়ে উল্টো গিলতে অসুবিধা সৃষ্টি করে, তাই একবার পানি খাওয়া শুরু করা মানে খাবার গিলতে বারবার পানি খাওয়া।
২. খাবার খাওয়ার সময় হজমের জন্য যে এসিড তৈরি হয়, পানি খেলে পানি এসিডের সাথে মিশে তাকে পাতলা করে দিতে পারে, যার ফলে এসিডের কার্যকারিতা কমে খাদ্য পরিপাকে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
৩. কেমিস্ট্রি-তে ছোটবেলায় পড়েছিলাম, পানির মধ্যে এসিড ঢালা গেলেও, এসিডে পানি ঢালা বিপজ্জনক। তাই খাওয়ার মাঝে পানি খেলে সেই পানি এসিডের সাথে মিশে তৈরি করে প্রচুর তাপ ও গ্যাস, যার ফলে খাওয়ার পরে অনেকের পেট যায় ফুলে। শুরু হয় পেট-গলা-বুক জ্বালাপোড়া।
৪. প্রয়োজনে খাওয়ার কিছুক্ষণ আগে পানি খেয়ে নেন। আর খাওয়া শেষ করার ২০-৩০ মিনিট পর পানি খান। কিন্তু খাওয়ার মাঝখানে পানি খাবেন না। এই সামান্য একটি অভ্যাসের পরিবর্তন কমিয়ে দিতে পারে অনেক বড় একটি সমস্যা।
পরবর্তিতে যখনি আপনি অ্যাসিডিটি-এর সমস্যায় পড়বেন তখনই এই পদ্ধতিগুলোর সাহায্য নিয়ে দেখতে পারেন। কিন্তু যদি দেখেন ২/৩ দিন পরেও আপনার সমস্যা থেকেই যাচ্ছে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।