হিজামা বা কাপিং এমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি, যার মাধ্যমে শরীরের ত্বকের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত চোষণ বা শোষণের মাধ্যমে বের করা হয়৷ কাপিংয়ের বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে হিজামা বা wet cupping এবং ফায়ার কাপিং বহুল প্রচলিত৷
হিজামা ও এর ইতিহাসহিজামা পদ্ধতির প্রচলন কবে থেকে শুরু হয়েছে এ বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায় না৷ তবে ধারণা করা হয়, এখন থেকে প্রায় ৩০০০ বছর পূর্বে এটি চালু হয়৷ বর্তমানে আরব, আফ্রিকা, চীন ও কোরিয়ার কিছু অঞ্চলে হিজামা বেশ জনপ্রিয়৷
যেসব সমস্যায় হিজামাবর্তমানে যেসব শারীরিক সমস্যায় হিজামার মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয় বলে দাবি করা হচ্ছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: বাত ব্যথা, পা ফুলা, পিঠ ও কাঁধের ব্যথা, অর্ধ ও পূর্ণাঙ্গ শরীর অবশ, প্রসব পরবর্তী ব্যথা, মাইগ্রেন, পেটব্যথা, যৌন দুর্বলতা, কাশি, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, পাকস্থলি, কিডনি ও লিভারের বিভিন্ন সমস্যা, চর্মরোগ, নাক ও কানের প্রদাহ ও ছানিসহ চোখের বিভিন্ন সমস্যা ইত্যাদি৷
বৈজ্ঞানিক স্বীকৃতি নেইএসব রোগে হিজামার ব্যবহার বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়৷ এমনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিতও নয় হিজামা৷ বিভিন্ন সময় পরিচালিত গবেষণায় এর কার্যকারিতা বা উপযোগিতা প্রমাণিত নয় বলে দাবি করা হয়েছে৷
আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি হিজামার বিষয়ে বলেছে, ‘কাপিং থেরাপি যে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, তা এখন পর্যন্ত পাওয়া কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ সমর্থন করে না৷’
কাপিং নিয়ে গবেষণার পর ডা. ডেভিড গরস্কি বলেন, ‘এ পদ্ধতিতে কেবল স্বাস্থ্যঝুঁকিই রয়েছে, কোনো উপকারিতা নেই৷ আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রে এর কোনো স্থান নেই বা থাকা উচিতও নয়৷’
হিজামায় স্বাস্থ্যঝুঁকিবলা হয়ে থাকে যে, হিজামার মাধ্যমে দূষিত রক্ত দেহ থেকে বের করা হয়৷ ফলে আরোগ্য লাভ হয়৷ কিন্তু যেসব রোগে হিজামা করা হয়, তার কোনটাই রক্তের দূষণের ফলে হয় না৷ উপরন্তু দূষিত রক্ত বের করার যে কথা বলা হয় সেটিও সঠিক নয়৷ হিজামার দ্বারা দেহের ভালো রক্তই বের হয়ে আসে৷ দেখা যায় যে, কোনো ব্যক্তির দু’বার কাপিংয়ের ফলে যে পরিমাণ রক্ত দেহ থেকে বের হয় তা দিয়ে একজন অসুস্থ রোগীকে একবার রক্তদান করা সম্ভব৷
কাপিংয়ের ফলে ত্বকে দাগ পড়তে পারে, ফোস্কা পড়তে পারে, ত্বকে সংক্রমণ হতে পারে৷ এছাড়া রয়েছে হেপাটাইটিস বি, সি এবং এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকি৷ ২০১৬ সালে কম্বোডিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সতর্কতা জারি করে বলে, যাদের উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ আছে তাদের জন্য কাপিং খুবই বিপদজ্জনক৷
রাসুলের (স.) হিজামা গ্রহণ ও বর্তমান প্রেক্ষিতরাসুল (স.) নিজে হিজামা পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন এবং অন্যদের উৎসাহ প্রদান করেছেন—এমন কিছু হাদীস বুখারী, মুসলিম, তিরমীযি, আবু দাউদ ও নাসাঈতে পাওয়া যায়৷ আর এর ভিত্তিতে বর্তমানে কেউ কেউ হিজামা বা কাপিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন যে এটি সুন্নাহ ভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি৷
মূলত বিভিন্ন সূত্র মতে জানা যায়, রাসুলের (স.) যুগের প্রায় ১৫০০ বছর আগ থেকেই কাপিং বা হিজামার প্রচলন ছিল৷ সে সময় পেইন ম্যানেজমেন্ট ও আরও কিছু রোগের চিকিৎসার মধ্যে হিজামাই ছিল সবচেয়ে আরামদায়ক ও উৎকৃষ্ট পদ্ধতি৷ সেজন্য রাসুল (স.) এটি গ্রহণ করেছেন এবং অন্যদের তা গ্রহণে উৎসাহ দিয়েছেন৷ তবে এটি না ছিল রসুল (স.) বা সাহাবাদের কর্তৃক আবিষ্কৃত কোন পদ্ধতি, না এটি সুন্নাহর অন্তর্গত৷ বরং যুগের বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা গ্রহণ করাই হলো সুন্নত৷
সুতরাং অসুস্থতায় হিজামা গ্রহণ না করে, বরং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির অনুসরণই সুন্নত ও বিবেকবানের কাজ হবে৷
লেখক: ডা. মুহাম্মদ আনিসুর রহমান
চিকিৎসক ও প্রাবন্ধিক
source:
https://www.jugantor.com/doctor-available/245454/