Author Topic: জ্বর হলে করণীয় ও বর্জনীয়  (Read 2391 times)

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

Dr. Sushanta Kumar Ghose

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 363
  • Gender: Male
    • View Profile
জ্বর হলে করণীয় ও বর্জনীয়
« on: February 25, 2023, 09:32:48 AM »


আবহাওয়া পরিবর্তনের রেশ এখন প্রবল। সঙ্গে চলছে মৌসুমী সর্দি-কাশি, জ্বরও। আশপাশের অনেকেই হয়ত এই রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়েছেন, যা আপনারও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। হয়ত এরমধ্যেই আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন এবং বাড়াচ্ছেন অন্যান্যদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা।

রোগের তীব্রতা লাগামহীন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে প্রাথমিক দিনগুলোতে ঘরোয়া কিছু করণীয় ও বর্জণীয় বিষয় মেনে চললে ওষুধ ছাড়াই আরোগ্য লাভ হতে পারে।

করণীয়

প্রচুর তরল পান:
মৌসুমি রোগ নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে প্রথম উপদেশই পাবেন প্রচুর পানি ও অন্যান্য তরল পান করার। এর কারণ হল জ্বরের কারণে তাপমাত্রা বাড়লে শরীর দ্রুত পানিশূন্যতার দিকে যেতে থাকে। তাই পর্যাপ্ত পানির সরবরাহ এখানে অত্যন্ত জরুরি। কুসুম গরম পানি, ফলের শরবত, ডাবের পানি, চা- যে কোনো তরল খাবারেই বাধা নেই। সর্দি-জ্বর থাকলে প্রতিদিনের লক্ষ্য হবে আট থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করা। আর বেশি তরল পান করলে শরীর থেকে জীবাণু ও অন্যান্য বিষাক্ত উপাদান বেরিয়ে যাওয়া সহজ হয়।

বিশ্রাম:
অসুস্থ অবস্থায় যত বেশি সক্রিয় থাকবেন ততই আপনার শরীরের তাপমাত্রা বাড়বে। তাই বিশ্রামে থাকলে তাপমাত্রা কমবে এবং রোগমুক্তি হবে দ্রুত। মৌসুমি সর্দি-কাশি, জ্বর সারাতে ওষুধ সবসময় প্রয়োজন না হলেও জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তারও বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রাখা নিরাপদ। জ্বরের সঙ্গে শরীর ব্যথা, মাথা ব্যথা, ঘাড় শক্ত হয়ে থাকা, বমি ইত্যাদি উপসর্গ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।

গোসল:
কপাল এবং ঘাড়ের পেছনের অংশে জলপট্টি দেওয়া জ্বর কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। পুরোদস্তুর গোসলের পরিবর্তে কুসুম গরম পানিতে ভেজানো কাপড় দিয়ে শরীর মোছাও দ্রুত জ্বর কমাতে সাহায্য করে। চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া জ্বর নিয়ে ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করা যাবে না। অন্যথায় শরীরে কাঁপুনি দেখা দিতে পারে এবং জ্বর আরও বেড়ে যেতে পারে।

বর্জনীয়

শরীরে ‘অ্যালকোহল’ মালিশ:
জ্বর কমানো প্রাচীন এক পদ্ধতি এটি। যা মোটেই নিরাপদ নয়। এই পদ্ধতি জ্বর সারাতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অকার্যকর। বরং তা ডেকে আনতে পারে ‘অ্যালকোহল’জনীত বিষক্রিয়া।

বরফ গোসল:
বরফ শীতল পানি বা বরফ ভাসা পানিতে গোসল করা হয়ত শরীরের তাপমাত্রা কমাবে, তবে তা ডেকে আনবে কাঁপুনি। ফলাফল, জ্বর আরও বাড়বে। কক্ষ তাপামাত্রার পানিতে গোসল করাই যেখানে মানা, বরফ শীতল পানিতে গোসলের কথা সেখানে অবান্তর।

দ্বিগুন ওষুধ সেবন:
দ্রুত জ্বর থেকে মুক্তি পেতে চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধ দ্বিগুন পরিমাণে সেবন কিংবা একই সঙ্গে দুই ধরনের ওষুধ সেবন কোনো উপকারে আসবে না। বরং তা হতে পারে জ্বরের থেকেও বিপদজনক। বেশি ওষুধ খেলে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত কমে যাবে না। তবে এমনটা করলে শরীরের বিভিন্ন অভ্যন্তরীন অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে, বিশেষত, বৃক্কের।

শিশুদের ক্ষেত্রে যখন চিকিৎসক জরুরি

- শিশুর তিন মাস বয়সের মধ্যে জ্বর হলে তাপামাত্রা ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট হলেই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

- বয়স তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে হলে জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট পার করে গেলে এবং শিশু ঘুমকাতুরে কিংবা অত্যন্ত কান্নাকাটি করলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

- ছয় থেকে ২৪ মাস বয়সি শিশুর ক্ষেত্রে জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হলে এবং তা একদিনের বেশি স্থায়ী হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। জ্বরের সঙ্গে ডায়রিয়া, বমি এবং ত্বকের ‘র‌্যাশ’ হলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।




লেখক: সুশান্ত কুমার ঘোষ, ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ, ডিআইইউ মেডিকেল সেন্টার