Author Topic: আঙ্গুল ফোটালে শব্দ হয় কেন?  (Read 2133 times)

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

Dr. Sushanta Kumar Ghose

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 363
  • Gender: Male
    • View Profile


আঙ্গুল ফোটালে শব্দ হয় কেন?

আমরা অভ্যাসবশত বা অনভ্যাসগত আঙ্গুল মটকাই বা ফুটাই। কেউ আবার আঙ্গুল ফুটানো কে শিল্পের পর্যায়ে উন্নীত করেছেন,এরা কিছুক্ষণ পরপর আঙ্গুল ফুটিয়ে আশপাশের মানুষদের বিনোদিত করেন।ছোটদের বেলায় বাবার আঙ্গুল ফুটানোর পটাশ শব্দ কানে মধু বর্ষণ করে।আঙ্গুলের এত মটমটানির পরেও কিন্তু আঙ্গুল দিব্বি ঠিক আছে।

আঙ্গুল ফুটানোর পটপট শব্দ আসে কোথা থেকে কখনো ভেবেছেন কি?হ্যাঁ অনেকেই ভাবেন হাড়ের সাথে হাড়ের ঘর্ষণের ফলে এই শব্দ হয়।কিন্তু না! এটা ভ্রান্ত ধারণা। তাহলে আর দেরি নয়, আসুন পটাশ করে আরো একবার আঙ্গুল ফুটিয়ে ফট করে জেনে নেই বিজ্ঞানসম্মত সঠিক ও মজার তথ্য।

আঙ্গুল ফোটালে শব্দ হয় কেন?
আমাদের হাড্ডির জয়েন্ট গুলো গাড়ীর মবিলের মত পিচ্ছিল পদার্থ দিয়ে ভর্তি একারণে  কোন অঙ্গ নড়ানোর সময় আমরা কোন ব্যাথা ছাড়াই সহজতম উপায়ে কাজ সমাধা করি যেমন হাটু,কনুই,ঘাড় ভাজ করা কোনো কাজের সময় কোমর ভাজ করা ইত্যাদি। এই পিচ্ছিল তরল কে ডাক্তারি ভাষায় “সাইনোভিয়াল তরল ” বলে।



এই তরলে জলীয় পদার্থের সাথে বিভিন্ন ধরনের গ্যাসীয় পদার্থ দ্রবিভূত থাকে।আঙ্গুল ভাঁজ করার সময় হাড্ডির সংযোগ স্হলে ফাঁকা জায়গার আয়তন বেড়ে যায় ফলে পিচ্ছিল তরলের ঘনত্ব কমে যায় এবং তরলের গ্যাস বেলুনের মত ফুলে উঠে পটাশ শব্দে ফেটে যায়।এটাই আমরা আঙ্গুল ফুটানোর(angul fotano) শব্দ হিসেবে শুনতে পাই।

আবার সাইনোভিয়াল তরলে গ্যাসীয় পদার্থ  মিশে যেতে প্রায় ২৫-৩০ মিনিট সময় লাগে, তাই একবার আঙ্গুল ফোটানোর পর সাথে সাথে আবার আঙ্গুল ফোটানো যায় না।বর্তমান সময়ে   ডা. বেরেজিকলিয়ান(  রথম্যান ইনস্টিটিউটের হাড়ের ডাক্তার) বলেন যে আগের ধানণাটি ভুল।


তার মতে, আঙুল ভাজ করলে হাড়ের সংযোগ স্থলে কিছু ফাঁকা জায়গা তৈরি হয় এবং নিম্নচাপ সৃষ্টি হয় এর ফলে সেখানে সাইনোভিয়াল ফ্লুয়িড বা পিচ্ছিল তরল তীব্র গতিতে ঢুকে যায়। হঠাৎ করে এভাবে তরল ঢোকার ফলেই আঙ্গুল ফোটানোর শব্দ সৃষ্টি হয়।’ কিছু মানুষ অনবরত আঙুল ফোটাতে পারে। এদের আঙ্গুলের সংযোগ স্থলে হাড়ের সাথে হারের ঘর্ষণ হয় তাই এই মানুষদের বাবার আঙ্গুল না ফোটানোই ভালো।

আঙ্গুল একবার ফোটালে সাথে সাথেই আরও একবার ফোটাতে পারিনা কেন?
সাইনোভিয়াল তরলে গ্যাসীয় পদার্থ  মিশে যেতে প্রায় ২৫-৩০ মিনিট সময় লাগে, তাই একবার আঙ্গুল ফোটানোর পর সাথে সাথে আবার আঙ্গুল ফোটানো যায় না। কিছু মানুষ অনবরত আঙুল ফোটাতে পারে। এদের আঙ্গুলের সংযোগ স্থলে হাড়ের সাথে হারের ঘর্ষণ হয় তাই এই মানুষদের বাবার আঙ্গুল না ফোটানোই ভালো

আঙ্গুল ফোটানো ভালো না খারাপ?
চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ গবেষণা করে দেখেছেন যে, মাঝে মধ্যে আঙ্গুল ফোটালে হাড়ের ক্ষয়জনিত রোগ আর্থ্রাইটিস অথবা অস্টিওআর্থ্রাইটিস রোগ হওয়ার ঝুঁকি একটু কম থাকে। আঙ্গুল ফোটালে হাড়ের সংযোগ স্থলে সেরকম কোনো ক্ষতি হয় না। আঙ্গুল ফোটালে সত্যি কি হাড় ক্ষয় হয়? অনেক চিকিৎসা বিজ্ঞানী মত দিয়েছেন, না! কোন ক্ষতি হয় না।

আঙুল ভাঁজ করে বা টেনে টেনে ফোটানোর সাথে হাত-পায়ের হাড়ের ক্ষয় হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। গবেষকদের দাবি, ‘আঙ্গুল ফোটানোর এই ঘটনা প্রাচীন কাল থেকেই মানুষের মাঝে বিস্তৃত, এমনকি বর্তমানেও এটি একটি সাধারন ও বহুল প্রচলিত অভ্যাস।আঙ্গুল ফোটানো যদি ক্ষতিকরই হতো, তাহলে আঙ্গুল ফুটিয়ে অসুস্থ হয়েছে এমন রোগি হরহামেশাই হাসপাতালে ভর্তি হতো।কিন্তু এমন ঘটনা আজ পর্যন্ত একটিও পৃথিবীর কোথাও দেখা যায়নি।


লেখক: সুশান্ত কুমার ঘোষ, ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ, ডিআইইউ মেডিকেল সেন্টার