Author Topic: লেবুর উপকারিতা  (Read 2113 times)

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

Dr. Sushanta Kumar Ghose

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 363
  • Gender: Male
    • View Profile
লেবুর উপকারিতা
« on: February 09, 2023, 12:14:17 PM »


লেবু আমাদের দেশের অতি পরিচিত একটি ফল। বাঙালিদের দুপুর এবং রাতের খাবার সুস্বাদু করতে যে ফলটি পরিপূরক ভূমিকা পালন করে সেটি হলো লেবু। বাঙালিদের প্রধান খাবার ভাতের সাথে কয়েক ফোটা লেবুর রস স্বাদ বাড়ানোর কাজ করে জোরেসোরে। এটি অতি সাধারণ একটি ফল। কিন্তু এর উপকারিতা অসাধারণ।

লেবুর পুষ্টি উপাদান
পৃথিবীর সব লেবুই সাইট্রাস ফলের অন্তর্ভুক্ত। লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং সাইট্রিক এসিড।

এছাড়াও লেবুতে পলিফেনলস, টের্পেনস এবং ট্যানিন সহ অসংখ্য ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে। এতে রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, এন্টি-ভাইরাল গুনাগুন যা  বিভিন্ন রোগব্যাধি  প্রতিকার ও প্রতিরোধে ভালো ভূমিকা পালন করে। এবং এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এলিমেন্ট ওষুধি গুনাগুন বহন করে।

লেবুর উপকারিতা

১. উচ্চ রক্তচাপ কমায়
লেবুতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি আর পটাশিয়াম এবং লেবু সাইট্রাস পরিবারভুক্ত। এতে আরো কিছু প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে যা শরীরের উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে এবং লেবুতে বিদ্যমান পটাশিয়াম হৃদপিন্ডের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে।

২.মানসিক চাপ কমায়
লেবুর রসে ভিটামিন সি রয়েছে যা মানুষের মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা নিয়ন্ত্রনে সহায়তা করে। মানসিক বিষণ্নতায় শরীরবৃত্তীয় কারণে ভিটামিন সি এর ঘাটতি দেখা দেয় এবং  লেবুর রস সেটি পূরণ করে নিমিষেই। ফলে মানসিক চাপ অনেকটাই কমে যায়।

৩. ওজন কমাতে সাহায্য করে
ওজন কমাতে লেবুর উপকারিতা অপরিসীম আমরা কমবেশি সবাই জানি যে লেবুর রস ওজন কমাতে কতটা কার্যকরী। আমরা দৈনিন্দন জীবনে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করাজাতীয় খাবার প্রচুর পরিমাণে খাই। এবং এ তুলনায় দেখা যায় আমাদের পরিশ্রম এর পরিমাণ অনেক কম। যার ফলে শরীরে মেদ জমতে থাকে। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে লেবুর রস একটু কুসুম গরম পানিতে মধুর সাথে মিক্স করে খেলে পেটের চর্বি দূর হয়। এবং লেবুতে বিদ্যমান পেকটিন, খাদ্যআঁশ ক্ষুদা নিয়ন্ত্রণ এ ভূমিকা পালন করে থাকে, যার ফলে শরীরের ওজন দ্রুত গতিতে কমতে থাকে।

৪. কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমায়
রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে এই লেবু। এটি শরীরের উপকারী কোলেস্টেরল মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং ক্ষতিকর কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।

৫.রক্তশুন্যতা প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে
আমাদের দৈনন্দিন খাবারে খাবার লোহা বা আয়রন থাকে, যা শোষণের জন্য ভিটামিন সি এর প্রয়োজন হয় এবং খাবারের সঙ্গে লেবু সেবন করলে তা দ্রুত খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে এবং শরীরে রক্তশূন্যতা বা এনিমিয়া প্রতিরোধ করে থাকে।

৬. ক্যান্সার দূর করে
আমরা সবাই জানি ভিটামিন সি শরীরের নানা রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। এবং গবেষণায় দেখা গেছে লেবুতে থাকা ভিটামিন সি এবং পুষ্টি উপাদান সমূহ ক্যান্সারের ক্ষতিকারক কোষ ধ্বংস করে যা ক্যানসার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে।

৭.কালচে ভাব দূর করতে
অনেক সময় আমাদের ঘাড়, গলায় বা শরীরের নানা জায়গায় কালো দাগ পড়ে যায়। অনেক সময় শরীরে মরা চামড়া ও জমতে থাকে। সেসব জায়গায় লেবু দিয়ে ঘসে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সে স্থান ধুয়ে মধু মিশিয়ে কিছুক্ষণ রেখে পরিষ্কার পানি দিয়ে পুনরায়  ধুয়ে নিন। এই প্রক্রিয়ায় সপ্তাহে চার থেকে পাঁচ বার করলে  দারুণ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।

৮.পাকস্থলীকে সুস্থ রাখে
পেটের যেকোনো সমস্যা যেমন ডায়রিয়া, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য আমাদেরকে অনেক অসুস্থ করে ফেলে। শরীরের অস্বস্তি ভাব কমাতে একটি লেবু অল্প কিছু লবণ এর সাথে মিশিয়ে খেলে আরাম বোধ হতে পারে।

১১.ক্ষত সারাতে সহায়তা করে
লেবুর উচ্চ ভিটামিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে যা ভাইরাস জনিস ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে। সর্দি, কাশি, ঠান্ডা বা ভাইরাস জনিত ক্ষত সারাতে সহায়তা করে।

১২.গলার সংক্রমণ রোধ করে
লেবুর রসে আছে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী এক অনন্য বৈশিষ্ট্য, যার ফলে গলাব্যথা, মুখের ঘা আর টনসিলের সংক্রমণ রোধে সাহায্য করে লেবু।

১৩. মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সহায়তা করে
লেবুতে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী এলিমেন্টস থাকায় তা মাড়ির ব্যাথা, দাতের সমস্যা, মুখের দুর্গন্ধ অনেকটাই দূর করে।

১৪. সুস্থ দাতের জন্য লেবু
তাজা লেবুর রস দাতের ব্যাথা উপশমে,মাড়ি ব্যাথায়,মাড়ি ফোলার ব্যাথা থেকে শুরু করে মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করতেও সাহায্য করে। অনেকের দাত প্লাক জমার কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত দাগ পড়ে যায়। লেবুর রস সেই দাগ নিরসনে ও সহায়তা করে।

১৫. চুলে লেবুর ব্যবহার
অনেকের চুলে খুশকি হয়, স্কাল্পে ক্ষত হয়, স্কাল্পে রেগুলার লেবু দিয়ে মাসাজ করে তারপর শ্যাম্পু করলে খুশকি দূর হয়। এবং চুলে কোনো ক্ষত থাকলে তাও দূরীভূত হয়।চুলে কোনো ক্ষত বা ফাংগাল সম্পর্কিত সমস্যা হয়না।

১৬. ব্রন দূর করতে লেবু
সরাসরি লেবু মুখের ত্বকে ব্যবহার করা উচিত নয়। এটি অনেক ক্ষারীয় পদার্থ যার দরুন অনেকের কিছু বিশেষ সাইডএফেক্ট হতে পারে। কিন্তু ব্রণ দূর করতে এই লেবুর রস অনেক ভালো কাজ করে। লেবুর ১-২ ফোটা রসের সঙ্গে সামান্য মধু মিশিয়ে মুখে যেসব জায়গায় ব্রণ রয়েছে সেই জায়গাগুলোতে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন এবং প্যাকটি লাগানোর সময় ব্রনে আঙ্গুল দিয়ে ঘষবেন না বরং আলতো করে প্যাকটি সেই নির্দিষ্ট স্থানে লাগিয়ে দিবেন। ১৫ মিনিট পর পরিষ্কার পানি দিয়ে তা ধুয়ে নিন। এই প্যাক আপনার ত্বকে বিদ্যমান ব্রন কে ছোট করবে এবং ব্রণের দাগ হতে দিবেনা।

১৭. ঠোঁটের সৌন্দর্য বর্ধনে
আমাদের ত্বকের মতো ঠোঁটে ও ডেডসেল জমে।এই ডেডসেল রিমুভ এর জন্য লেবুর ছোট একটি টুকরো কেটে হালকা ভাবে ঠোঁটে ঠলে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এরপর ঠোটে ১০ মিনিট এর মতো মধুর লেপ লাগিয়ে রাখুন। এরকম সপ্তাহে ১-২দিন করে করুন। ঠোঁট গোলাপি রাখতে এই পদ্ধতি অনেক ভালো কার্যকরী হবে।

১৮. নখ সুন্দর রাখতে সহায়তা করে
এক টুকরো ছোট লেবুর টুকরো দিয়ে ঘসে নখে থাকা ময়লা এবং মরা চামড়া দূর করে নখ কে একদম পরিষ্কার এবং গোলাপি বর্নের করা সম্ভব।



লেখক: সুশান্ত কুমার ঘোষ, ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ, ডিআইইউ মেডিকেল সেন্টার