Author Topic: অ্যানেস্থেসিয়া সম্পর্কে যা জানা জরুরি  (Read 1441 times)

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

Dr. Sushanta Kumar Ghose

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 363
  • Gender: Male
    • View Profile
অ্যানাস্থেসিয়া অপারেশনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও খুব কম মানুষই আছেন যাদের চিকিৎসাবিজ্ঞানের এই অংশ নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা আছে। অপারেশনের আগে সার্জারির ব্যাপারে মোটামুটি একটা ধারণা থাকলেও অ্যানেস্থেসিয়া নিয়ে আমাদের খুব একটা জানা হয়ে উঠে না। এর কারণ দুটো হতে পারে। ১. রোগী বা রোগীর লোক রোগ ও রোগের অপারেশন নিয়ে বেশি চিন্তিত। ২. সার্জনরা সাধারণত অপারেশন নিয়েই বিশদ আলোচনা করেন। অ্যানেস্থেসিয়া নিয়ে বলার সুযোগ খুব একটা হয়ে উঠে না।

এই চিত্র যে শুধু বাংলাদেশে তা নয়, সারাবিশ্বের বড় একটা অংশের মানুষের অ্যানেস্থেসিয়া সম্পর্কে ধারণা নেই। ২০১৬ সালে এক জরিপে দেখা গেছে, ৭২ দশমিক ৬৩ শতাংশ রোগী অ্যানেস্থেসিয়ার ব্যাপারে অজ্ঞতা নিয়েই অপারেশন থিয়েটারে যায়। তাই আপনার অপারেশনের অ্যানেস্থেসিয়া সম্পর্কে জানুন।



অ্যানেস্থেসিয়া ও অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট

চিন্তা করে দেখুন, আপনার পেটের ভেতর অপারেশন চলছে কিন্তু আপনি ঘুমন্ত, কিছুই টের পাচ্ছেন না অথবা আপনি জেগে আছেন। শরীরের যে অংশে অপারেশনের আগেও ব্যথা ছিলো, এখন সার্জনের কাটাকাটির সময়েও আপনি ব্যথা অনুভব করছেন না। ঠিক এই কাজটাই সম্ভব করেছে চিকিৎসাবিজ্ঞানের অদ্ভুত এক আশীর্বাদ অ্যানেস্থেসিয়া। এই পুরো সময়টাতে যিনি আপনাকে দেখাশোনা করার দায়িত্বে থাকেন চিকিৎসাবিজ্ঞানে আমরা তাদের বলি অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট (অবেদনবিদ)। শুরু থেকে শেষ অব্দি আপনার নিরাপদ সার্জারি নিশ্চিত করাই একজন অ্যানেস্থেসিওলজিস্টের প্রধান দায়িত্ব। আপনি ঘুমিয়ে থাকলেও আপনার শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা, রক্ত চাপ, শরীরের সমস্ত জায়গায় রক্তপ্রবাহসহ অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ভারসাম্য রক্ষা নিশ্চিত করে থাকেন তিনি। সার্জনের আগে অ্যানেস্থেসিয়লজিস্টের কাজ শুরু হলেও শেষ হয় আপনার ঘুম ভাঙানোর মধ্য দিয়ে।

অ্যানেস্থেসিয়া সম্পর্কে জানুন

একটা সময় ছিলো যখন অ্যানেস্থেসিয়া ছাড়া অপারেশন হত। ভেবে দেখুন, কত কষ্টকর। অ্যানেস্থেসিয়ার ধারণা তৈরি হওয়ার পর ধীরে ধীরে তা চিকিৎসাবিদের আয়ত্তে আসলেও প্রথম দিকে এর পরিমাণ ও প্রয়োগ নির্ধারণ করা নিয়ে হিমশিম খেতে হত। ওষুধগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও ছিলো বেশ। আধুনিক যুগে এসে অ্যানেস্থেসিয়ার ধরন, ওষুধ ও পর্যবেক্ষণ করার যন্ত্রপাতি সবকিছু এত উন্নত হয়েছে যে-বয়স, রোগ, অপারেশন ভেদে ঝুঁকি থাকলেও তা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এই অবদান শুধু রোগীর জন্য আশীর্বাদ তা নয়, সার্জন ও অ্যানেস্থেসিয়লজিস্টকেও অনেকটা সাবলীল ও দুঃশ্চিন্তামুক্ত হয়ে কাজ করতে সাহস জুগিয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে যদি বলা হয়, একজন রোগীর এক হাতে অপারেশন হবে। তাকে পুরো অবশ না করে শুধু এক হাত অবশ করা সম্ভব। কিংবা গর্ভবতী মায়ের নরমাল ডেলিভারি ব্যথামুক্ত করার জন্য ‘এপিডুরাল এনালজেসিয়া’ (প্রসব ব্যথার অনুভূতি অনেকাংশে কমিয়ে আনার জন্য শরীরের নিচের অংশ আংশিকভাবে অবশ করা) এর ধারণা এখন প্রচলিত। অ্যানেস্থেসিওলজিস্টরা শুধু অপারেশনের সময় যে ব্যথামুক্ত রাখেন তা নয়। অপারেশন পরবর্তী দীর্ঘসময় ব্যথামুক্ত রাখা আধুনিক অ্যানেস্থেসিয়া একটি অংশ।

পেইন ক্লিনিক (দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা বিভিন্ন ইন্টারভেনশনের মাধ্যমে কমানোর জন্য অ্যানেস্থেসিয়ার একটি আধুনিক উপশাখা) অ্যানেস্থেসিয়ার একটি নতুন ও সফলতম ধারণা, যা বর্তমানে বিভিন্ন দেশে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। আমাদের দেশে এ সম্পর্কে জানার আগ্রহ বেশ লক্ষণীয়।

ধরুন আপনি ইউরোপে ভ্রমণ যাবেন। সাতদিনের প্যাকেজের বেশি আপনাকে আর কিছু জানানো হলো না। আপনি কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, কোথায় ঘোরাফেরা করবেন-আপনার মাঝে একটা অস্থিরতা কাজ করবে। কিন্তু আপনি যদি একটা পরিষ্কার ধারণা নিয়ে ভ্রমণ শুরু করেন তাহলে দুঃশ্চিন্তার বোঝাটা দেশে রেখেই যেতে পারবেন। তেমনি আপনার অ্যানেস্থেসিয়া হবে অথচ অপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার আগ পর্যন্ত জানেন না, আপনার সার্জারিতে কী ধরনের অ্যানেস্থেসিয়া হবে। ব্যাপারটা আপনার জন্য বাড়তি টেনশন ছাড়া আর কিছুই না।

কিছু কমন প্রশ্ন

কখন জ্ঞান ফিরবে? আদৌ জ্ঞান ফিরবে তো? এত ছোট বাচ্চা, কোন সমস্যা হবে না তো? এই প্রশ্নের উত্তর অনেকটা আপেক্ষিক। খুব ব্যতিক্রম না হলে রোগীর জ্ঞান না ফেরার কোন কারণ নেই। এখন প্রশ্ন হলো ব্যতিক্রমটা কি! বয়স্ক রোগী, জটিল রোগ, বড় সার্জারি, দুর্বল শারীরিক অবস্থা, হৃদরোগ, শ্বাসজনিত সমস্যা, কিডনি, লিভার, এমন বেশ কিছু কারণ আছে যার ফলে অ্যানেস্থেসিয়া ও সার্জারি দুটোই বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।

বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বলতে গেলে ভয়টা অমূলক। বর্তমানে বাচ্চাদের অ্যানেস্থেসিয়ার উপযুক্ত মেশিন, ওষুধ ও অ্যানেস্থেসিয়া ধরন এমন আধুনিকায়ন হয়েছে যে, অ্যানেস্থেসিয়া নিয়ে ঝুঁকিটা আগের তুলনায় বেশ হ্রাস পেয়েছে। যদিও একটা বিষয় সত্য যে, বাচ্চাদের অ্যানেস্থেসিয়ার ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ ও প্রতিক্রিয়া হতে হয় অত্যন্ত চৌকস। তবে তা অ্যানেস্থেসিয়লজিস্টের মাথাব্যথা, আপনার নয়।

শেষ কথা

নিরাপদ ও সফল অপারেশনের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হলো অ্যানেস্থেসিয়া। সার্জনের ছুরির নিচে আপনাকে যেতে হলে অ্যানেস্থেসিয়ার ধাপ পার করেই যেতে হবে। অমূলক ভয় না পেয়ে তাই অ্যানেস্থেসিয়া সম্বন্ধে জানুন, মতামত দিন এবং সচেতন হোন।

লেখক: ডা. আরিফুল হক
স্পেশালিস্ট, ডিপার্টমেন্ট অব অ্যানেস্থেসিয়া, স্কয়ার হাসপাতাল।

source: https://www.ittefaq.com.bd/