Daffodil Hospital & Research Center
Health Care => Health Awareness => Topic started by: Rasel Ali on June 10, 2021, 10:19:31 PM
-
অনেকেই জীবনে কোনো না কোনো সময় ঘাড়ের ব্যথায় ভোগেন। মূলত ভুল দেহভঙ্গিতে বসা বা শোয়ার কারণে ঘাড়ে ব্যথা হয়ে থাকে। করোনাকালে কম্পিউটার, মুঠোফোনসহ ডিজিটাল অনুষঙ্গের ব্যবহার বেড়েছে। সারা দিন এ ধরনের কাজ করার সময় ভুল দেহভঙ্গির কারণে বাড়ছে ঘাড়ব্যথার সমস্যাও।
এক জায়গায় বসে কত কাজই না করি আমরা। কেউ হয়তো ঘাড় ঝুঁকিয়ে দীর্ঘক্ষণ বই পড়ছেন, কেউ ঘাড় বাঁকিয়ে সেলাই করছেন, কেউ একটানা করছেন রান্নাঘরে কোটাবাছার কাজ। কারও হয়তো বাসা থেকে দূরের কর্মস্থলে রোজকার যাওয়া-আসায় যানবাহনের ঝাঁকি লাগছে। এগুলোর যেকোনোটাতেই হতে পারে ঘাড়ব্যথার শুরু।
বয়সজনিত বিষয় কিংবা অন্য কোনো কারণে হাড় ক্ষয় হলেও ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে, বাতব্যথাও একটা কারণ বটে। যক্ষ্মার জীবাণুর সংক্রমণ এবং অন্যান্য প্রদাহের কারণেও ঘাড়ে ব্যথা হয় কারও কারও। মাথাব্যথা এবং কাঁধ ব্যথাও কখনো ছড়িয়ে পড়তে পারে ঘাড় পর্যন্ত।
তবে যে কারণেই হোক, ঘাড়ব্যথা ভোগাতে পারে অনেক দিন।
(https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2021-06%2F688990c8-f271-4f8b-b66c-80c5923a71c6%2Fprothomalo_import_media_2019_04_17_e74656954c43e99c0252cfe13bfc2dcf_5cb6bf694fe82.jpg?auto=format%2Ccompress&format=webp&w=720&dpr=1.0)
লক্ষণ দেখে যায় চেনা
ঘাড়ে ব্যথা অনুভব হতে পারে অল্প অল্প, কিংবা হতে পারে তীব্র। পেশি খিঁচে ধরে থাকার কারণে ঘাড় নাড়াতে অসুবিধা হতে পারে। ঘাড়ব্যথার সঙ্গে হাত ঝিনঝিন করা কিংবা হাতের পেশির দুর্বলতা হতে পারে যদি স্নায়ুর সমস্যা থাকে। আবার ঘাড়ব্যথা ছাড়াও কেবল হাত ঝিনঝিন করা কিংবা হাতের পেশির দুর্বলতার রোগীদের মূল সমস্যা বা রোগটি থাকতে পারে ঘাড়েই। যক্ষ্মার জীবাণুর সংক্রমণ হলে জ্বর কিংবা ওজন কমে যাওয়ার সমস্যাও থাকতে পারে। লক্ষণ বিবেচনা করে ও দরকারি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কারণটি সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারলে চিকিৎসায় সুফল মিলবে।
ঘাড়ব্যথা এড়াতে
1. দাঁড়াতে হবে ঋজু ভঙ্গিতে। হাঁটার সময়ও সোজা থাকুন। কুঁজো হয়ে বা ঝুঁকে থাকবেন না।
2. লো হাইট বা নিচু আসবাব কিন্তু ঘাড়ের জন্য ভালো নয়। চেয়ারের পেছনটায় যেন বিশ্রাম পায় আপনার ঘাড়। রিভলভিং বা ঘূর্ণনশীল চেয়ার ব্যবহার না করাই ভালো। চেয়ারে বসে কাজ করার সময় কোমর আর চেয়ারের মাঝে যেন ফাঁক না থাকে। চেয়ার ও টেবিলের উচ্চতা হোক আপনার উপযোগী।
3. বসতে হবে নিয়ম মেনে, সোজা হয়ে। বসে যে কাজই করা হোক না কেন, ঘাড় ঝুঁকিয়ে বা বাঁকিয়ে রাখবেন না।
4. সুবিধাজনক উচ্চতায় রাখুন কাজের সরঞ্জাম (যেমন কম্পিউটার)। চোখের সমান উচ্চতায় রাখুন কম্পিউটার ও টেলিভিশনের মনিটর। ঘাড় গুঁজে কম্পিউটারে কাজ করা কিংবা ঘাড় উঁচু করে বা শুয়ে শুয়ে কাত হয়ে টেলিভিশন দেখা—দুটিই ঘাড়ের জন্য ক্ষতিকর।
5. শুয়ে কিংবা বাঁকা হয়ে বসে, বিছানায় বা মেঝেতে রেখে ল্যাপটপ কম্পিউটারে কাজ করা ঠিক নয়। ল্যাপটপ কম্পিউটারও টেবিলে রেখেই কাজ করার অভ্যাস করুন। কনুই দুটি থাক শরীরের কাছাকাছি, আরামদায়ক ভঙ্গিতে। কম্পিউটার রাখুন শরীর থেকে এক হাত দূরত্বের মাঝে। চেয়ারের উল্টো পাশেই। অর্থাৎ, টেবিলের এক কোণে কম্পিউটার, আর বারবার ঘাড় ফিরিয়ে তা দেখতে হচ্ছে—এমন যেন না হয়। কবজিও যাতে খুব একটা ভাঁজ করতে না হয়, তা নিশ্চিত করুন।
6. মুঠোফোন কিংবা হাতে নিয়ে দেখতে হয় এমন যন্ত্রে কাজ করার সময় ঘাড় নিচু করবেন না। বরং যন্ত্রটিকে রেখে নিন ঘাড়ের জন্য সুবিধাজনক কোনো জায়গায়। মুঠোফোনের জন্য স্ট্যান্ডও ব্যবহার করতে পারেন। অথবা ব্যবহার করুন ইয়ার প্লাগ, যাতে ফোন দীর্ঘ সময় কানে লাগিয়ে রাখতে না হয়।
7. বই পড়ার বেলায়ও তা–ই। পড়াশোনা তো করবেনই, কিন্তু তার জন্য ঘাড় নুইয়ে বসা যাবে না। ভারী ব্যাগ তুলে দেওয়া যাবে না শিক্ষার্থীর কাঁধে।
8.মেঝেতে নুয়ে পড়ে কোনো কাজ করার চেয়ে তা দাঁড়িয়ে করার ব্যবস্থা করতে চেষ্টা করুন। যেমন বঁটিতে সবজি না কেটে দাঁড়িয়ে বা চেয়ারে বসে টেবিলে চপিং বোর্ড রেখে তার ওপর সবজি কাটুন। ঘর ঝাড়ু দেওয়া বা ঘর মোছার মতো কাজ করুন দাঁড়িয়ে।
9.একই ভঙ্গিতে একনাগাড়ে অনেকক্ষণ বসে কাজ করা ঠিক নয়। মাঝেমধ্যে বিরতি দিন। এই বিরতিতে তো অবশ্যই ঘাড়ের পেশির ব্যায়াম করবেন, আবার সারা দিনের কোনো নির্দিষ্ট সময়েও ঘাড়ের ব্যায়াম করতে পারেন। ঘাড়ের ব্যায়ামের অর্থ হলো তা এমন ব্যায়াম, যাতে ঘাড়ের পেশিগুলো বিভিন্ন দিকে টান টানভাবে নাড়ানো (স্ট্রেচিং) হয়। নিয়মিতভাবে ঘাড়ের সব পেশির সঞ্চালন করাটাই এসব ব্যায়ামের মুখ্য বিষয়।
10.গাড়ি চালানোর সময় গাড়ির আসনের সঙ্গে ১৫ ডিগ্রি কোণ করে হেলে থাকুন। স্টিয়ারিংয়ের ওপর ঝুঁকে পড়বেন না।
11.ভারী কিছু তুলতে হলে শরীরের কাছ থেকে তুলুন, দূর থেকে নয়। অর্থাৎ, ভারী জিনিস তোলার সময় তা যেন আপনার শরীর থেকে দূরে না থাকে। বরং তোলার সময় তা থাকে শরীরের কাছাকাছি। ভারী জিনিস বহন করার সময় মেরুদণ্ড সোজা রাখুন।
12,যেকোনো ভঙ্গিতে শরীর ভাঁজ করতে হলে কখনোই খুব নুয়ে পড়বেন না।
13.শোয়ার জন্য নেবেন মাঝারি আকারের একটি বালিশ (উঁচুও নয়, নিচুও নয়)। বালিশে চাপ পড়লে যেন তা বেশি দেবে না যায়। তবে খুব শক্ত বালিশও ব্যবহার করা উচিত নয়। ঘাড়ের স্বাভাবিক বক্রতা যেন বজায় থাকে, এমন ভঙ্গিতে শোবেন। বালিশের একপাশে শুয়ে থাকার ফলে সেই দিক খানিকটা দেবে যেতে পারে, তখন অপর দিক ব্যবহার করা যায়। তবে দীর্ঘদিনের ব্যবহারে বালিশের দুদিকই দেবে গেলে তা বদলে ফেলতে হবে।
ঘাড়ে ব্যথা হলে
ব্যথা তীব্র হলে ব্যথানাশক সেবন করা যায়, তবে এসব ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ব্যথা কমানোর জন্য গরম সেঁক কার্যকর। হট ওয়াটার ব্যাগ বা হিটিং প্যাড ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ বেলা, প্রতিবেলা ৩০ মিনিট করে। তবে খুব বেশি উত্তাপে ত্বকের উপরিভাগ যেন পুড়ে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। যাতায়াতের সময় ঝাঁকুনি এড়াতে ঘাড়ে কলার পরে নিন। ঘাড়ের আকার অনুযায়ী কলার বেছে নিন।
এ ছাড়া একটি কার্যকর চিকিৎসা হলো ফিজিওথেরাপি। ঘাড়ে ও কাঁধ হাতে ব্যথার জন্য আছে নানা ধরনের ব্যায়াম। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়াম শিখে নিয়ে ব্যায়াম করুন। এর বাইরে শর্টওয়েভ ডায়াথার্মি, মাইক্রোওয়েভ ডায়াথার্মির মতো ফিজিওথেরাপি কাজে দেবে।
ক্ষেত্রবিশেষে অনেক সময় কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়ে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দৈনন্দিন কাজকর্মের ইতিহাস আর এক্স-রে ও সাধারণ কিছু রক্ত পরীক্ষা থেকেই মূল কারণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। অল্প কিছু ক্ষেত্রে এমআরআই এবং অন্যান্য পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে। তাই চিকিৎসকের কাছে যেতে দ্বিধা করবেন না। রোগ শনাক্ত হতে যত দেরি হবে তত জটিল হবে সমস্যা।
Source: প্রথম আলো