Daffodil Hospital & Research Center

Physiotherapy Treatment => Pain management and rehabilitation Physiotherapy => Topic started by: Dr. Sushanta Kumar Ghose on July 11, 2023, 11:13:10 AM

Title: হাড় ক্ষয়, হাড় ক্ষয়ের কারণ ও লক্ষণ
Post by: Dr. Sushanta Kumar Ghose on July 11, 2023, 11:13:10 AM
(https://www.probashirdiganta.com/uploads/img_mid/image_380x240_60b978dbe738f.jpg)

হাড় ক্ষয় বা অস্টিওপোরোসিস হলো হাড়ের ক্ষয় জনিত একটি রোগ। এটি এমন একটি রোগ যা শরীরের হাড়ের ঘনত্ব কমিয়ে দেয়। যার ফলে
হাড়ের ভিতরে অসংখ্য ছিদ্র হয়ে হাড় ঝাঁজঝাঁ রা বা ফুলকো হয়ে যায়। এতে হাড়ের ভিতরের অংশ দেখতে অনেকটা মৌমাছির মৌচাকের মতো মনে
হবে। হাড় ক্ষয় বা অস্টিওপোরোসিস রোগে আক্রান্ত হাড় এতটাই দুর্বলর্ব হয়ে যায় যে কখনো কখনো হাঁচিহাঁ বা কাশি দিলেও তা ভেঙে যেতে পারে।
মূলত হাড়ের শক্তি নির্ভরর্ভ করে এর আকার এবং ঘনত্বের ওপর। অনেক ক্ষেত্রেই এই ঘনত্ব আবার নির্ভরর্ভ করে হাড়ের ভেতরকার ক্যালসিয়াম,
ফসফেট এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থেরর্থে ওপর। এসবের পরিমাণ যখন কমতে থাকে, তখন হাড়ের ভেতরের শক্তিও কমে যেতে থাকে।

(https://www.probashirdiganta.com/uploads/img_default/image_1200x_60b993dd05138.jpg)

ঝুঁকি: অস্টিওপোরোসিসের জন্য সবচেয়ে বেশি যে সমস্যা দেখা দেয় তা হলো হাড় ভেঙে যাওয়া বা ফ্র্যাকচার। বেশি ওজন বহনকারি হাড়ের ওপরই এর প্রকোপ বেশি থাকে। এর মধ্যে আছে কোমরের হাড় ভেঙে যাওয়াসহ চাপের কারণে বা পড়ে যাওয়ার কারণে মেরুদণ্ডের হাড় বাঁকা বাঁ হয়ে যাওয়া বা ভেঙে যাওয়া। এসব সমস্যা থেকে আবার নানা ধরনের জটিলতার উদ্ভব হতে পারে।

হাড় ক্ষয়ের কারণ সমূহ

দেহে খনিজ লবণ বিশেষ করে ক্যালসিয়াম এর ঘাটতি সহ দৈনিক জীবনযাপনের কিছু অভ্যাসের কারণে ও এই রোগটি নিরবে বাসা বাঁধবাঁ তে পারে
আপনার দেহে। চলুন জেনে নেওয়া যাক হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়ার এমন কিছু কারণ:-

ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি:-
শরীরে ক্যালসিয়ামের কাজে সহায়তার জন্য ভিটামিন ডি প্রয়োজন। ক্যালসিয়ামের শোষণ ও ব্যবহার সফল করতে
ভিটামিন ডি লাগে। ক্যালসিয়াম ব্যতীত মজবুত হাড়ের কথা কল্পনাও করা যায় না, কারণ এটা হলো হাড় গঠনের অন্যতম প্রধান উপকরণ। যারা
বেশিরভাগ সময় রোদ বা সূর্যেরর্যে আলো এড়িয়ে চলেন তাদের শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব হয়। শরীর পর্যা প্তর্যা ভিটামিন ডি না পেলে ক্যালসিয়াম
থেকেও বঞ্চিত হয়, যার প্রভাব পড়ে হাড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অস্টিওপোরোসিস ফাউন্ডেশনের মতে, ৫০ এর কম বয়সি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের
প্রতিদিন ৪০০-৮০০ আইইউ ভিটামিন ডি প্রয়োজন। বয়স ৫০ পার হলে প্রয়োজন বেড়ে ৮০০-১,০০০ আইইউ হয়। কিছু সময় রোদে কাটিয়ে
শরীরকে ভিটামিন ডি তৈরির সুযোগ দিতে পারেন। ভিটামিন ডি সমৃদ্ধমৃ খাবারও খেতে পারেন। রোদে কাটানোর মতো সময় না থাকলে চিকিৎসকের
পরামর্শ মো র্শ তাবেক ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্টও সেবন করতে পারেন।

ধূমপান:-
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ধূমপানের সঙ্গে হাড়ের স্বাস্থ্যক্ষয় সংযুক্ত, কিন্তু তা কিভাবে হয় সেটি পরিষ্কার নয়। মনে করা হয় ধূমপান
করলে অস্টিওব্লাস্ট এর কার্যক্ষর্য মতা কমে যায়, এবং সেটি অস্টিওপোরোসিসের জন্য একটি ঝুঁকির কারণ। ধূমপানের কারণে এক্সোজেনাস
ইস্ট্রোজেন হরমোনের ভেঙ্গে যাওয়া বৃদ্ধিবৃ পায়,ওজন কমে যায় এবং সময়ের পুর্বে পির্বে রিয়ড হয়ে যায়, এই সব হাড়ের খনিজ ঘনত্ব কমার কারণ।

নিষ্ক্রিয় জীবনযাপন:-
নিষ্ক্রিয় জীবনযাপন, যেমন- দীর্ঘ সমর্ঘ য় ধরে বসে থাকা, প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ঘুমানোর কারণেও
অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। হাঁটা হাঁ চলা, ভারোত্তোলন ব্যায়াম ও টেনিসের মতো খেলা খেলে হাড়ের ওপর ভার প্রয়োগ করা যায়, যা
হাড় গঠনকারী কোষগুলোকে উদ্দীপ্ত করবে। আপনি হাড়কে যত বেশি ব্যবহার করবেন, তত বেশি খাপ খাওয়াতে পারবে ও মজবুত হবে। অন্যদিকে
হাড়কে ব্যবহার না করলে হাড়ের ক্ষয় হতে থাকে।’ তাই বয়স্ককালে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমাতে এখন থেকেই ভারোত্তোলন ব্যায়াম করতে
পারেন, অর্থা ৎর্থা এমন ব্যায়ামে অভ্যস্ত হোন যা হাড়ের ওপর ভার ফেলবে।

অ্যালকোহল বা মদ্যপান:-
অতিরিক্ত অ্যালকোহল পানে হাড় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অ্যালকোহল পান করলে জিআই ট্র্যাক্টের পক্ষে ক্যালসিয়াম
শোষণ করা কঠিন হয়ে যায়। এ ধরনের পানীয় প্যানক্রিয়াস ও লিভারকেও প্রভাবিত করে, যা ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি এর ওপর প্রভাব ফেলে।
অ্যালকোহল শরীরের বিভিন্ন হরমোনকেও প্রভাবিত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, করটিসলের মাত্রা বেড়ে গিয়ে হাড়ের খনিজ ঘনত্ব কমে যেতে
পারে। নারীরা অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করলে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে যায়। এটাও অস্টিওপোরোসিসের একটি কারণ।

কোমল পানীয়:-
 কিছু গবেষণায় দেখা গেছে সোডা বা কোমল পানীয় হাড়ের ঘনত্ব কমায় ভূমিকা রাখছে, কিন্তু এর কারণ এখনো স্পষ্ট নয়। টাফটস
ইউনিভার্সিটির্সি র গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন, যেসব নারী নিয়মিত সোডা বা কোমল পানীয় পান করেছেন তাদের নিতম্বে হাড়ের ঘনত্ব কম ছিল।
গবেষণাটি দ্য আমেরিকান জার্না লর্না অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনে প্রকাশিত হয়। এই গবেষণার গবেষকদের তত্ত্ব হলো, কোমল পানীয়ের ক্যাফেইন বা
ফসফরিক অ্যাসিড হাড় থেকে ক্যালসিয়াম টেনে নিতে পারে। কিন্তু ডা. লি বলেন যে ফসফরিক অ্যাসিডকে দায়ী করার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ নেই।
এছাড়া কোমল পানীয়ের প্রতি আসক্ত হলে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধমৃ তরল (যেমন- দুধ) পানের প্রবণতা কমে যায়। এটাও অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি
বাড়ায়।

অপুষ্টি:-
হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য পুষ্টি গুরুত্বপূর্ণ এর্ণ বং এর জটিল ভূমিকা আছে। খাদ্যে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক,
বোরন, আয়রন, ফ্লোরাইড, কপার, ভিটামিন এ, কে, ই, সি এবং এর ঘাটতির কারণে ও হাড় ক্ষয় বা অস্টিওপোরোসিস -এর ঝুঁকি বাড়তে পারে।
উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার:- যারা প্রচুর মাংস খান তাদের হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি
প্রোটিন খেলেও হাড় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। পালিও ডায়েট ও অ্যাটকিনস ডায়েটের মতো মাংস-ভিত্তিক খাদ্যাভ্যাস হাড়ের জন্য ক্ষতিকারক হতে
পারে। উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার খেলে কিডনিগুলো শরীর থেকে বেশি করে ক্যালসিয়াম বের করে দেয়। কিন্তু ক্যালসিয়াম হাড় গঠনের অন্যতম
প্রধান উপকরণ বলে এটি কমে গেলে হাড়ের খনিজ ঘনত্বও কমে যায়।

খাবারে অতিরিক্ত লবণ:-
খাবারে অতিরিক্ত লবণ ব্যবহার বা খাবারের সাথে অতিরিক্ত লবণ খাওয়াও ঝুঁকিপূর্ণ।র্ণউচ্চ লবণ গ্রহণে রক্তচাপ বৃদ্ধিবৃ পায়।
যেহেতু কিডনিগুলো শরীর থেকে লবণ বের করে দিতে কাজ করে, তাই রক্তপ্রবাহ থেকে ক্যালসিয়ামও দূরদূ হয়ে যায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে,
চল্লিশোর্ধ্ব যের্ধ্ব সব নারী উচ্চ পরিমাণে লবণ খেতেন তাদের মধ্যে ফ্র্যাকচারের হার লবণে অনাসক্ত নারীদের তুলনায় চারগুণ বেশি। তাই শেষ বয়সে
হাড়ের সমস্যায় জর্জরির্জ ত হতে না চাইলে কতটুকু লবণ খাচ্ছেন খেয়ালে রাখুন।

ভারী ধাতু:-
ভারী ধাতু যেমন, ক্যাডমিয়াম এবং সীসার সাথে হাড়ের অসুখের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। অল্প পরিমান ক্যাডমিয়ামের মুখোমুখি হলে
উভয় লিঙ্গের মধ্যেই হাড়ের খনিজ ঘনত্বের ক্ষয়বৃদ্ধিবৃ হতে দেখা যায়, যা থেকে বিশেষত বয়ষ্ক ও মহিলাদের মধ্যে ব্যথা এবং অস্থিভঙ্গের ঝুঁকি বেড়ে
যায়। অধিক পরিমান ক্যাডমিয়ামের সম্মুখী ম্মু ন হলে অস্টিওম্যালাশিয়া (হাড় নরম হয়ে যাওয়া) রোগ হয়।

এছাড়াও হাড় ক্ষয় রোগের আরো বেশ কিছু কারণ যেমন:-
বয়সের বৃদ্ধিবৃ (পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের মধ্যে) এবং মহিলাদের মেনোপজ বা অস্ত্রোপচার করে ডিম্বাশয় অপসারণের ফলে যৌন হরমোন
ইস্ট্রোজেন এর অভাব দেখা দেয় যার ফলে হাড়ের খনিজ ঘনত্ব দ্রুত হ্রাস পায়, আবার পুরুষদের মধ্যে, টেসটোটেরন হরমোনের মাত্রা কমে গেলেও,
কিছু প্রভাব পড়ে।
যাদের অস্থি ভঙ্গ বা অস্টিওপরোসিসের পারিবারিক ইতিহাস আছে তাদের ঝুঁকি অনেক বেশি; উত্তরাধিকার পাওয়া থেকে অস্থি ভঙ্গ বা কম হাড়ের
খনিজ ঘনত্ব অপেক্ষাকৃত বেশি দেখা যায়, যা ২৫% থেকে ৮০% হতে পারে। অন্তত ৩০ টি বংশগতির জিন অস্টিওপরোসিস হবার জন্য দায়ী।
যাদের ইতিমধ্যে একবার অস্থি ভঙ্গ হয়েছে তাদের আবার অস্থি ভঙ্গ হবার সম্ভাবনা, সমবয়সী এবং সমলিঙ্গের অন্য একজনের তুলনায় অন্তত
দ্বিগুণ।

হাড় ক্ষয়ের লক্ষণ সমূহ

একেবারে শুরুর দিকে হাড় ক্ষয় বা অস্টিওপোরোসিস রোগের লক্ষণ খুব একটা পরিলক্ষিত না হলেও ধীরে ধীরে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার কিছু
লক্ষণ ফুটে উঠে। চলুন জেনে নেওয়া যাক তেমন কিছু লক্ষণ:-
◼ কোমরের পেছনে ব্যথা, বিশেষকরে মেরুদন্ডে, নিতম্বে, পাঁজর পাঁ কিংবা কব্জিতে, যা কিনা ভাঙা বা জোড়া লাগা (স্পন্ডিলাইটিসের) মেরুদণ্ডের
ক্ষেত্রে আরো তীব্র হতে পারে।
◼ ধীরে ধীরে উচ্চতা কমতে থাকে।
◼ কুঁজো হয়ে যাওয়া।
◼ পিঠে তীব্র ব্যথা হতে পারে।
◼ মেরুদণ্ড হাতে কবজি, কোমরসহ অন্যান্য হাড়ে ফ্র্যাকচার ইত্যাদি।
◼ মাংসে ব্যথা।
◼ গিঁটেগিঁ (জোড়ায় জোড়ায়) ব্যথা।


হাড় ক্ষয় রোধে করণীয়
◼ নিয়মিত ব্যায়াম করা। নিয়মিত ব্যায়ামে হাড়ের শক্তি বাড়ে। এতে হাড়ের রক্ত চলাচল বৃদ্ধিবৃ করে জয়েন্টগুলো সচল রাখে। শরীরের ভারসাম্য ঠিক
রেখে হাড় ক্ষয় কমায়।
◼ পঞ্চাশোর্ধ পু র্ধ রুষ ও মহিলাদের দৈনিক ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা।
◼ ননী তোলা দুধ ও দুগ্ধযাত দ্রব্য গ্রহণ করা।
◼ কমলার রস, সবুজ শাকসবজি, সয়া দ্রব্য ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধমৃ খাবার খাওয়া।
◼ ডায়াবেটিস, লিভার, কিডনি রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা।
◼ ধূমপান, কোমল পানীয় এবং মদ্যপান ত্যাগ করা।
◼ অতিরিক্ত ওজন উত্তোলন বা বহন না করা।


অস্টিওপোরোসিসে আক্রান্তের ক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় ততই ভালো। রোগীর জন্য ঝুঁকিগুলো বিবেচনা করে যত দ্রুত
সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নির্শ তে হবে। বিশেষ করে মহিলারা পিরিয়ডের আগেই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ কর্শ রে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। হাড়ের
সামান্য ক্ষয়কে বলে অস্টিওপেনিয়া। এতে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই সময় থাকতে চিকিৎসকের পরামর্শ অর্শ নুযায়ী বোন ডেনসিটি
বা হাড়ের ঘনত্ব পরিমাপ করে নিতে পারেন। এ ছাড়া, এক্সরেসহ আধুনিক সিটি স্ক্যান (কম্পিউটারাইজড টোমোগ্রাফি) মাধ্যমে স্ক্যানিংয়ের সুযোগ
রয়েছে।