Daffodil Hospital & Research Center

Health Care => ENT => Topic started by: Dr. Sushanta Kumar Ghose on January 12, 2023, 09:37:37 AM

Title: নাকের পলিপ
Post by: Dr. Sushanta Kumar Ghose on January 12, 2023, 09:37:37 AM
(https://i0.wp.com/drmashiurent.com/wp-content/uploads/2021/07/nasal-polyps.jpg?w=1000&ssl=1)

“নাকের পলিপ” সাধারন মানুষের কাছে খুবই পরিচিত একটি সমস্যার নাম।নাকে পলিপ হওয়ার কথা আমরা সবাই কম-বেশি শুনেছি। রোগীরা পলিপ বলতে সাধারণত যা বুঝে থাকেন সেটি হলো নাকের মাংস বৃদ্ধি,যা মূলত নাকের টারবিনেট,যা হালকা গোলাপী বর্ণের হয়ে থাকে, মেডিকেলের ভাষায় আমরা সেটিকে পলিপ বলি না। মেডিকেলের ভাষায় একে হাইপারট্রফোয়েড ইনফেরিয়র টারবিনেট বলা হয়।
বিগত কয়েক দশক ধরে “নাকের পলিপ” সংক্রান্ত অনেক গবেষনা হচ্ছে।সঠিক চিকিৎসা দেওয়ার পরও এটি পুনরায় হওয়ার প্রবনতা থাকায় ,বিশেষজ্ঞদের কাছে নাকের পলিপ এখনও একটি চ্যালেঞ্জের বিষয়।

নাকের পলিপ কী?
চোখের ঠিক নিচে যে উঁচু হাড়টি আছে তার ভেতরে থাকে ম্যাক্সিলারি সাইনাস, নাক আর চোখের মাঝখানে যে ক্ষুদ্র স্থান সেখানে থাকে বেশ কয়েকটি ইথময়েড সাইনাস। কপালের সম্মুখভাগে থাকে ফ্রন্টাল সাইনাস। চোখের পেছন দিকে থাকে স্ফেনয়েডাল সাইনাস। এ সাইনাসগুলোতে দীর্ঘদিন প্রদাহের ফলে এদের আবরণী অনেক সময় ফুলতে ফুলতে আঙ্গুরের থোকার মতো আকার ধারণ করে। একেই আমরা ডাক্তারি পরিভাষায় নাকের পলিপ বলে থাকি। এটি ফ্যাকাশে সাদা বর্ণের হয়ে থাকে।

নাকে পলিপ হওয়ার কারণঃ
- যদিও নাকের পলিপ হওয়ার সঠিক কারন এখনও অস্পষ্ট। তবে সাধারণভাবে বলা যায় নাকের অ্যালার্জি এর অন্যতম কারণ। নাকে পলিপ আছে এমন ২৫.৬% রোগীর অ্যালার্জি জনিত সমস্যা আছে বলে পরিলক্ষিত হয়।

- নাকের ভেতরে ক্রনিক ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশনও এর কারণ হতে পারে। নাকের ভেতরে ফাংগাল ইনফেকশনের কিছু কিছু রোগীর উভয় নাকে এবং অনেক সাইনাসজুড়ে পলিপ তৈরি হয়।

- নাকের এলার্জি আছে এমন রোগীদের মধ্যে শতকরা ১৭ থেকে ১৯ ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে হাঁপানিও আছে। যাদের হাঁপানি আছে তাদের শতকরা ৩০ থেকে ৭১ ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে নাকের পলিপ হতে পারে।

- এছাড়াও খুব কম রোগীর ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু রোগ যেমন- অ্যাসপিরিনের কারণে শ্বাসতন্ত্রের রোগ, সিস্টিক ফাইব্রোসিস,আরোও কিছু জীনগত রোগের কারণে নাকের পলিপ হয়ে থাকে।

নাকের পলিপের প্রকারভেদঃ
নাকের পলিপ দুই ধরণের হয়ে থাকে। যেমন:

ইথময়ডাল পলিপ: এলার্জির কারণে হয়, দুই নাকে হয় এবং অনেকগুলি পলিপ একসাথে হয়ে আঙ্গুরের থোকার মত দেখতে হয়,ধীরে ধীরে বড় হয়ে নাকের সামনের দিকে আসতে থাকে, মধ্যম বয়সে দেখা যায়।

এন্ট্রোকোয়ানাল পলিপ: ইনফেকশনের কারণে হয়, এক নাকে হয় এবং একটি বড় আকৃতির পলিপ হতে পারে,যা নাকের পিছনের দিকে বাড়তে থাকে। শিশু বা কিশোর বয়সে দেখা যায়।

উপসর্গঃ
- প্রাথমিক পর্যায়ে রোগীরা সাধারণত নাক দিয়ে সর্দি ঝরা, নাক বন্ধ ভাব এ ধরনের সমস্যায় ভোগেন।নাক বন্ধ হয়ে থাকার সমস্যা কয়েক মাস থেকে বছর পর্যন্ত থাকতে পারে।

- নাকের সর্দি সামনের দিকে আসতে পারে। অনেক সময় এটা সামনের দিকে না এসে পেছন দিকে চলে যায় এবং ঢোক গিলা বা গলা পরিষ্কার করার মতো প্রবণতা দেখা যায়। নাক বন্ধ থাকাটা প্রাথমিক পর্যায়ে একদিকে থাকে এবং সময় যত বাড়তে থাকে ততই দেখা যায় ধীরে ধীরে দুটো নাকই বন্ধ হয়ে যায়, প্রথমে আংশিকভাবে এবং পরে সম্পূর্ণভাবে।

- হাঁচি থাকতে পারে এবং অল্প ধুলাবালি বা ধোঁয়াতে গেলেই প্রচণ্ড হাঁচি হতে থাকে। সিগারেটের বা রান্নার ধোঁয়া সহ্য হয় না। দম বন্ধ ভাব চলে আসে।

- দেখা যায় কিছু কিছু রোগীর গলায় খুসখুস ভাব থাকে। অনেকের আবার কাশিও থাকতে পারে। গলায় নিয়মিত প্রদাহ বা মুখ দিয়ে নিয়মিত শ্বাস নেয়ার ফলে অনেক সময় গলার স্বর বসে যায় বা স্বরভঙ্গ থাকতে পারে।

- বড় আকৃতির পলিপ সম্পূর্ণ নাকের ভিতরের অংশ বন্ধ করে রাখলে মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়া,ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া এই সমস্যাগুলি নিয়ে রোগী আসতে পারে।

- নাকের পেছনে ইউস্টেশিয়ান টিউব আক্রান্ত হওয়ার কারণে অনেক সময় মধ্য কর্ণে সমস্যা হয়ে থাকে। কান বন্ধ বন্ধ ভাব বা কানের ভেতরে অনেক দিন পানি জমে থাকলে কানের পর্দা নষ্ট হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে দীর্ঘমেয়াদে কান পাকা রোগের সৃষ্টি হতে পারে।

- মাথাব্যথা সাধারণত প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে।এছাড়াও নাকের ঘ্রাণশক্তি কমে যায় এবং অনেক সময় নাকে দুর্গন্ধ পাওয়া যায়।

নাকের পলিপ শনাক্তকরণঃ
নাকের পলিপ সাধারনত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা রাইনোস্কোপি পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করে থাকেন।
এছাড়াও এক্স-রে এবং সিটি-স্ক্যান পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে নাকের পলিপ শনাক্ত করা যায়।

চিকিৎসাঃ
- অ্যালার্জি থেকে দূরে থাকলে এই রোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব। বিনা অস্ত্রোপচারে পলিপের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সম্ভব নয় তবে অ্যান্টিহিস্টামিন-জাতীয় ওষুধের মাধ্যমে অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণের ফলে পলিপের ফোলা ভাব কিছুটা কমে আসতে পারে।

- এছাড়াও পলিপের চিকিৎসায় প্রাথমিক অবস্থায় নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্টেরয়েড জাতীয় স্প্রে নাকে ব্যবহার করা হয়, এতেও পলিপের আকার ছোট হয়ে আসতে পারে। আধুনিক পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচারে নিরাময়ের হার বেশ ভালো।

- অপারেশনের মাধ্যমে পলিপের চিকিৎসা সর্বোত্তম পন্থা।অপারেশন করলে সাধারণত নাকের পলিপ ভালো হয়ে যায়। পূর্বের সবচেয়ে প্রচলিত অপারেশনের নাম পলিপেকটমি। আধুনিক অপারেশনের নাম হলো,”ফাংশনাল এন্ডোস্কোপিক সাইনাস সার্জারী বা FESS”।

-  তবে এই পলিপ বার বার হতে পারে এবং প্রয়োজনবোধে কয়েকবার অপারেশন করা লাগতে পারে।

নাকের অ্যালার্জিজনিত সমস্যায় ভুগছে এমন রোগীদের জন্য উপদেশঃ
১) তোশক এবং বালিশে প্লাস্টিক কভার বা অ্যালার্জেন মুক্ত উপাদান ব্যাবহার করবেন।
(২) গরম পানিতে কাপড় চোপড় ধৌত করুন (৫৫ সে.)।
(৩) ধুলা বালি পরিহার করুন ।
(৪) শরীরে ধুলাবালি / ঘাম যেন না হয় সেদিকে খেয়াল করবেন।
(৫) রাস্তাপথে ধুলাবালির পরিবেশে মাস্ক ব্যবহার করবেন ।
(৬) মোটর সাইকেল চালকগন হেলমেটের গ্লাস নামিয়ে দিবেন এবং ভেতরে মাস্ক ব্যবহার করবেন ।
(৭) সম্ভব হলে লেদার / প্লাস্টিক অথবা ভিলাইল ফার্নিচার ব্যবহার করুন ।
(৮) কার্পেট ব্যবহার নিষেধ । ইহার পরিবর্তে প্লাস্টিক ম্যাট ব্যবহার করুন ।
(৯) দরজা ও জানালার পর্দা ২ সপ্তাহ পরপর পরিষ্কার করুন ।
(১০) পুরাতন বই পুস্তক, বাক্সবন্দি কাপড় চোপড় , লেপ তোশক সরাসরি ধরা ও ব্যবহার নিষেধ ।
(১১) এসির এয়ার ফ্লিটার প্রতি মাসে পরিষ্কার করুন / পরিবর্তন করুন ।
(১২) পোষা প্রাণী ঘরে রাখা নিষেধ। যেমনঃ বিড়াল ইত্যাদি ।
(১৩) পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় ব্যবহার করুন, সুতি কাপড় ব্যাবহার উত্তম।
(১৪)গোসল করার পর ভেজা চুলে কাজ করবেন না।
(১৫)প্রধান ইনডোর অ্যালার্জেনঃহাউজ ডাস্ট,মাইট এড়িয়ে চলবেন।

উপসংহার
নাকের পলিপ নিয়ে সাধারন মানুষের মধ্যে ভ্রান্ত ধারনা বেশী থাকার কারণেই সচেতনতার অভাবে অনের সময় মানুষ এই রোগের সুচিকিৎসা নেয়না।অথচ সঠিক চিকিৎসা নিলে আধুনিক উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে নাকের পলিপ অনেকাংশেই নিরাময় সম্ভব।তাই এই সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধি এই রোগের চিকিৎসায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

লেখক:
ডাঃ মশিউর রহমান
নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ
খিদমাহ হাসপাতাল, ঢাকা।