Daffodil Hospital & Research Center

Physiotherapy Treatment => General Physiotherapy => Topic started by: Dr. Sushanta Kumar Ghose on January 09, 2023, 02:43:46 PM

Title: শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি থাকলে কী করে বুঝবেন?
Post by: Dr. Sushanta Kumar Ghose on January 09, 2023, 02:43:46 PM
(https://www.shajgoj.com/wp-content/uploads/2021/09/vitamin-D-33-700x431.jpg)

ভিটামিন ডি’ করোনাকালে বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে লোকমুখে, বিশেষত এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী গুণটির জন্য। যদিও এই ‘সান শাইন ভিটামিন’ এর রয়েছে আরো নানাবিধ উপকারিতা। ভিটামিন ডি মূলত চর্বিতে দ্রবণীয় একটি ভিটামিন, এর সক্রিয় রূপটি ক্যালসিট্রায়োল নামে পরিচিত যেটা কাজের ধরন বিবেচনায় হরমোন বলেও স্বীকৃত। শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি থাকলে কীভাবে বুঝবেন সেটা জানেন কি? আজকে আমরা জেনে নিবো কোন কোন সাইন দেখে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার শরীরে ভিটামিন ডি প্রয়োজনের তুলনায় কম পরিমাণে আছে। আরও জানবো কোন কোন প্রাণিজ উৎস থেকে আপনি ভিটামিন ডি-এর চাহিদা পূরণ করতে পারবেন। তাহলে দেরি না করে শুরু করা যাক।

কী কাজ করে ভিটামিন ডি?
আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি-এর স্বাভাবিক মাত্রা ৩০-১০০ ন্যানো গ্রাম/মিলি লিটার। এর কম বিশেষ করে ২০ ন্যানো গ্রাম/মিলি লিটার এর কম হলেই নানাবিধ উপসর্গ দেখা দেয়। শরীরে কী কাজ করে ভিটামিন ডি বা এটার গুরুত্ব কতটুকু সেটা এখন জেনে নিন।

- অন্ত্রে ক্যালসিয়াম ও ফসফেট শোষণে সাহায্য করে এবং রক্তে এগুলোর স্বাভাবিক মাত্রা বজায় রাখে
- মজবুত হাড় ও দাঁত গঠনে ভূমিকা রাখে
- হাড়ের ক্ষয়রোধ করে
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও এর পরোক্ষ ভূমিকা আছে
- ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
- ভিটামিন ডি মেটাবোলিজম যেভাবে কাজ করে তার ফ্লো চার্ট

মুড সুইং ও ওজন বাড়ার সাথে ভিটামিন ডি-এর যোগসূত্র
ভিটামিন ডি-এর সাথে চমৎকার একটা সম্পর্ক আছে সেরোটোনিন নামক নিউরোট্রান্সমিটার এর। এই নিউরোট্রান্সমিটার মুড রেগুলেশনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেরোটোনিন আমাদের মাঝে ইউফোরিয়া বা ভালো লাগার অনুভূতি তৈরি করে। শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পরোক্ষভাবে সেরোটোনিন লেভেলও কমিয়ে দেয়, শুরু হয় মুড সুইং, ঘুমে ব্যাঘাত এবং দুশ্চিন্তা। এই সুযোগে বডি স্ট্রেস হরমোন নামে পরিচিত কর্টিসল নামক হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয় ,যার প্রভাবে বেড়ে যায় ওজন আর কমে যায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তাই যখন অনেক চেষ্টা করেও কমছে না বাড়তি ওজন; উপরন্তু বেড়েই চলেছে, তখন নিজের মানসিক প্রশান্তি নিশ্চিত করুন আর হ্যাঁ অবশ্যই ভিটামিন ডি-এর কথা মাথায় রাখুন।

অভাবজনিত রোগ
ভিটামিন ডি-এর অভাবে বাচ্চাদের রিকেটস ও বড়দের অস্টিওম্যালাশিয়া নামক রোগ হতে পারে।

কীভাবে বুঝবো শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি রয়েছে?
শিশুদের ক্ষেত্রে
- পায়ের হাড় বেঁকে যাওয়া
- দেরিতে হাঁটতে শেখা
- দুর্বল দাঁত গঠন
- থলথলে মাংসপেশি ও পর্যাপ্ত টোনের অভাব
- ঘনঘন শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ
- ডায়রিয়া ইত্যাদি

প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে
যেহেতু ভিটামিন ডি-এর অভাবে রক্তে ক্যালসিয়াম ও ফসফেটের পরিমাণ কমে যায়, তাই রক্তে এর স্বাভাবিক মাত্রা বজায় রাখতে গিয়ে আমাদের শরীর বাধ্য হয় হাড় থেকে এই খনিজগুলো শোষণ করে রক্তে নিয়ে আসতে থাকে। যার ফলে হাড়ের গঠন নাজুক হয়ে যায়।

(https://www.shajgoj.com/wp-content/uploads/2021/09/backpain.jpg)

সেই সাথে দেখা দেয়-

- হাড় কিংবা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা
- অস্থিসমূহ নাজুক বা ভঙ্গুর হবার কারণে সামান্য আঘাতেই হাড় ভেঙ্গে যাওয়া
- চুল পড়া
- স্থুলতা
- বুক ধড়ফড় করা, বিষণ্ণতা, নিদ্রাহীনতা
- এছাড়াও ক্যালসিয়ামের অভাবে টিটানি (মাংসপেশীতে যন্ত্রণাদায়ক খিঁচুনি, হাত ও মুখ বেঁকে যাওয়া) হতে পারে

কেন হয় শরীরে ভিটামিন-ডি এর অভাব?
এমন প্রশ্ন করলে উত্তরে আমি বলবো আপনার হয়তো পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসা হচ্ছে না, হয়তো সূর্যালোকে যাচ্ছেন ঠিকই কিন্তু পুরো শরীর এমনভাবে ঢাকা থাকছে যে সূর্যের আলো আপনার চামড়ার সংস্পর্শে আসতে ব্যর্থ হচ্ছে! নতুবা আপনার খাদ্য তালিকায় ভিটামিন ডি যুক্ত খাবারের অভাব রয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ, হাইপোপ্যারাথাইরয়েডিসম, লিভারের রোগসহ আরো কিছু অসুখে শরীরে ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমে যেতে পারে।

ভিটামিন ডি-এর উৎস
প্রকৃতিতে ভিটামিন ডি-২ / আরগোক্যালসিফেরোল এবং ভিটামিন ডি-৩ / কোলেক্যালসিফেরোল এই দুটো রূপে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।

১) আরগোক্যালসিফেরোল আসে উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে, তবে এটি অন্ত্রে ভালো শোষিত না হওয়ায় আমাদের জন্য খুব একটা গুরুত্ব বহন করে না।

২) কোলেক্যালসিফেরোল নামক ধরনটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি আবার পেতে পারি দুটো উপায়ে। যেমনঃ সূর্য রশ্মি আমাদের চামড়ায় এসে পড়লে ইউভি-বি (UV-B) এর সহায়তায় বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া শেষে তৈরি হয় অ্যাকটিভ ভিটামিন ডি বা ক্যালসিট্রায়োল। এছাড়া প্রাণিজ উৎস থেকেও সরাসরি গ্রহণ করতে পারি।

প্রাণিজ উৎসগুলো কী কী?
সামুদ্রিক তেলযুক্ত মাছ, যেমনঃ কড মাছের তেলে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ডি রয়েছে
দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার (ঘি, মাখন, পনির ইত্যাদি)
লাল মাংস
কলিজা
ডিম
মাশরুম

(https://www.shajgoj.com/wp-content/uploads/2021/09/food-item.jpg)

এই খাবারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে। এছাড়াও বাজারে এখন ভিটামিন ডি ফর্টিফাইড সয়াবিন তেল, সিরিয়াল/গ্রেইন ইত্যাদি খাদ্যসামগ্রী পাওয়া যায়। খাবারের মাধ্যমে কিংবা সূর্যরশ্মি থেকে যেভাবেই গ্রহণ করি না কেন লিভার ও কিডনিতে দুটো অত্যাবশ্যকীয় ধাপ পেরিয়ে তবেই তৈরি হয় অ্যাকটিভ ভিটামিন ডি, যা পরবর্তীতে রক্তে ক্যালসিয়াম ও ফসফেটের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে।



লেখক: সুশান্ত কুমার ঘোষ, ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ, ডিআইইউ মেডিকেল সেন্টার